মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
সারাদেশ: শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে হৃদয় মন্ডল এর সহকর্মী ও তার পরিচিতজনেরা জানিয়েছেন, হৃদয় মন্ডলকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করে সেটি রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব তৎপরতা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানিয়েছেন, কোচিং করানো এক ব্যক্তি তার ছাত্রদের ব্যবহার করেছে হৃদয় মন্ডলকে ফাসাতে। আর সে কারণেই বিজ্ঞান ক্লাসে এক ছাত্র বারবার একই ধরনের প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং গোপনে সেটি রেকর্ড করা হচ্ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্ররা হৃদয় মন্ডল এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনে আন্দোলন করেছে, শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাসে যে কথোপকথন এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগের কোনো মিল নেই।
বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘হৃদয় মণ্ডল একজন নিরীহ মানুষ। প্রায় ২১ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করেন। এর আগে কখনোই তার বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনো অভিযোগ শুনিনি।’
মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমেদ বলেন, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। শিক্ষক ও ছাত্রদের কথোপকথন পূর্বপরিকল্পিতভাবে রেকর্ড করা হয়েছে, তা বোঝা গেছে। এর বেশি বলার মতো আপাতত কিছু নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের শ্রেণিশিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ওই ক্লাসে পাঠানো হয়। তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন। আলোচনার সময় গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। সেই অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। হৃদয় মণ্ডল ধর্মকে ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
পরে কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করলে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সদর থানা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর পুলিশ হৃদয় মণ্ডলকে আটক করে। এরপর মামলা করা হয়। সেই মামলায় হৃদয় মণ্ডল ১৭ দিন ধরে কারাগারে আছেন।