বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ধৈর্যশীল, স্বার্থপরও বেশি

| আপডেট :  ১৯ মে ২০২২, ০১:০৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ মে ২০২২, ০১:০৩ অপরাহ্ণ

পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ধৈর্যশীল। কিন্তু নারীরা পুরুষের চেয়ে গড়ে বেশি স্বার্থপর। বিপরীতে পুরুষরা নারীদের তুলনায় একটু বেশি পরোপকারী ও বেশি সমতাবাদী। গবেষণায় দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রীর পছন্দগুলো বেশির ভাগ সময় ইতিবাচকভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জ্ঞানভিত্তিক সক্ষমতা ও ব্যক্তিত্বের মতো বিষয়গুলো পেছনে চালক হিসেবে প্রভাবিত করা সত্ত্বেও স্বামীর পছন্দের সঙ্গে স্ত্রীর পছন্দের এবং স্ত্রীর পছন্দের সঙ্গে স্বামীর পছন্দের একটি ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) করা ‘প্রজন্ম ও পারিবারিক শ্রেণিভেদে অর্থনৈতিক পছন্দ : বাংলাদেশের ওপর একটি বড় পরিসরে গবেষণা’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।বুধবার (১৮ মে) ফলাফল তুলে ধরতে এক সেমিনারের আয়োজন করে বিআইডিএস। বিআইডিএসের গবেষক ড. মনজুর হোসেন সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন। গবেষণার উপস্থাপনা তুলে ধরেন ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী। এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন কালেক্টিভ গুডস বনের পরিচালক অধ্যাপক ম্যাথিয়াস সোটার এবং মাস্ট্রিক্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লাউজ এফ জিমারম্যান।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গ্রামের বিবাহগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাত্র ও পাত্রীর পরিবারই ঠিক করে। তাই স্বামী-স্ত্রীর একই ধরনের পছন্দ আশা করা যায় না। বিবাহোত্তর সম্পর্কের গভীরতা এখানে প্রধান কারণ নয়, বরং কনেপক্ষ ও বরপক্ষ এমন কাউকে বিবাহের জন্য পছন্দ করে বা খোঁজে যাদের অর্থনৈতিক অগ্রধিকার বা পছন্দগুলো একই রকম। গবেষণায় পিতামাতা ও সন্তানদের পছন্দের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক পরীক্ষা করা হয়। দেখানো হয় যে, মা ও বাবার অর্থনৈতিক পছন্দগুলো তাদের সন্তানদের পছন্দের সঙ্গে একই মাত্রায় সম্পর্কিত। সন্তানের পছন্দের সম্পর্কের সঙ্গে মা ও বাবাদের পছন্দ কার্যত একই রকম। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত ধৈর্যশীল ব্যক্তিরা সাধারণত বেশি ঝুঁকি-সহনশীল হয়। বিদ্বেষপূর্ণ ব্যক্তিরা কম ধৈর্যশীল ও কম ঝুঁকি গ্রহণ করে।

পরিবারে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাবা-মা ও শিশু অল্প মাত্রায় ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, অন্যদিকে অর্ধেকেরও বেশি বাবা-মা ও শিশুরা অধৈর্যশীল তারা বিলম্বিত বড় ফলাফলের পরিবর্তে তাৎক্ষণিক ছোট ফলাফলে বেশি আগ্রহী। সামাজিক পছন্দের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ শতাংশের কম বাবা-মা ও সন্তান পরোপকারী, ১০ শতাংশের কম মা ও ২০ শতাংশেরও বেশি বাবা সমতাবাদী এবং প্রায় ১৭ শতাংশ শিশু সমতাবাদী। তাছাড়া, প্রায় ২০ শতাংশ বাবা-মা ও শিশু বিদ্বেষপূর্ণ। তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাবা-মা ও শিশু স্বার্থপর। সমন্বিত বিবেচনায় অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও বাবা-মা হয় স্বার্থপর নতুবা বিদ্বেষপূর্ণ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

সম্প্রতি করা এই গবেষণাপত্রে বাংলাদেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে আসা চর্চিত অর্থনৈতিক পছন্দের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, ঝুঁকি, সময় ও সামাজিক পছন্দের মতো অর্থনৈতিক পছন্দগুলো মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেখা গেছে, এসব পছন্দগুলো মানুষের শিক্ষাগত অর্জন, শ্রম বাজার, আর্থিক সাফল্য বা স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় বাংলাদেশের চারটি জেলা থেকে ৫৪২টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ৯০৭ সন্তানসহ মোট ১ হাজার ৯৯১ জনের অর্থনৈতিক পছন্দগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় অর্থনৈতিক পছন্দের তিনটি মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, সময়, ঝুঁকি ও সামাজিক পছন্দ।

বাচ্চাদের বিদ্বেষ ও স্বার্থপরতা কীভাবে পরিমাপ করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী বলেন, জরিপকালে বাচ্চাদের পছন্দগুলো প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে খাতায় লিখতে বলা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে একে অন্যের পছন্দগুলো সম্পর্কে মনোভাব জানতে চাওয়া হয়। তখন একে অন্যের পছন্দগুলো কীভাবে দেখছে সে বিষয়ে কেউ বিদ্বেষ বা স্বর্থপরতার বিষয়ে মতামত দেয়।

গবেষণাটি অর্থনীতির প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ জার্নালগুলোর মধ্যে অন্যতম শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘দ্য জার্নাল অব পলিটিক্যাল ইকনোমি’ জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে বলে সেমিনারে জানানো হয়েছে।