রেণু থেকে রোজিনা হওয়ার নেপথ্যের কাহিনী!

| আপডেট :  ১০ মে ২০২২, ০২:১৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১০ মে ২০২২, ০২:১৫ অপরাহ্ণ

আশি ও নব্বই দশকের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী রোজিনা। কবরী, শাবানাদের পাশাপাশি রূপালি পর্দায় আলো ছড়িয়েছেন রোজিনা। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। উপহার দিয়েছেন তিনশ’র বেশি সিনেমা, যার বেশিরভাগই ব্যবসা সফল।রূপালি পর্দার রোজিনা বাস্তবের রেণু। তার নাম রওশন আরা রেণু। তবে কীভাবে রেণু থেকে রোজিনা হয়ে গেলেন তিনি? তার নেপথ্যের কাহিনী এবার জানালেন এ নায়িকা।

তিনি জানান, সিনেমার নায়িকা হতে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন ঢাকায়। এরপর নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি নিজেকে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।স্মৃতির সেই ঝাঁপি খুলে দিয়ে সাংবাদিকদের জানান রেণু থেকে রোজিনা হওয়ার গল্প।

নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পালিয়ে ঢাকায়
সিনেমা হলে শাবানা ম্যাডাম, কবরী ম্যাডামদের সিনেমা দেখে ভাবতাম, আমিও একদিন সিনেমা করব। আলী ভাই নামে আমাদের এক পরিচিতজন ছিলেন ঢাকায়; মঞ্চ নাটক করতেন। তিনি মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় এলে তাদের মঞ্চ নাটকের গল্প করতেন। চলচ্চিত্রের অনেকের সঙ্গে তার পরিচিত ছিল; তাদের গল্প করতেন। আলী ভাইকে একবার বলেছিলাম, আমি সিনেমায় অভিনয় করব। উনি বলতেন, ‘খালাম্মা মারবে’।

পরে একদিন মায়ের মার খেয়ে রাজবাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে গেলাম। আলী ভাইদের বাসায় উঠলাম। সেটা ১৯৭৭ সালের কথা। মা ভেবেছিল, আমি গোয়ালন্দে গিয়েছি। হন্যে হয়ে খোঁজ করেও না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেন। পরে খবর পেলেন, আমি ঢাকায়। মা চলে গেলেন ঢাকায়। মাকে দেখে আমি চৌকির নিচে, খাটের নিচে পালাই! আলী ভাইয়ের মা বললেন, দুই দিন পর ওকে আমরা পাঠিয়ে দেব। পরে মা রাজবাড়ি চলে আসেন।

তখন আলী ভাইদের মঞ্চনাটকের মহড়া চলছিল। মহড়ায় গিয়ে আমি বসে থাকতাম। নাটকের শো’র দুদিন আগে হিরোইন অসুস্থ হয়ে যান। পরে আলী ভাই বললেন, ‘তুই নাটকটা কর’। বললাম, আমি তো কোনো রিহার্সেল করি নাই। আমার অভিজ্ঞতাও নাই। দুই দিন রিহার্সেল করে লালবাগের শায়েস্তা খান হলে শো করেছিলাম।নাটকের পর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলের (মায়া) বিজ্ঞাপন করে পরিচিতি পেলাম।

‘পাসিং শটে’ ক্যামেরার সামনে, ১০ টাকা আয়
সংসদ ভবনের পাশে খেজুর বাগানে ‘জানোয়ার’ নামে একটি সিনেমার দৃশ্যধারণ চলছিল। পরিচালক ছিলেন কালিদাস বাবু, উনি এখন বেঁচে নেই। ওয়াসিম সাহেব হিরো ও সুচরিতা ম্যাডাম হিরোইন ছিলেন।

শুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, টেবিলে বসে নর্তকীরা নৃত্য করছে। পরিচালকের সহকারী আমাকে বললেন, ‘এই মেয়ে আসো তো। একটা শট দাও’। আমি হতভম্ব হলাম। পরে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে গেলাম। শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে দিয়ে মেকআপ করিয়ে দিল। ফ্লোরে রিহার্সেল দিল। এক মিনিটের মধ্যে একটা শট দিয়েছিলাম। পরে ড্রেস পরিবর্তনের পর আমাকে পারিশ্রমিক হিসেবে ১০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ১০ টাকা পেয়ে হতভম্ব হয়েছিলাম, আমরা তো ঘুরতে এসেছি। শুটিং করতে আসিনি। আমি আর জিজ্ঞাসা করিনি। আমি আমার প্রথম উপার্জন নিয়ে গর্ববোধ করি। সেই সিনেমার ক্যামেরাম্যান আমার কিছু ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবিগুলো কীভাবে কীভাবে যেন অনেকের কাছে গিয়েছিল।

প্রথম সিনেমায় নাম লিখিয়েও সরে দাঁড়ালেন
এর মাঝে পরে আলতামাশ সাহেব ‘সাগর ভাসা’ নামে একটি সিনেমা করছিলাম। সেখানে নতুন হিরো-হিরোইন খুঁজছিলেন তারা। সেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। আঞ্চলিক ভাষার টান চলে আসছিল। আফজাল সাহেব আমাকে সঞ্চয়িতা পড়তে দিলেন। পরবর্তীতে বললেন, আমরা নির্বাচিত হয়েছি। নতুন হিরো হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন চঞ্চল মাহমুদ। আমাদের নাচ-গান শিখতে হবে। সেইভাবেই আমরা শিখছিলাম।

আমি মহড়া দিলাম। ছবির শুটিং শুরু হলো বলধা গার্ডেনে। এর মধ্যে আমার জলবসন্ত হয়েছিল। আমার গালে যে স্পট আছে সেটা জলবসন্ত থেকেই এসেছিল। শুটিংয়ে গিয়ে দেখি, নায়িকা হিসেবে ম্যাডাম কবরী কাজ করছেন। আমার একটু ইয়ে লাগল। ভাবলাম, এখানে তো আমার একক হিরোইন হওয়ার কথা। ওইদিন শুটিং করে আমি চলে আসলাম।

আমার স্বপ্ন হল শাবানা ম্যাডাম, কবরী ম্যাডাম হওয়া। পরদিন আর শুটিংয়ে যাইনি। আমাকে প্রধান চরিত্রে নেওয়ার কথা বলে পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করতে আমার আত্মসম্মানে লেগেছিল। পরে সিনেমাটি আর করিনি।

রাজমহলে অভিষেক
এর মাঝে ‘রাজমহল’ সিনেমায় একক অভিনেত্রী হিসেবে আমার রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে। তখন রেণু নামেই অভিনয় করেছিলাম।পরে ‘মিন্টু আমার নাম’ সিনেমায় অভিনয়ের সময়ে মহিউদ্দিন স্যার আমার নাম দিলেন রোজিনা। এর মধ্যে ‘আয়না’ নামে আরেকটি সিনেমা করছিলাম মশিউর সাহেবের। সেখানে আমার নাম দেওয়া হয়েছে শায়লা। তখন আমার কিছু বলার ছিল না।

‘মিন্টু আমার নাম’ সিনেমার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে করে বলা হলো, আমার নাম রোজিনা। সিনেমার গল্পের চরিত্রের নামও রাখা হল রোজিনা। যেন পপুলার হয়। পরে মহড়া চলল।তারপর থেকে রোজিনা নামেই পরিচিতি পেলাম।