সেই অন্ধ মাছ বিক্রেতা বাবুর পাশে দাঁড়ালেন এমপি দুদু

| আপডেট :  ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৩৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৩৯ অপরাহ্ণ

প্রতিদিন বিকেল হলেই জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের হিচমী বাজারে ৫০ ঊর্ধ্ব বাবু মিয়া তার ১৫ বছরের ছেলে শিহাব হোসেনকে নিয়ে মাছ বিক্রি করতে আসেন। বেচাকেনা শেষে ৩/৪শ’ টাকা লাভ হয়, যা দিয়ে স্ত্রী শিউলী বিবি ও ছেলে শিহাবকে নিয়ে বেঁচে আছেন কোনমতে।

তবে কোনো কোনো দিন লাভতো দূরের কথা, লোকসানের ঘানি টেনে নিয়ে যেতে হয় বাড়িতে। কারণ, স্বার্থপর এই পৃথিবীতে কিছু অসৎ মানুষ জাল টাকা দিয়ে মাছ কিনে নিয়ে যান, যা অন্ধ বাবু মিয়া কিংবা নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে শিহাব বুঝতেই পারে না। এ কারণে মাঝে মধ্যে দু-একদিন ব্যবসা বন্ধ রাখলেও গত ৯ বছরেও কারো কাছে হাত পাতেননি তিনি।

বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার (২০ এপ্রিল) দেশের অন্যতম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ ‘অন্ধ মাছ বিক্রেতা বাবু মিয়াকে অনেকেই ঠকান জাল নোট দিয়ে’ শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটি জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু’র চোখে পড়ে।

পরে তিনি জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমুর মাধ্যমে তাঁর সম্বন্ধে খোঁজ নেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে করে নিয়ে হিচমী বাজারে ওই মাছের দোকানে যান তিনি।

এ সময় মাছ বিক্রেতা বাবু মিয়া ও কাদোয়া কয়রা পাড়া দাখিল মাদরাসায় অধ্যয়নরত নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে শিহাবের সঙ্গে সরেজমিনে কুশলাদী বিনিময়সহ তার অভাবের সংসার সম্বন্ধে অবগত হন। এ সময় তিনি বাংলানিউজে যে মানবিক সংবাদটি প্রকাশ পেয়েছে, সেটি তাকে অবগত করেন এবং মাছ বিক্রির ছোট ব্যবসাটাকে একটু বড় করার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেন। এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ছেলে শিহাবের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে এবং সংসারের অভাব ঘোচাতে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তাকে।

তখন জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাজা চৌধূরী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু, সাবেক ছাত্র নেতা রাশেদুল ইসলাম রাসেলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।এ বিষয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু বলেন, বাংলানিউজে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজড়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে আমার এক বিশ্বস্ত কর্মীর মাধ্যমে খোঁজ নিই। পরে স্বশরীরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে নগদ অর্থ সহায়তা করি এবং ভবিষ্যতেও তার সংসারে অভাব মেটাতে এককালীন অর্থ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিই।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের এমন মানবিক উদ্যোগে দারুণ খুশি মাছ বিক্রেতা বাবু মিয়া। অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, সেদিন হঠাৎ করেই আমার এই দোকানে এসে ছবি তুলে নিউজ করলেন। আর আজ কতদূর থেকে এমপি সাহেব এসে আমাকে নগদ অর্থ সহায়তা করলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরো অর্থ দেওয়ারও ঘোষণা দিলেন। আল্লাহ আপনাদের মিডিয়া এবং সংসদ সদস্যকে দীর্ঘায়ু দান করুক।

জানা যায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া এক সময় ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। টাকা জমিয়ে মাসে মাসে বাড়িতে আসতেন। দুই ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করতো। স্বপ্ন দেখতেন ভাল কিছুর। কিন্তু হঠাৎ করেই হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব তার দুটি চোখ নষ্ট করে দেয়। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বর এলাকায় তিনি রিকশা চালাচ্ছিলেন।

এক সময় হেফাজতের সদস্য ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চললে পুলিশের টিয়ারসেল তার চোখে লাগে। পরে অনেক টাকা খরচ করলেও মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই তিনি দুটি চোখের দৃষ্টিই হারিয়ে ফেলেন। মূলত সেই থেকেই তিনি জয়পুরহাট শহরের মাছুয়া বাজার থেকে পাইকারি দরে মাছ সংগ্রহ করে হিচমী বাজারে খুচরা বিক্রি করে সংসার চালান। প্রথমদিকে ভ্যান চালকদের সহায়তায় মাছ এনে বিক্রি করলেও এখন ছেলে শিহাব হোসেন কিছুটা বড় হয়েছে। আর তাকে নিয়েই বর্তমানে ছোট পরিসরে এই দোকান করছেন।

ছেলে শিহাব হোসেন জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাদারাসায় থাকি, আর বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত অন্ধ বাবার সঙ্গে মাছ বিক্রি করি। মাছ বিক্রির লাভ দিয়েই কোনোমতে সংসার চালাই। কিন্তু মাঝে মধ্যে দুঃখ হয়, এই সমাজের সুস্থ সবল কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। কেউ কেউ ১ হাজার থেকে ৫০০ টাকার জাল নোট দিয়ে মাছ কিনে নিয়ে যায়। সে দিন কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। আমাদের অভাবী সংসারের গল্পটা সম্প্রতি বাংলানিউজে প্রকাশ পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সেজন্য তার প্রতি এবং আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।