চক্রের স্মার্ট সদস্যদের ফাঁদে ৪৪ নার্স

| আপডেট :  ৪ এপ্রিল ২০২২, ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৪ এপ্রিল ২০২২, ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

চ’ক্রের সদস্যরা দেখতে স্মার্ট। পরনে থাকে ফরমাল পোশাক। কথা বলে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে। মানুষের সঙ্গে দ্রুত সখ্য গড়ে তোলার কৌশলে পারদর্শী তারা। পরিচয় দেয় বিভিন্ন স’রকারি অফিসের বড় কর্তা হিসেবে। স’রকারি-বেস’রকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে তাদের আনাগোনা বেশি থাকে। সেখানেই চ’ক্রের সদস্যরা নিজ থেকে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হয়। চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়।

সখ্য গড়ে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। তারপর কৌশলে বিভিন্ন খরচের খাত দেখিয়ে টাকা দাবি করে। চাকরিপ্রার্থীরাও চ’ক্রের সদস্যদের প্রলোভনে প্রভাবিত হয়ে টাকার লেনদেন করে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্রসহ যাবতীয় সবকিছুই তারা চাকরিপ্রার্থীদের সরবরাহ করে। কিন্তু প্রার্থীরা চাকরিতে যোগদানের সময় আসল র’হস্য বের হয়ে আসে। সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিয়োগপত্র দাখিল করলে সেটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। ততক্ষণে চ’ক্রের সদস্যরা চম্পট দেয়।

চলতি বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে চ’ক্রটি বে’পরোয়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন কৌশলে তারা চাকরিপ্রার্থী ৪৪ জন নার্সের সঙ্গে পরিচিত ও পরে সখ্য গড়ে তুলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অ’ভিযোগ উঠেছে। এসব নার্সকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে নিশ্চিত চাকরি দেয়ার কথা বলে তারা বিভিন্ন সময় টাকা নিয়েছে। পরে ভুয়া নিয়োগপত্র সরবরাহ করেছে। কিন্তু নার্সরা ওই নিয়োগপত্র নিয়ে হাসপাতালে যোগদানের জন্য গেলে বিএসএমএমইউ কর্র্তৃপক্ষ সেটি গ্রহণ না করে নিয়োগপত্রগুলো ভুয়া বলে জানান। পরে নার্সরা বুঝতে পারেন তারা প্র’তারক চ’ক্রের ফাঁ’দে পড়েছেন।

ভু’ক্তভোগী নার্সরা প্র’তারিত হয়ে পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অ’ভিযোগ করেছেন। শাহবাগ থানায় সাদিয়া খাতুন নামের এক নারীর করা মা’মলায় বিশেষ অ’ভিযান চা’লিয়ে চ’ক্রের দুই সদস্যকে গ্রে’প্তার করেছে ঢাকা মহানগর গো’য়েন্দা পুলিশের (ডি’বি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রা’ইম বিভাগ। উপ-কমিশনার মোহাম্ম’দ তারেক বিন রাশেদের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে অর্গানাইজড ক্রা’ইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হকের নেতৃত্বে অ’ভিযান পরিচালনা করা হয়।

ওই অ’ভিযানে শনিবার বিকালে বাংলা মোটরের রুপায়ন ট্রেড সেন্টার ও ফার্মগেট এলাকা থেকে এমরান হোসেন (৪১) ও আহম্ম’দ উল্লাহ ফয়সাল (২৭)কে গ্রে’প্তার করা হয়। এমরানের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সাতবাড়িয়া এলাকায়। সে ওই এলাকার মৃ’ত ইব্রাহিম ও মাসুদা বেগম দম্পতির ছেলে। আর গ্রে’প্তার ফয়সাল চাঁদপুরের সোবহানপুর এলাকার রহমত উল্লাহ শেখ ও আসমা বেগমের ছেলে। গ্রে’প্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভুয়া নার্স নিয়োগপত্রের ফটোকপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে দেড় লাখ টাকার রসিদ উ’দ্ধার করা হয়েছে।

ভু’ক্তভোগী সাদিয়া খাতুন শাহবাগ থানার মা’মলায় উল্লেখ করেছেন, তিনি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে বিএসএমএমইউতে সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে এমরান হোসেন ওরফে মো. কাইয়ুম হোসেন ওরফে ইমন হাসান রুবেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে তখন নিজেকে ওই বিএসএমএমইউ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগে কর্মরত আছে বলে পরিচয় দেয়।

পরে তার মোবাইল নম্বর থেকে সাদিয়ার স্বামীর মোবাইল নম্বরে জানায় বিএসএমএমইউতে সাদিয়াকে চাকরি দিতে পারবে। এ জন্য তাকে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। তার কথা বিশ্বাস করে সাদিয়া চলতি বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি ৩৫ হাজার, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার, ২০শে ফেব্রুয়ারি আরও ১৫ হাজার টাকা দেন।

এ ভাবে তিনি সর্বমোট দেড় লাখ টাকা এমরান হোসেন নামের ওই ব্যক্তিকে দেন। সেই টাকা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে এমন স্বাক্ষর করা রিসিট প্রদান করে এবং এর সঙ্গে নিয়োগপত্রের একটি ফটোকপিও সাদিয়াকে দেয় এমরান। পরে সাদিয়া ওই নিয়োগপত্র নিয়ে হাসপাতালটির রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয় নিয়োগপত্রটি সঠিক নয় ভুয়া। পরে সাদিয়া এমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

ডি’বি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রা’ইমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, যেসব চাকরিপ্রার্থী টাকা দিয়ে চাকরি পেতে চায় তাদের নিজেদেরও দুর্বলতা আছে। চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে। আমরা মানুষকে সবসময় সচেতন হতে বলি। চাকরির জন্য কখনো টাকা লেনদেন করা যাবে না। এটা একটা অ’পরাধও বটে। কিন্তু মানুষ নিজেই প্র’তারক চ’ক্রের কাছে ধরা দেয়। না বুঝে তাদের ফাঁ’দে পড়ে।

তিনি বলেন, ভু’ক্তভোগী সাদিয়া আক্তারের অ’ভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা ওই দুই প্র’তারককে গ্রে’প্তার করেছি। এটি একটি চ’ক্রের কাজ। চ’ক্রে আরও অনেক সদস্য আছে বলে ধারণা করছি। চ’ক্রের বাকি সদস্যদের গ্রে’প্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া রি’মান্ড আবেদন করেছি। রি’মান্ডে এনে তাদের আরও জি’জ্ঞাসাবাদ করলে ঠিক কতজনের সঙ্গে তারা এরকম প্র’তারণা করেছে আর কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা জানা যাবে।