সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুহিতের জানাজা স্থগিত

| আপডেট :  ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দ্বিতীয় জানাজার কর্মসূচি অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন তার ছোটভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, আমার ভাইয়ের প্রথম জানাজা সকাল ১১টায় গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুপুর ১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়া হবে।

সেখান থেকে সড়কপথে তার মরদেহ নেয়া হবে জন্মস্থান সিলেটে। সিলেটে আগামীকাল বাদ জোহর শহরের ঈদগা মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সিলেট শহরের রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হবে।
উল্লেখ্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সংগ্রামী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল ২০২২) দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। বৃহত্তর সিলেটের এই কীর্তিমান পুরুষ ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক। ছিলেন রবীন্দ্র গবেষক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর

দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সারির নেতারা।

বর্ণাঢ্য জীবন: আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫শে জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান মুহিত। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষক।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া আবদুল মুহিত বরাবরই একজন মেধাবী মানুষ ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

১৯৫৬ সালে আবদুল মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। সিএসপিতে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্ব নেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সিএসপি হওয়ার পর মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তিনি পরিকল্পনাসচিব হন। এর আগে পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের উপসচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন তিনি। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক।

১৯৭৭-৮১ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ছিলেন তিনি এবং ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে তাঁকে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী করার প্রস্তাব দিলে তিনি শর্ত সাপেক্ষে রাজি হন। শর্তটি ছিল নির্দলীয় সরকার গঠন করে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

এরশাদ কথা না রাখলে দুই বছরের মাথায় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন মুহিত। এরপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা ঐক্যজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পান অর্থমন্ত্রীর। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোট ১২ বার ও টানা ১০ বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ড গড়েন মুহিত।

২০১৬ সালে সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তা দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ, জনপ্রশাসন, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়ে মুহিত বই লিখেছেন ৪০টি।