দেশে বাড়লেও বিশ্ববাজারে কমেছে ভোজ্যতেলের দাম

| আপডেট :  ৬ মে ২০২২, ০৮:০৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ মে ২০২২, ০৮:০৭ অপরাহ্ণ

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। এছাড়া গত মার্চে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার পর এপ্রিলে কিছুটা কমেছে। শুক্রবার (৬ মে) জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও সূচকে দেখা গেছে, গত মার্চে খাদ্যপণ্যের মূল্য সূচক ছিল ১৫৯ দশমিক ৭। এপ্রিলে তা কিছুটা কমে ১৫৮ দশমিক ৫ এ নেমেছে।

এফএও’র প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো টোরেরো কুলেন বলেছেন, ‘সূচকের সামান্য হ্রাস স্বস্তিদায়ক, বিশেষ করে নিম্নআয়ের খাদ্য ঘাটতি দেশগুলোর জন্য, কিন্তু তারপরও খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক উচ্চমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে, যা বাজারের ক্রমাগত কঠিন অবস্থাকে প্রতিফলিত করে এবং সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ।

মার্চ মাসে দানাদার শস্যের দাম ১৭ শতাংশ বাড়ার পর এপ্রিলে এর মূল্য সূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংম কমেছে। ভুট্টার দাম ৩ শতাংশ কমলেও গমের দাম শূন্য দশমিক ২ শতাংম বেড়েছে। ইউক্রেনের বন্দর অবরোধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শস্য উৎপাদনের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের কারণে গমের দাম বেড়েছে। ভারত থেকে বৃহত্তর চালান এবং রাশিয়া থেকে প্রত্যাশিত রপ্তানির কারণে গমের দাম নিয়ে উদ্বেগ কিছুটা কমেছে।

এফএও’র ভোজ্যতেল সূচকে দেখা গেছে, এপ্রিলে ভোজ্য তেলের সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। চাহিদার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করায় পাম, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। একইসময় চিনির দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, মাংসের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং ডেইরি পণ্যের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

এদিকে দেশে দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ানোর পরও দোকানে দোকানে সয়াবিন তেল মিলছে কমই। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বোতলে নতুন দাম সাঁটিয়ে তেল এখনও আসেনি। যেসব দোকানে তেল আছে, তাতে আগের গায়ের দাম লেখা; কিন্তু তারা দাম নিচ্ছেন নতুন দরে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মুদি দোকান ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এই কয়েক দিনে বোতলের গায়ে লেখা বেশি দামের তেল আসতে শুরু করবে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরেই বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী আর বাংলাদেশ তার চাহিদার সিংহভাগ তেলই আমদানি করে থাকে। ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর সরবরাহ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এর মধ্যে পাম তেলের বড় সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানির সিদ্ধান্ত স্থগিতের কথা জানালে বাজার আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

ঈদের আগে আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে ভোজ্যতেলে সব ধরনের ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহারের পর তেলের দাম লিটারে কমানো হয়েছিল ৮ টাকা। তবে ঈদ শেষে প্রথম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বোতলজাত তেল লিটারে ৩৮ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানোর কথা জানানো হয়।

বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে মিলমালিকদের বৈঠকের পর এই বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ ও খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে।

এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা। একই সঙ্গে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হবে ১৭২ টাকায়।এর আগে গত ২১ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৬০ টাকা আর খোলা তেল ১৩৬ টাকা ঠিক করা হয়।সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। ২০২১ সালের ৫ মে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১১৮ টাকা।

অন্যদিকে দোকানিরা কোম্পানির পক্ষ থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ করলেও তা মানছেন না দেশে ভোজ্যতেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো ঘাটতি নেই। ঈদের আগে তেলের সংকটের কোনো কারণ ছিল না। আমরা তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছি।’

কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘দাম বাড়ার ফলে ভোক্তার কষ্ট আরও বাড়বে। ঈদের আগে তেল পাওয়াই যায়নি। এখন লিটারে ৩৮ টাকা বেড়ে যাওয়ায় যারা তেল মজুত করেছিল, তারা বিক্রি করবে।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশির কথা বলে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাবে, তখন আমাদের দেশেও যেন দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হয় সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।’ আমারসংবাদ