পাইকারি বাজারে তরমুজ নিয়ে কাঁদছেন চাষিরা

| আপডেট :  ১০ মে ২০২২, ০১:২৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১০ মে ২০২২, ০১:২৩ অপরাহ্ণ

দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নের কৃষক উৎপল রপ্তান ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ২৬ হাজার টাকা খরচ হলেও ব্যাপারিরা ২০ হাজারের ওপরে দাম বলছেন না। উপায় না দেখে দুই বিঘা জমির দেড় হাজার পিস তরমুজ পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে এসেছেন কদমতলা পাইকারি বাজারে। উৎপল রপ্তান বলেন, সারাদিন বসে থেকে ১০-১২ কেজি ওজনের ৬০০ পিস তরমুজ বিক্রি করেছি। বাকিগুলো পড়ে আছে।

বাজুয়া গ্রামের কৃষক দেবাশীষ বাইন এ বছর ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তার ৭ বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি হলেও উৎপাদন খরচ ওঠেনি। দেবাশীষ বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ২০-২২ হাজারে বেশি কেউ দাম বলছেন না। ‘আসানি’র পূর্বাভাসে কৃষি কর্মকর্তারা তরমুজ কেটে নিতে বলেছেন। কিন্তু উঠিয়ে কী করব? কেউ তো কিনছেন না।’

শুধু উৎপল রপ্তান বা দেবাশীষ বাইনই নয়, তরমুজ চাষ করে লোকসানের মুখে খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ ৫ উপজেলার কৃষক। ঈদের পর থেকেই দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না, উল্টো লোকসান বাড়ছে। উপায় না পেয়ে কৃষকরা তরমুজ সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ফলে মাঠেই কোটি কোটি টাকার তরমুজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০১৬ সালে জেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিল ৪০৭ হেক্টর জমিতে। পুঁজি কম লাগায় ২০২১ সালে চাষ হয় ৭ হাজার ৫১২ হেক্টরে। এ বছর ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ১৯ হাজার ১০০ টন। খুলনার মোট তরমুজের অর্ধেক উৎপাদন হয় দাকোপে। এ বছরও এখানে ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ জমির তরমুজ সংগ্রহ হয়েছে। বাকিগুলো মাঠেই পড়ে আছে।

দাকোপের পানখালী ইউনিয়নের মৌখালী গ্রামের কৃষক মজনু ফকির বলেন, ‘৩ বিঘা জমির বেশিরভাগ তরমুজ ১২ থেকে ১৫ কেজি ওজনের। লোকসানের কারণে তরমুজ কাটিনি, দেখি দাম বাড়ে কিনা।’কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ৬০ ভাগ তরমুজ কাটা হয়ে গেছে। আসানির প্রভাবে ক্ষেতের তরমুজ নষ্ট হতে পারে। তাই কেটে সংগ্রহ করতে বলা হলেও দাম কমে যাওয়ায় অনেকেই কাটতে চাইছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, প্রথম দিকে বিক্রির পরিমাণ দেখে ধারণা হয়েছিল, এ বছর ৯৭০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে। কিন্তু হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় হিসাব উল্টে গেছে। মাঠে কম দামে বিক্রি না করে পাইকারি মোকামে বিক্রির পরামর্শ দেওয়া হয় কৃষকদের। সেখানেও নাকি বিক্রি হচ্ছে না।