সব
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করার পর যেখানে আনন্দ হওয়ার কথা, সেখানে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দলিত জনগোষ্ঠীর জয় দাসের পরিবার। কিভাবে ভর্তি হবে, কিভাবে চলবে পড়াশোনার খরচ – এমন চিন্তায় দিন পার করছে জয়ের পরিবার।
খুলনা জেলার পাইকগাছার কপিলমুনির নাছিরপুর গ্রামের বিশ্বজিৎ দাসের ছেলে জয় দাস ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছেন। এর আগে জয় ২০১৯ সালে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে ২০২১ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
জয়ের বাবা বিশ্বজিৎ দাস কপিলমুনি বাজারের ফুটপাতে বসে বস্তা থেকে ব্যাগ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক মেয়ে মেঘলা দাস সহচরী বিদ্যামন্দিরের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা বিশ্বজিৎ ফুটপাতের ফেরীওয়ালা হলেও তার আশা, ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা শিখিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা। মাত্র ২ শতক জমির ওপর বসত-ভিটাই তাদের একমাত্র সম্বল।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হিসেবে পুরনো বস্তা থেকে ব্যাগ তৈরি করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। চরম অর্থ কষ্টে শৈশবে নিজের পড়ালেখা না হলেও শিক্ষার প্রতি চরম অনুরাগ থেকেই ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন তিনি।
সমাজে নীচু শ্রেণির মানুষ হিসেবে শৈশব থেকে অনেক বঞ্চনা সহ্য করেই টিকে রয়েছেন তবে, এজন্য কোনো আক্ষেপ নেই তার। ছেলে ডাক্তার হয়ে একদিন সমাজে পিছিয়েপড়াদের চিকিৎসা সেবা করবে। এমন সম্ভাবনায় ভর করে পুলকিত তিনি, কিন্তু বাঁধ সেধেছে সেই অর্থনৈতিক দীনতা।
সম্প্রতি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নিজ মায়ের দু’বার অপারেশনসহ চিকিৎসাখরচ বহনে জীবনের সব সঞ্চয় ব্যয় করেও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ছেলের ভর্তি থেকে শুরু করে পড়ালেখার খরচ বহন করতে শুরুতেই দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। তার ভর্তির পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সহযোগিতা কামনা করেন বিশ্বজিৎ দাস।
জয় দাস জানান, এইচএসসির পর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিতে তাকে বহুকষ্টে ডিএমসি স্কলার্সে কোচিং করতে হয়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময় বাবার কাজে সহযোগিতার পর রাত ১২টার পর মূলত পড়তে বসতে হতো। আজকের সফলতায় তিনি তার বাবা বিশ্বজিৎ দাস, মা মালতী দাসের পাশাপাশি স্কুল ও কলেজ শিক্ষক, কোচিং শিক্ষক, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ মো: হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, ছাত্র হিসেবে জয় প্রচণ্ড মেধাবী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাবা-মায়ের সম্মান রেখেছেন। তিনি জয়ের ভর্তিসহ পড়ালেখার ব্যয়ভার বহনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।