ঐতিহাসিক মুজিবনগরে ভারত-বাংলাদেশের নতুন দরজা!

| আপডেট :  ২৭ মে ২০২২, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ মে ২০২২, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ছিলো বাঙালী জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এইদিনেই শপথ নিয়েছিলো অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো এই সরকার।

সেইদিনের স্মৃতিচারণ করে এক সাংবাদিক বলেন, ‘সেই উত্তাল একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের তরফে কলকাতার কিছু সাংবাদিককে বলে রাখা হয়েছিল, ১৭ এপ্রিল ভোরে প্রেস ক্লাবে উপস্থিত থাকতে। ভারতের কৃষ্ণনগর, চাপড়া, হৃদয়পুর হয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্ত পেরিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ড আমবাগান ঘেরা বৈদ্যনাথ তলায়। সেখানে তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার)। সাংবাদিক বৈঠকও হয়। এর পরে ওই পথেই কলকাতায় ফিরে আসেন সাংবাদিকরা।’

এরপরেই সেই স্মৃতি বিজড়িত সীমান্ত এলাকা বৈদ্যনাথ তলার নাম দেওয়া হয় মুজিবনগর। আর এবার এই সীমান্তবর্তী এলাকাকে স্মরণীয় করে রাখতে সেখানে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের নতুন দরজা (দু’দেশের এন্ট্রি-এগজ়িট পয়েন্ট) তৈরির জন্য উদ্যোগী হল দিল্লি ও ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গত বছরের ঢাকা সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে স্থির হয়েছিল, চাপড়া থেকে হৃদয়পুর হয়ে মুজিবনগর পর্যন্ত ওই ঐতিহাসিক রাস্তাটির নামকরণ করা হবে ‘স্বাধীনতা সড়ক’।

তবে, নামে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ হলেও সেখানে ভিসা ইমিগ্রেশনের বন্দোবস্ত না-থাকায় মানুষের যাতায়াত ছিল না। এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য ভারত সফরে যাতে স্বাধীনতা সড়ক বরাবর নতুন ইমিগ্রেশন পয়েন্ট ঘোষণা করা যায়, সে জন্য উঠে পড়ে লেগেছে দুই সরকার। বিষয় হল, সেখানে এগজ়িট এবং এন্ট্রির জন্য ছশো মিটার রাস্তা পাকা করতে হবে এবং সেটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হতে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে বলেছে। সেখানে ভিসা ইমিগ্রেশন পয়েন্ট খোলা হলে দুদেশেরই দু’প্রান্তেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান সম্প্রতি নদিয়ার হৃদয়পুর সীমান্ত ঘুরে দেখে এসেছেন। ইতিমধ্যেই সেখানে ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের পোস্ট রয়েছে। বাংলাদেশের দিকে কাস্টমস আর ভিসা ইমিগ্রশন পয়েন্ট তৈরির জন্য পরিকাঠামো গড়ার কাজ প্রায় শেষ। ভারতের দিকে পরিকাঠামো যাতে হয়, সে ব্যাপারে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। এর পর রাস্তা পাকা করার কাজ বাকি থাকবে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘মুজিবনগর থেকে নদিয়া পর্যন্ত ঐতিহাসিক রাস্তাকে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ নাম দিতে ঢাকার প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।’ ইমরান জানিয়েছেন, সেখানকার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে নতুন চেক পোস্ট-এর বিষয়ে সবাই আগ্রহী।