‘সারাদিন রোজা, ইফতার শেষে আমাকে মেরো’ এমন আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা হলো না যুবকের

| আপডেট :  ৮ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৯ অপরাহ্ণ

‘আমি রোজা রেখেছি, একটু পর ইফতার করবো। বেশি ক্লান্ত লাগছে, ইফতার শেষ করলেই তোমরা আমায় মেরো (প্রহার করো)।’ এমন আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা হলো না যুবক মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদের (৩৮)। ইফতারি কেনার সময় মোরশেদকে জনসম্মুখে পি’টিয়ে ও কু’পিয়ে হ’’ত্যা করলো দু’র্বৃত্তরা।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর চেরাংঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আর রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিওতে তার মৃ’ত্যু হয়। তিনি এলাকায় ‘অন্যায়ের প্র’তিবাদকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মোরশেদ পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃ’ত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে।

নি’হতের ভাই জয়নাল আবেদীন, আইনজীবী জাহেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ভাই মোরশেদ ইফতারি কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠীর অন্তত ১৫-২০ জন লোক লো’হার র’ড, ছু’রি ও লা’ঠি নিয়ে মোরশেদের উপর হামলে পড়ে। অকস্মাৎ হা’মলা ও রোজায় ক্লান্ত মোরশেদ হতবিহবল হয়ে মাটিতে লু’টিয়ে পড়ে। ঘটনা প্রত্যক্ষ করা অনেকে জানিয়েছেন, তখন তিনি (মোরশেদ)- হা’মলাকারীদের বলছিলেন, সারাদিনের রোজায় বেশি ক্লান্ত- মা’রতে চাইলে ইফতারের পর মারিও। রোজায় ক্লান্ত, ইফতারের সময় দেওয়ার আকুতিতেও হা’মলাকারীদের মন গলেনি।

তারা মোরশেদকে মাটিতে ফে’লে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রায় ২০মিনিট উপর্যুপরি আ’ঘাতের পর চলে যায়। হা’মলাকারীরা স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত অ’পরাধী হওয়ায় কেউ তাদের বাঁ’ধা দিতে আসেনি।পরে স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আ’শঙ্কাজনক হলে আইসিওতে স্থানান্তর করার পর সেখানকার চিকিৎসকরা রাত ৮টার দিকে তাকে মৃ’ত ঘোষণা করেন।

মোরশেদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, স’রকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিলেন মোরশেদের পরিবার। সেই সেচ প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হা’মলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে মোর্শেদ আলীর বি’রোধ চলছিল। হা’মলাকারীরা চাষিদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনাকারীদের পানির পাম্পের পাশে জো’রপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো বা চলমান প্রকল্প দ’খল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বা’ধা দেন। এ নিয়ে উভ’য় পক্ষের মধ্যে বি’বাদ চলে আসছিলো।

এদিকে, কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজারা পাওয়ার জন্য মোরশেদের পরিবার আবারো আবেদন করে। এতে ক্ষি’প্ত হয়ে উঠে প্রতিপক্ষ।নি’হতের স্বজনদের অ’ভিযোগ, মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ হা’মলার মূল নির্দেশদাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল।

অ’ভিযোগের বি’ষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আলাল, আবদুল মালেকসহ অন্য অ’ভিযুক্তদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ঘটনার পর থেকে অ’ভিযুক্ত সবার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, খবর পেয়ে সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের পৃথক টীম। ম’রদেহ ম’য়নাত’দন্তের জন্য ম’র্গে পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জ’ড়িতদের ধরতে অ’ভিযান শুরু করেছে। ঘটনায় যারাই জ’ড়িত থাকুক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।