সেই অ’স্ত্রধারী ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের জাকির

| আপডেট :  ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১০:১০ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

নিউমার্কেট দোকানকর্মী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সং’ঘর্ষের সধ্যে কুরিয়ারকর্মী নাহিদ মিয়ার নিস্তেজ দেহে পড়েতে দেখা গেছে একের পর এক ধা’রালো অ’স্ত্রের কোপ। যে নৃ’শংসতার ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।প্রশ্ন উঠে কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা ধা’রালো অ’স্ত্রধারী কে ছিলো? অবশেষে মিলল সেই উত্তর। অ’স্ত্রধারী ঢাকা কলেজের ছাত্র জাকির হোসেন। সে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় বলে জানা গেছে।

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) র’ক্তক্ষয়ী সং’ঘর্ষের দিন নাহিদ মিয়াকে প্রথমে বেদম পি’টিয়ে ফুটপাতে ফে’লে রাখেন কাইয়ুম। ওই সময়ে তার পরনে নীল-সাদা চেকের টি-শার্ট ছিল। এর পরই হলুদ হেলমেট ও লাল গেঞ্জি পরা এক তরুণ নাহিদকে ইট দিয়ে আ’ঘাত করে। তার নাম সুজন ইসলাম বলে জানা গেছে। দু’জনই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের সূত্র স’ন্দেহভাজন ওই দু’জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে।

সং’ঘর্ষের মধ্যে লা’ঠি ও অ’স্ত্র নিয়ে ধা’ওয়া করলে একপর্যায়ে ঢাকা কলেজের উল্টোপাশে নুরজাহান মার্কে’টের ফুটপাতে পড়ে যান নাহিদ। সেখানে এক যুবক তাকে এলোপাতাড়ি পে’টাতে থাকে। আরেকজন ধা’রালো অ’স্ত্র দিয়ে কো’পাতে থাকে। একই সময় একজনকে অ’স্ত্রধারীকে নিবৃত করতে দেখা যায়। দিনদুপুরে ঢাকার সড়কে ওই নৃ’শংসতার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়লে মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়, শুরু হয় ক’ঠোর সমালোচনা। ঘটনায় জ’ড়িতদের ছবি প্রকাশ পেলেও তারা কোন পক্ষের, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না এত দিন। শেষ পর্যন্ত অবয়ব ও পোশাক দেখে ৩ জনের পরিচয় বেরিয়ে এলো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গো’য়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো সং’ঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও ব্যবসায়ীদের পক্ষের দিকেও ধা’রালো অ’স্ত্র ছিল। এই অ’স্ত্রধারীদের প্রায় সবার মাথায় ছিল হেলমেট। এ জন্য এদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে ছবি দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন প্রযুক্তিগত ত’দন্তের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে তারা উপস্থিত ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।’

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্নেষণ করে ত’দন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, সং’ঘর্ষের সময়ে ঢাকা কলেজের হয়ে অতি তৎপর ছিল জসিম, জুলফিকার ও ফিরোজ নামে ৩ ছাত্রনেতার অনুসারীরা। জসিম নেত্রকোনার এবং ফিরোজ ও জুলফিকার বরিশাল অঞ্চলের। ক্যাম্পাসে কমিটি না থাকলেও তারা ৩ জনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

স’ন্দেহভাজন ৩ জনের পরিচয় পাওয়ার পর ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিং’স্রতার সময়ে ছবি প্রকাশ পাওয়া জাকির, কাইয়ুম ও সুজনও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তারা কলেজ হোস্টেলে থাকে। তবে নাহিদের ও’পর নৃ’শংস হা’মলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তাদের আর ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

ত’দন্ত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নাহিদের ও’পর অ’স্ত্রধারী হা’মলাকারীকে অনেকে ঢাকা কলেজের ছাত্র ফজলে রাব্বী হিসেবে চিহ্নিত করলেও ত’দন্তে তাকে ঘটনার সময় সেখানে দেখা যায়নি। তার অবস্থান ছিল ঢাকার বাইরে।

উল্লেখ্য, নিউমার্কে’টের খাবারের দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্ব’ন্দ্বে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী জড়িয়ে যায়। ওই ঘটনার জেরে গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) মধ্যরাতে ব্যবসায়ী-দোকানকর্মী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সং’ঘর্ষ শুরু হয়, যা পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। এতে উভ’য় পক্ষের শতাধিক আ’হত হলেও কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ মিয়া ও দোকানকর্মী মোহাম্ম’দ মুরসালিন নি’হত হন। মোশারফ হোসেন নামের ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী এখনও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় দা’য়ের হওয়া ৪ মা’মলার মধ্যে হ’’ত্যাকাণ্ডের দু’টি মা’মলা ঢাকা মহানগর পুলিশের গো’য়েন্দা বিভাগ (ডি’বি) ত’দন্ত করছে।

ত’দন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, ওই সং’ঘর্ষের মধ্যে হেলমেট পরিহিত কয়েকজনকে বেশ তৎপর দেখা যায়। তাদের অনেকের হাতে ছিল ধা’রালো অ’স্ত্র, র’ড ও লা’ঠি। এদের অনেকেই সং’ঘর্ষের পুরোভাগে ছিল। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি দেখা গেলেও গতকাল শনিবার (২৩ এপ্রিল) পর্যন্ত কেউ গ্রে’প্তার হয়নি।

নাহিদ নি’হত হওয়ার পর বলা হচ্ছিল, তিনি পথচারী। এলিফ্যান্ট রোডে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সং’ঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রা’ণ হা’রান। তবে গত দু’দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, নাহিদ দোকানকর্মীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন।

দুটি হ’’ত্যা মা’মলার ত’দন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডি’বির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘সং’ঘর্ষের সময়ে ২ জনকে পি’টিয়ে ও কু’পিয়ে হ’’ত্যায় জ’ড়িতদের শনাক্তে একাধিক দল কাজ করছে। সং’ঘর্ষে দুই পক্ষের শত শত ব্যক্তি অংশ নেওয়ায় শনাক্ত করতে একটু সময় লাগছে। তবে কোনো নির্দোষ মানুষ যাতে হ’য়রানির শি’কার না হন, সে জন্য কাজটি সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে।’

ডি’বির ত’দন্ত-সংশ্নিষ্ট অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ছবি নিয়ে দুই হ’’ত্যাকাণ্ডে সরাসরি জ’ড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সেই ছবিগুলো দেখানো হয়েছে। অনেকে দেহের গঠন, শরীরের উচ্চতা ও পোশাক দেখে শনাক্তে সহায়তা করছেন। তবে সরাসরি জ’ড়িতদের প্রায় সবাই হেলমেট পরা থাকায় পুরোপুরি শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ছবি দেখালে ধারণা থেকে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন নাম বলছেন। তবে তারা সেই নাম নিয়েই প্রযুক্তিগত ত’দন্ত করে দেখছেন, ঘটনার সময় শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিনা।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, তারা ফুটেজ বিশ্নেষণ করে দেখেছেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে ধা’রালো অ’স্ত্র ছিল। পাশাপাশি দোকানকর্মীদের হাতেও দেখা গেছে অ’স্ত্র। এখন নাহিদ ও মুরসালিন ঠিক কোথায় হা’মলার শি’কার হয়েছিলেন, সেই জায়গাটা ঠিকভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এরপর পর্যবেক্ষণ করা হবে, ঘটনাস্থলটি কোন পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল।