মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
সারাদেশ: ইউপি সদস্য সাজু মিয়া। ৩৮ বছর ধরে বাপ-দাদার রয়েছে হোটেল ব্যবসা। ইউপি সদস্য হয়েও ছাড়তে পারেননি বাপ-দাদার দীর্ঘদিনের এই ব্যবসা। তার এই ছোট ব্যবসাকে ঘিরে সাতটি পরিবারের সংসার চলে। এছাড়াও দরিদ্র এবং ক্ষুধার্ত মানুষ এখানে বিনা পয়সায় খেতে পারে।
সপ্তাহের মাত্র ২দিন খোলা থাকে সাজু মিয়ার এই হোটেল। কারণ শনিবার ও মঙ্গলবার গাইবান্ধার ফুলছড়িতে সবচেয়ে বড় হাটবার। উপজেলা পরিষদের পেছনে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত সাজু মিয়ার হোটেল। টেবিলের ওপর বিভিন্ন রকমের খাবার সাজানো- ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সবজি, রসমালাই, মিষ্টি, জিলাপি, পেয়াজু, পুড়ি, দই। চেয়ারে বসে আছেন সাজু মিয়া। তার হোটেলে রয়েছে ৭জন শ্রমিক। তার মধ্যে একজন ফুলছড়ি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান কবির। সে সারাদিনের পারিশ্রমিক পায় ৩৫০ টাকা। রায়হানের বাবা রফিকুল ইসলাম অনেক আগেই মারা গেছেন। মা আলপনা বেগম (গৃহিণী), বড় ভাই আলী রাজ ঢাকায় কাজ করে পোশাক শ্রমিক হিসেবে। একমাত্র বোন বৃষ্টি বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে শুধু মা আর রায়হান। বড় ভাই মাঝেমধ্যে টাকা দিলেও বেশিরভাগ সময় দেয় না। তাই সংসারের দায়িত্ব পড়েছে রায়হানের ওপর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাজু মিয়ার হোটেলে এলাকার লোকজন টাকা দিয়েই খায়। তবে দূর-দূরান্ত থেকে হাটে এসে অনেকে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে এবং তাদের কাছে টাকা-পয়সা না থাকলে সাজু মিয়া তাদের বিনা পয়সায় খাওয়ান। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
তিস্তামুখঘাটের বাসিন্দা বিধবা ফিরোজা বেগম (৬৫) প্লেট, গ্লাসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ধোয়ার কাজ করে পারিশ্রমিক পান ২০০ টাকা। তা দিয়ে চলে একার সংসার। রশিদা বেগম, সলিম মিয়াও কাজ করেন এ হোটেলে।
সাজু মিয়ার (৪৫) বাড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে। ৫ জানুয়ারির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৫৭ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, ৩৮ বছর ধরে এ হোটেল চালু আছে। হোটেল চালাতে গিয়ে পরিষদের কাজে কোনো সমস্যা হয় না। বরং কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ এলে বা খেতে চাইলে বিনা পয়সায় তাদের খেতে দিচ্ছেন। যাতায়াত ভাড়া না থাকলে তাও দিচ্ছেন।
গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, তার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাজু মিয়ার একটি খাবার হোটেল আছে। সপ্তাহে দু’দিন হোটেল ব্যবসাটিই তার একমাত্র জীবিকা নির্বাহের সহায়ক। এ ব্যবসার পাশাপাশি গ্রাম্য বিচার, সালিশ, ভিজিএফ, বয়স্ক, বিধবাভাতাসহ অন্যান্য কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। তার এ দোকানে কাজ করে সাতটি পরিবার খেয়েপরে বেঁচে আছে।