নাহিদের স্ত্রী, অনাগত সন্তান নিয়ে গোলাম রাব্বানীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

| আপডেট :  ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০৪ অপরাহ্ণ

রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নাহিদ নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই তরুণ কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভ্যারিম্যানের কাজ করতেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন তিনি। নাহিদ বিবাহিত ছিলেন। বিয়ের মাত্র ৬ মাসের মাথায় তার স্ত্রী ডালিয়া বিধবা হলেন। স্বামীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ডালিয়া। কিছুতেই স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি।

এদিকে নাহিদের শোকাতুর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এসময় নাহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নাহিদের স্ত্রী ও তাদের অনাগত সন্তানের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন রাব্বানী। সেই স্ট্যাটাসটি বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘নাহিদ আর ওর পরিবারকে কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারছি না, ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাসা থেকে ফেরার পথে স্থানীয় এক মুরুব্বী খুব আকুলভাবে জানালো, আমরা যেন এই পরিবারটির পাশে থাকি। বিশেষত নাহিদের সদ্যবিবাহিত স্ত্রী আর ওর অনাগত সন্তানের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য যেন একটা উপার্জনের মাধ্যম বা চলার মতো একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেই। আশ্বাস দিয়ে এসেছি, চেষ্টার বিন্দুমাত্র ত্রুটি করবো না ইনশাআল্লাহ।

মেয়েটার কান্নাভেজা আর্তনাদ, আহাজারি, সব ভেঙে চুরমার হবার কষ্ট, দিশেহারা ছল ছল চোখ! কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলছিল, পরিবার চালাতে স্বামীকে সাপোর্ট দিতে সে বারবার কাজ করতে যেতে চাইলেও, তার ভালোবাসার নাহিদ চাইতো না বাইরের কোন অনিরাপদ পরিবেশে তার স্ত্রী কাজ করুক, তাই সংসার চালাতে সে ডাবল শ্রম দিতো, কুরিয়ার কোম্পানিতে ডেলিভারি ম্যানের পাশাপাশি কাজ করতো, ‘ডাটা টেক কম্পিউটার’ নামের একটা প্রতিষ্ঠানে সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে।

স্বামীহারা কিশোরী মেয়েটি গর্ভবতী! নিশ্চয় মনের মানুষটাকে সাথে নিয়ে শত সংগ্রামী জীবনেও অনাগত সন্তানের জন্য সুন্দর একটি আগামীর স্বপ্ন বুনছিলো কাঁচা হৃদয়পটে। হঠাৎ অজানা ঝড় মুহুর্তেই তার সাজানো স্বপ্নের ক্যানভাস নিকশ কালোয় ঢেকে দিলো!

আচ্ছা, নাহিদের অনাগত সন্তান যখন একটু বুঝতে শিখবে, যখন জানতে পারবে, এমন একটা সমাজে সে জন্মগ্রহণ করেছে, যেখানে তুচ্ছ একটা ঘটনার রেশে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে তার জন্ম নেয়ার আগেই জন্মদাতা বাবাকে কেড়ে নিয়েছে! এই সমাজ আর সমাজের অমানবিক মানুষগুলোর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গী কেমন হবে তখন? সে কি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে?

এই সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যারা দায়ী, যারা দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকেও আগের রাতে চলা সংঘাত থামাতে ব্যর্থ, যাদের অপরিনামদর্শিতা, অবহেলা, বিবেকহীনতা, হিংস্রতা একটি নাম না জানা অনাগত শিশুকে তার বাবার প্রাপ্য স্নেহ-ভালোবাসা থেকে চিরতরে বঞ্চিত করেছে, তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখলাম, আপনি বা আপনারা কি সেই শিশুর চোখে চোখ রেখে স্বাভাবিক থাকতে পারবেন? পারবেন অনুশোচনাবোধ থেকে কৃতকর্মের জন্য তার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইতে?’