ইলিয়াস আলী গুম; নেত্র নিউজের দাবি নাকচ র‌্যাবের

| আপডেট :  ২১ এপ্রিল ২০২২, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ এপ্রিল ২০২২, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী নি’খোঁজ হওয়ার ১০ বছর পূর্তির সময়ে নতুন এক তথ্য হাজির করেছে নেত্র নিউজ। সুইডেন ভিত্তিক এই অনলাইন মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে ইলিয়াস আলীকে তুলে নেয়ার সঙ্গে র‌্যা’পিড অ্যা’কশন ব্যা’টালিয়ন র‌্যা’বকে দায়ী করা হয়েছে। নেত্র নিউজের এই তথ্য প্রকাশের পর এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়েছিল এটা নিশ্চিত। ঘটনার পর ইলিয়াস আলীকে উ’দ্ধারে স’রকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এটি লোক দেখানো ছিল বলেও তিনি মনে করেন।

নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের বি’ষয়ে র‌্যা’ব’র তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়, আলোচিত এই গু’মের ঘটনায় খোদ র‍্যা’ব’র গো’য়েন্দা শাখা বা ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সম্পৃক্ততা পেয়েছিল সংস্থাটিরই আরেকটি শাখা: র‍্যা’ব-১। অ’পহরণের স্থানটি তাদের আওতাধীন হওয়ায় গু’ম হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ঘটনাটির ত’দন্তে নামে র‍্যা’ব-১। এ বি’ষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মানবজমিন এর পক্ষ থেকে যোগযোগ করা হলে র‌্যা’ব’র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিউজে তাদের দেয়া অধিকাংশ তথ্যই ভিত্তিহীন মনে হয়েছে।

তারা নিজেদের মতো করে তথ্য উপস্থাপন করেছেন। নি’খোঁজ এই নেতার পরিবারকে র‌্যা’ব’র পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা শুরু থেকেই করা হয়েছে। এখনো যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে র‌্যা’ব।নিউজে বলা হয়, গো’পন একটি নথিতে র‍্যা’ব-১ কর্মকর্তারা তাদের ত’দন্তের বিস্তারিত বর্ণনা করেন। ত’দন্তে এই গু’মের সঙ্গে র‍্যা’ব-এ কর্মরত সা’মরিক বাহিনী থেকে ডেপুটেশনে আসা কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সমপ্রতি গো’পন এই নথিটি নেত্র নিউজের কাছে একজন সা’মরিক কর্মকর্তা ফাঁ’স করেছেন বলে দাবি করে নেত্র নিউজ।এ বি’ষয়ে র‌্যা’ব’র মুখপাত্র আল মঈন বলেন, নিউজে তারা নিজেদের মতো করে তথ্য দেখিয়েছেন। যখন ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে আমরা খোঁজ করেছি।

নেত্র নিউজের খবর অনুযায়ী র‍্যা’ব-১ ত’দন্তকারীরা গো’পন নথিতে লিখেছেন, ইলিয়াস আলীর অ’পহরণের ঘটনাটি সূক্ষভাবে পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় এটি একটি সুপরিকল্পিত অ’ভিযান যা র‍্যা’ব’র গো’য়েন্দা শাখা কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে অ’পহরণের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিতি ছিল এমন তিনটি স’ন্দেহজনক মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে র‍্যা’ব-১ ত’দন্ত শুরু করে। এই তিনটি নম্বরের কল ডেটা রেকর্ড বা সিডিআর বিশ্লেষণ করে আরও পাঁচটি নম্বরের সন্ধান পাওয়া যায়। এই আটটি নম্বরই ছিল সিটিসেল-এর। তখন সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর হিসেবে সিটিসেল-এর নম্বরে আড়িপাতার সক্ষমতা না থাকায় ত’দন্তকারীরা শুরু থেকেই সিটিসেলকে মাথায় রেখেছিলেন। সিটিসেলের মোট আটটি নম্বরই ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে উত্তরার দেশ টেলিকম নামে একটি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল।

১৭ই এপ্রিল রাত ১১ টার পর সবগুলো নম্বর চালু করা হয়। ১৮ই এপ্রিল রাত ১ টার মধ্যেই সবগুলো নম্বর বন্ধ করে ফেলা হয়। অর্থাৎ, ইলিয়াস আলীকে অ’পহরণের আগে-পরের মাত্র ৩ ঘণ্টা এই নম্বরগুলো সক্রিয় ছিল। আটটি নম্বরের ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যেই কথা বলেছেন। এ বি’ষয়ে র‌্যা’ব’র এই কর্মকর্তা বলেন, প্রকাশিত নিউজে কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা, মেসেজ দেখানো এগুলো আসলে ভিত্তিহীন। আমাদের জানা মতে এ রকম কিছু নেই।

নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়, অ’পহরণের অ’ভিযানে তিনটি দল কাজ করছিল। একটি দল ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালককে অ’পহরণের জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এই দলের ব্যবহৃত চারটি নম্বর এয়ারপোর্ট ও জোয়ার সাহারা এলাকায় চালু করা হয়। আরেকটি দল হোটেল রূপসী বাংলা বা শেরাটন থেকে ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করছিল এবং অ’পহরণকারী টিমকে ইলিয়াস আলীর গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করছিল। তৃতীয় আরেকটি দল ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার বা এনএমসি থেকে অ’পহরণকারী টিমকে সার্বক্ষণিক মোবাইল মনিটরিং সুবিধা প্রদান করছিল।

এসবের পরই ত’দন্তকারীরা নিশ্চিত হন যে, এই অ’পহরণের সঙ্গে স’রকারি কোনো সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে তখনও তারা নিশ্চিত ছিলেন না ঠিক কারা এই অ’পহরণ করেছিলেন। র‌্যা’ব-১ নথিতে লিখে, ২০১২ সালে বাংলাদেশে একই সঙ্গে গো’য়েন্দা কাজ পরিচালনা, গ্রে’প্তার ও এনএমসি’র সহায়তা পাওয়ার ক্ষমতা ছিল শুধুমাত্র র‍্যা’ব ও ডি’বি পুলিশের। ত’দন্তকারীরা তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে খোঁজেন অ’পহরণের সময় এনএমসিতে কে বা কারা অবস্থান করছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ঘটনার সঙ্গে র‍্যা’ব’র ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের জ’ড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে এ সংক্রান্ত নথিপত্রও পাওয়ার দাবি করে এই অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

নেত্র নিউজের এই তথ্য সম্পর্কে র‌্যা’ব কর্মকর্তা মঈন বলেন, এ বি’ষয়ে নি’খোঁজ এই বিএনপি নেতার স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর গণমাধ্যমকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, র‌্যা’ব তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার স্বামীকে খুঁজেছে। চেষ্টা করেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের মন্তব্যের প্রভাবে তিনি হয়তো বলে থাকতে পারেন। তিনি যখনই এসেছেন তাকে সবসময়ই র‌্যা’ব’র পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হয়েছে। নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়, ঘটনার সময় র‍্যা’বের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের দুই কর্মকর্তা এনএমসিতে ছিলেন। তাদের একজন ১৭ই এপ্রিল রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এনএমসিতে যান এবং রাত ১১টা ১২ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে যান। আরেকজন ১৮ই এপ্রিল রাত ১টা ৪০ মিনিটে এনএমসিতে যান এবং রাত ৩টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে যান।

সে সময় র‍্যা’ব’র ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে কর্মরত দুই কর্মকর্তার এনএমসিতে অবস্থান থেকে ধারণা করা যায় যে, তারা ইলিয়াস আলীকে অ’পহরণের “অ’ভিযানে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। যদিও তারা ইলিয়াস আলীর অ’পহরণের সঙ্গে তাদের জ’ড়িত থাকার অ’ভিযোগটি অস্বীকার করেন।

ইলিয়াস আলীকে অ’পহরণের মাত্র কয়েকদিন আগেই সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমেদ দিনার ও জুনেদ আহম’দকে গু’ম করে উত্তরায় অবস্থিত র‍্যা’ব’র টাস্কফোর্স ফর ইন্টারো’গেশন বা টিএফআই সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। টিএফআই সেলে দিনার ও জুনেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ইলিয়াস আলীকে অ’পহরণের পরিকল্পনাটি সাজানো হয়। র‌্যা’ব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, অনলাইন পোর্টালটি তাদের যে ভিডিও দেখিয়েছেন এবং এখানে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো একদম ভিত্তিহীন। তারা হয়তো যোগ-বিয়োগ করে এ ধরনের নিউজ করেছেন। এখানে ইনফরমেটিভ হিসেবে কিছু পাওয়া যায়নি। এগুলো ডিজিএফআই সদর দপ্তরে অবস্থিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) সবাই জানে।

অ’ভিযোগের বি’ষয়ে সে সময়কার র‌্যা’বের ইন্টেলিজেন্স উইংগের প্রধান বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান নেত্র নিউজকে বলেছেন, কেউ একজন ভুয়া ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছে। গো’য়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা এই অ’পহরণের সঙ্গে জ’ড়িত ছিলেন না। বরং, তাদের দেয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যা’ব ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্য ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ কয়েকটি অ’ভিযান চা’লিয়েছে। তিনি আরও জানান, আমি দুনিয়ার কোথাও নিজ চোখে ইলিয়াস আলীকে দেখিনি। অতএব, বিমানে তার উপর নজরদারি করার প্রশ্নই আসে না। এ র‌্যা’ব কর্মকর্তা আল মঈন মানবজমিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কাউকে খুঁজে পাওয়া না গেলে ভি’কটিম পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। যিনি হা’রিয়ে গেছেন তাকে খুঁজে বের করতে যা যা প্রয়োজন সেটা কিন্তু আমরা করছি। একই ভাবে নি’খোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী যেভাবে স’ন্দেহ পোষণ করেছেন এবং যখন যেটা বলেছেন র‌্যা’ব কিন্তু তাকে সেভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন পর্যন্ত যদি এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায় বা আসে এবং পরিবার থেকে বলা হয় আমরা কিন্তু সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সুইডেন-ভিত্তিক অনলাইন পোর্টালে হওয়া নিউজের বি’ষয়ে র‌্যা’ব কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যা’ব’র এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বি’ষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণত তথ্য, পররাষ্ট্র অথবা স্ব’রা’ষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে থাকে। এগুলো তারা কানেকটেড করে নিউজ করেছেন। তারা যেভাবে যোগ-বিয়োগ করে নিউজ করেছে এভাবে করার কিছু নেই। এই পোর্টালটি নিয়মিত কিছু না কিছু প্রকাশ করে যাচ্ছে। তাদের করা এই নিউজটি যদি তারা দেশের ভেতরে থেকে প্রকাশ করতেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বি’রুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। বিদেশে বসে এ ধরনের নিউজ করলে অনেক ক্ষেত্রে এ বি’ষয়ে কিছু করার থাকে না। সংশ্লিষ্ট ম’ন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেক্ষাপটগুলো তুলে ধরে জবাব দেয়া হয়। সুত্রঃ মানবজমিন