৯০০ কোটি টাকা চাঁদা ধরা আছে বেগুন লেবু তরমুজের দামে

| আপডেট :  ৭ এপ্রিল ২০২২, ০৯:২৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ এপ্রিল ২০২২, ০৯:২৫ অপরাহ্ণ

বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পরও পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি থামছে না৷ খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেও এই চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ৷ আর এই চাঁদার ভার শেষ পর্যন্ত বইতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের৷

এই কারণেই তরমুজ ঢাকায় বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়, বেগুনের কেজি ১২০ টাকা আর লেবু হয় ৬০ টাকা বলে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণশ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. হানিফ খোকন৷ চাঁদা মেটাতে গিয়ে পণ্য পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে যায়৷ সাতক্ষীরা থেকে একটি মাছের ট্রাক চট্টগ্রাম রিয়াজউদ্দিন বাজারে যেতে তিন-চার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়৷ পঁচনশীল দ্রব্য হলে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যায়৷ যেমন চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে সকাল সাতটার মধ্যে মাছ নিয়ে যেতে না পারলে সেই মাছ বিক্রি করা সম্ভব নয়৷ ঢাকার কারওয়ান বাজারেও তাই৷ মাছ, শাকসবজি সকাল সাতটার মধ্যে নিয়ে আসতে না পারলে আর উপায় নাই৷

আন্তঃজেলা ট্রাক চালক মেহাম্মদ নিয়ামত আলী জানান, প্রতিটি ট্রিপে নানা পর্যায়ে চাঁদা দেয়া ছাড়া মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে হয়৷ তিনি বলেন,‘‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় একটি ট্রাক পণ্য নিয়ে এলে চার-পাঁচ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়৷ এর মধ্যে মালিক- শ্রমিক ইউনিয়ন, পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালীরা রয়েছেন৷ এক ট্রিপে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়৷ আর পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিতে হয় দুই হাজার টাকা ৷ এজন্য তারা আমাদের কার্ড বা টোকেন দেয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন ভাড়া ঠিক করি তার মধ্যে এই চাঁদার টাকা ধরেই ভাড়া ঠিক করি৷ ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়৷ আর এই কারণেশাক-সবজি, মাছ বা কাঁচামালের দামও বেড়ে যায়৷”

পণ্য পরিবহন ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব জানান,‘‘পুলিশের কেন্দ্রীয় চাঁদা ছাড়াও হাইওয়ে পুলিশকে আলাদাভাবে চাঁদা দিতে হয়৷ বিভিন্ন স্পটে নানা অজুহাতে ট্রাক দাঁড় করিয়ে পুলিশ চাঁদা নেয়৷ এর বাইরে এখন পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, ফেরির সিরিয়াল পেতে ফেরির লোজনকে চাঁদা দিতে হয়৷ চাঁদা না দিয়ে আমাদের উপায় নেই৷’’অবশ্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের ৩০টাকা করে মোট ৬০ টাকা করে চাঁদা আদায় বৈধ বলে দাবি করেন তিনি৷

একাধিক সূত্র জানায়, এখানে একটি অশুভ আঁতাতও আছে৷ ফিটনেসহীন বা চলাচলের অনুপযোগী ট্রাক পুলিশের সাথে সমঝোতা করে পণ্য পরিবহণ করে৷ তারা মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করে৷ এই কার্ড তাদের “অবৈধতার বৈধতা”৷ এটা সারাদেশেই তাদের পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়৷

বাংলাদেশে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের মোট সংখ্যা প্রায় তিন লাখ৷ প্রতিটি ট্রাক যদি ট্রিপ প্রতি দুই হাজার টাকা করেও চাঁদা দেয় তাহলে মোট চাঁদা আদায় হয় ৬০ কোটি টাকা৷ যদি দুই দিনে একটি ট্রিপ ধরা হয় তাহলে মাসে আদায় হয় কমপক্ষে ৯০০ কোটি টাকা৷ এই পরিমাণ চাঁদা অবিশ্বাস্য কী না জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা হানিফ খোকন বলেন,‘‘মোটেও অবিশ্বাস্য নয়৷ আরো অনেক খাতে চাঁদা আদায় হয়৷ এখন মৃত মানুষের জন্যও চাঁদা নেয়া শুরু হয়েছে৷’’

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি( মিডিয়া এন্ড প্ল্যানিং) হায়দার আলি খান বলেন, ‘‘চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নিই৷ আর কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও আমরা ব্যবস্থা নিই৷ ৯৯৯-এ অভিযোগ করা যায়৷ হাইওয়ে পুলিশ ফেসবুকে প্রচার করেছে, নম্বর দেয়া আছে৷ পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও প্রচার করা হচ্ছে, নম্বরগুলোতে অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো আমাদের জানাতে হবে৷ জেলার এসপি আছেন, রেঞ্জ ডিআইজি সাহেব আছেন, হাইওয়ে পুলিশের আলাদা ইউনিট আছে সেখানে অভিযোগ করতে পারেন৷” আর মাসিক চাঁদার কার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”আমরা এই অভিযোগ অনুসন্ধান করে দেখছি৷’’

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী খান বলেন,‘‘আমরা সব জায়গায়ই অভিযোগ দিয়েছি৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ দিয়েছি৷ আর কার কাছে দেব?’’

তার অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ছাড়াও এখন সিটি কর্পোরেশন চাঁদা নেয়া শুরু করেছে৷ হাইওয়েতে ট্রাক দাঁড় করিয়ে চাঁদা নেয়া হয়৷’’
তবে মালিক সমিতির চাঁদার প্রসঙ্গ তুলতে তিনি বলেন, ‘‘এটা এখন নেয়া বন্ধ আছে৷’’ সূত্রঃ ডয়চে ভেলে