লাগামহীন মাংসের বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে

| আপডেট :  ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১১:০২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১১:০২ অপরাহ্ণ

লাগামহীন মাংসের বাজার। গরু, ছাগলসহ বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। রাজধানীরতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে খাসির মংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায়। কাল থেকে মাংসের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মাংসের বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বেড়ে গেছে। এজন্য মাংসের দামও বেড়েছে।তারপরও ভিড় বেড়েছে মাংসের দোকানগুলোতে। মাংসের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই মাংস কিনে রাখছেন ক্রেতারা

বিএনপি বাজারে মাংস কিনতে আসা মো. সামিউল বলেন, সাধারণত প্রতি বছর ঈদের আগে ও ঈদের দিন মাংসের দাম বেড়ে যায়। এ বছরও বেড়ে যেতে পারে। এজন্য আগে থেকেই মাংস কিনে রাখছি। এমনিতেই এ বছর আগে থেকেই মাংসের দাম অনেক বেশি। দাম বেশি থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় কম মাংস কিনেছি। তালতলা বাজারে মাংস কিনতে আসা রাফসান আহমেদ বলেন, শনিবারও গরুর মাংসের দাম ৬৮০ টাকা ছিল। একদিনের ব্যবধানে ৭০০ টাকা হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বেড়ে যেতে পারে।

এ বছর এমনিতেই মাংসের দাম অনেক। খাসির মাংসের দামও বেড়েছে। ৯৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাংস কিনতেই সব টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। আসলে না কিনেও উপায় নেই। ঈদে তো মাংস ছাড়া চলে না। তিনি বলেন, সরকার বলে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত গরু উৎপাদন হয়। তবে কেন আমাদের এত দাম দিয়ে মাংস কিনে খেতে হবে? হাতিরপুল বাজারে মাংস কিনতে আসা রাসেল আহমেদ বলেন, মাংসের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়তি। দেশি মুরগির কেজি ৬০০ টাকা।

এদিকে মাংস বিক্রেতারা বলছেন, অনেক আগে থেকেই গরুর মাংসের বাড়তি দাম রয়েছে। এত দিন কোথাও ৬৫০ কিংবা কোথাও ৬৮০ টাকায় আবার কোনো কোনো দোকানে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে । কিন্তু এখন বেশির ভাগ দোকানেই ৭০০ টাকার নিচে মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে জানান তারা।

বিএনপি বাজারের এক মাংস বিক্রেতা বলেন, ঈদ উপলক্ষে গরুর দাম বেড়ে গেছে। কয়েক দিন আগেও আমার দোকানেই ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ৬৮০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বেড়ে যায়। চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপারীরা গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যাপারীদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনলে খুচরায় কমে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে গরু-খাসির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দামও। ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ৫০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০০ টাকায়। কোনো মাংসের বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
ট্রেডিং করপোরেশনের বাজারদরের ডাটাবেজে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে মাংসের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে গরুর মাংস কেজিপ্রতি দাম ছিল ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। খাসির মাংস কেজিপ্রতি বিক্রি ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। এক বছর আগেও কেজিপ্রতি খাসির মাংস বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

মাংসের বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় বেশি দাম দিয়ে মাংস কিনে খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, তিনটি সিন্ডিকেট মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা হলো প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন ও ভারতীয় একটি চক্র। ভারত থেকে মাংস আমদানি করে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় মাংস ও পশু আমদানির প্রতিবাদ হচ্ছে না। মাংসের দাম নিয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করে না। মাংসের বাজারদর ও স্বাস্থ্যসম্মতর বিষয় দেখাশোনার কেউ আছে বলে মনে হয় না। ৪৫ বছর নিয়ন্ত্রণের পরে কার ধমকে মাংসের মূল্য নির্ধারণ বন্ধ করা হলো? তিনি বলেন, মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানির বাজার উন্মুক্ত রাখতে চাইলে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণের আলোচনাসভা অব্যাহত রাখতে হবে।

ভারতীয় গরু ও মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের চরাঞ্চলকে পশুপালনের আওতায় আনতে হবে। একটি বাড়ি একটি খামারকে পশুপালনের আওতায় আনতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও হীনমন্যতার জন্য এমন সমস্যার তৈরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তারা কাজের চেয়ে কথা বেশি বলে। প্রতিবছর ঢাকঢোল পিটিয়ে অসত্য বলছেন, বাংলাদেশ পশুপালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছর ভারতীয় মাংস ও পশু পাচার হয়ে আসছে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা পাচার হলেও কারও কোনো খবর নেই।

তারপরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাংসশ্রমিকের প্রশিক্ষণের নামে রাস্তার শ্রমিক দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। তিনি আরও বলেন, মাংসের দাম অতিরিক্ত হওয়ায় মাংসব্যবসায়ীরা নিঃশেষ হওয়ার পথে। হাজার হাজার মাংসের দোকান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। পেশা পরিবর্তন করেছে। তাদের রক্ষা করতে না পারলে বাংলাদেশের পশুর বর্জ্য রপ্তানিখাত ধ্বংস অনিবার্য। ভারতীয় মাংস আমদানি বন্ধ করতে না পারলে চামড়া শিল্পের আত্মহত্যা প্রত্যক্ষ করতে হবে। সুত্রঃ মানবজমিন