বুক-মাথার ওপর চে’পে বসে এএসপি’র মৃত্যু নিশ্চিত করেন আসামিরা

| আপডেট :  ৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন মা’নসিকভাবে বি’পর্যস্ত ছিলেন। যে কোনো আ’ঘাতে তার মৃ’ত্যু ঘটার আ’শঙ্কা ছিল। এ কথা জানার পরও চিকিৎসার নামে তাকে মাইন্ড এইড হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ রুমে ঢুকিয়ে অপেশাদার লোক দিয়ে ম্যাট্রেসের ও’পর ফে’লে দুই হাত বেঁ’ধে নয়জন আ’সামি মিলে বুক, ঘাড় ও মাথায় আ’ঘাত করেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আরিফ মাহমুদ জয়। তারা সেদিন এএসপি আনিসুলের মাথার ও’পর চে’পে বসে তার মৃ’ত্যু নিশ্চিত করেছিল।

স’রকার অনুমোদিত কোনো হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে এএসপি আনিসুলকে জাতীয় মা’নসিক স্বা’স্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুন অর্থ উপার্জনের অসৎ উদ্দেশ্যে, ইচ্ছাকৃতভাবে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠান। দৈহিক জ’খম বা আ’ঘাত বি’পজ্জনক এবং মৃ’ত্যু ঘটাতে পারে বা মৃ’ত্যুর ঝুঁ’কি রয়েছে, তা জানতেন ডা. মামুন।

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে এএসপি আনিসুলের হ’’ত্যাকাণ্ডে জ’ড়িত থাকার অ’ভিযোগে ডা. মামুনসহ ১৫ জনের বি’রুদ্ধে দেওয়া অ’ভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এসব কথা উল্লেখ করেছেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানা পরিদর্শক (অপারেশন) ফারুক মোল্লা। গত ৯ মার্চ তিনি এ অ’ভিযোগপত্র দেন।

কোনোভাবে হ’’ত্যার দায় এড়াতে পারেন না ডা. মামুনঃ মা’মলার চার্জশিটে বলা হয়, আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালটি কেবল অ’বৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার জন্য মালিকপক্ষ স্বা’স্থ্য অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার অনুমতি নেয়নি। সেখানে অত্যাবশ্যকীয় কোনো জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জম এবং সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। মাইন্ড এইড হাসপাতালটির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন আগে থেকেই জানতেন। এরপরও তিনি সেখানে নিয়মিত চেম্বার করতেন এবং স’রকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রো’গীদের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিতেন।

চার্জশিটে বলা হয়, দৈহিক জ’খম বা আ’ঘাত মৃ’ত্যু ঘটাতে পারে বা মৃ’ত্যুর ঝুঁ’কি রয়েছে মর্মে চিকিৎসক হিসেবে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানতেন। সুতরাং এ হ’’ত্যার দায় তিনি কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।

মধ্যযুগীয় কায়দায় আ’ঘাত করা হয় এএসপি আনিসুলকেঃ মা’মলার চার্জশিটে ত’দন্ত কর্মকর্তা ফারুক মোল্লা আরও উল্লেখ করেন, আ’সামি আরিফ মাহমুদ জয় ও তানিফ মোল্লা আ’দালতে দেওয়া স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দিতে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশ করেছেন। ডা. মামুনের ইচ্ছেতেই ভু’ক্তভোগীকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠানো, রো’গী পাঠানোর বি’ষয়ে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের সিডিআর, ভি’কটিমকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় আ’ঘাত করা ও ম’রদেহ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে হৃদরো’গ হাসপাতালে বা অন্যত্র ভর্তি দেখিয়ে স্বাভাবিক মৃ’ত্যু হয়েছে মর্মে প্রচেষ্টা চা’লানো, এসব কার্যক্রম মা’মলার ঘটনায় সমর্থনযোগ্য সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচ্য। তাই ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন পেনাল কোড ৩০২/১০৯ ধারা মোতাবেক শা’স্তিযোগ্য অ’পরাধ সংঘটন করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে ত’দন্তে প্রমাণিত হয়।

আরিফের নেতৃত্বে সরাসরি হ’’ত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ৯ আ’সামিঃ মা’মলার চার্জশিটে ত’দন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আ’সামি আরিফ মাহমুদ জয়ের নেতৃত্বে এজাহারনামীয় আ’সামি মাসুদ খান (বাবুর্চি), সজীব চৌধুরী (ওয়ার্ড বয়), অসীম কুমার পাল (ওয়ার্ড বয়), তানিফ মোল্যা (ওয়ার্ড বয়), লিটন আহম্মেদ (দারোয়ান), জোবায়ের হোসেন (ওয়ার্ড বয়), তানভীর হাসান (ফার্মাসিস্ট) এবং সাইফুল ইসলাম পলা’শ (ওয়ার্ড বয়) চিকিৎসা দেওয়ার নামে ভি’কটিম আনিসুল করিমকে পি’টিয়ে হ’’ত্যা করেছেন, যা পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারা মোতাবেক শা’স্তিযোগ অ’পরাধ।

মাইন্ড এইড হাসপালে ছিল না কোনো মা’নসিক রো’গের চিকিৎসকঃ মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, মা’মলার আ’সামি মুহাম্ম’দ নিয়াজ মোর্শেদ ওরফে সোহাগ (মাইন্ড এইড হাসপাতালের এমডি) ও ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বেস’রকারি হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তারা মা’নসিক রো’গীর চিকিৎসক নন। অন্যদিকে আ’সামি ফাতেমা খাতুন ময়না বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র মনোরো’গ বি’ষয়ে একটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনিও মা’নসিক রো’গের চিকিৎসক নন। হাসপাতালের অন্য মালিকদের মধ্যে রেদোয়ান সাব্বির (কো-অর্ডিনেটর), সাজ্জাদ আমিন, সাখাওয়াত হোসেন কেউই মা’নসিক রো’গের চিকিৎসক নন।

মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্র’তারণাঃ ত’দন্ত কর্মকর্তা ফারুক মোল্লা চার্জশিটে বলেন, হাসপাতালের মালিকরা বিধিবহির্ভূতভাবে শুধু অ’বৈধ অর্থ উপার্জনের অভিপ্রায়ে মা’নসিক চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্র’তারণার মাধ্যমে মাইন্ড এইড নামক হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালটিতে অভিজ্ঞ কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিল না। তাছাড়া অ’বৈধ হাসপাতালটিতে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা নেই। সুতরাং অ’বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটির উল্লিখিত মালিকরা এ হ’’ত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারেন না। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার মাধ্যমে সংঘটিত হ’’ত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ত্বরান্বিত ও প্ররোচিত করেছেন, যা পেনাল কেডের ৩০২/১০৯ ধারায় শান্তিযোগ্য অ’পরাধ।

মা’মলার ত’দন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, তথ্য-উপাত্ত, জ’ব্দ আলামত, ম’য়নাত’দন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় আ’সামি আরিফ মাহমুদ জয় (৩৫), মাসুদ খান (৩৮), জোবায়ের হোসেন (১৯), তানিফ মোল্যা (২০), তানভির হাসান (১৮), সজীব চৌধুরি (২১), অসীম কুমার পাল (২৪), লিটন আহম্মেদ (১৮) ও সাইফুল ইসলাম পলা’শের (৩৫) বি’রুদ্ধে মা’মলার অ’পরাধ পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় এবং আ’সামি রেদোয়ান সাব্বির, ফাতেমা খাতুন ময়না (৪১), এজাহারনামীয় প’লাতক আ’সামি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাখাওয়াত হোসেন রেমন, সাজ্জাদ আমিন এবং ত’দন্তে প্রাপ্ত আ’সামি রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বি’রুদ্ধে মা’মলার অ’পরাধ পেনাল কোডের ৩০২/১০৯ ধারা মোতাবেক প্রাথমিকভাবে অ’ভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মা’মলার গ্রে’ফতার হওয়া অপর আ’সামি মুহাম্ম’দ নিয়াজ মোর্শেদ ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কা’রাগারে মা’রা যাওয়ায় মা’মলার দায় হতে তার অব্যাহতির আবেদন করা হয় চার্জশিটে।

২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনিসুল করিম শিপন রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সে সময় হাসপাতালে তাকে পি’টিয়ে হ’’ত্যার অ’ভিযোগ আনা হয়।

এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর আদাবর থানায় আনিসুল করিম শিপনের বাবা বীর মুক্তিযো’দ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ বা’দী হয়ে ১৫ জনকে আ’সামি করে হ’’ত্যা মা’মলা দা’য়ের করেন। মা’মলার দুই আ’সামি প’লাতক রয়েছেন। তারা হলেন- মো. সাখাওয়াত হোসেন ও সাজ্জাদ আমিন।

এ মা’মলার আ’সামি মাইন্ড এইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়না, মুহাম্মাদ নিয়াজ মার্শেদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন সেফ মো. মাসুদ, ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন, ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান, ওয়ার্ড বয় মো. তানিম মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, মো. লিটন আহাম্ম’দ, মো. সাইফুল ইসলাম পলা’শ কা’রাগারে আছেন।

অন্যদিকে মা’মলায় জাতীয় মা’নসিক স্বা’স্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জা’মিনে আছেন। এ মা’মলায় আ’সামি কিচেন সেফ মাসুদ খান, ওয়ার্ড বয় অসীম চন্দ্র পাল, মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, সজিব চৌধুরী, হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান ও ওয়ার্ড বয় মো. তানিম মোল্লা আ’দালতে স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দি দিয়েছেন।

মা’মলার বা’দী বীর মুক্তিযো’দ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমার ছেলে আনিসুল করিম শিপন হ’’ত্যা মা’মলায় ১৫ আ’সামির বি’রুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছে। মা’মলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, এ প্রত্যাশা করছি। আ’সামিদের শা’স্তি হলেই আমি শান্তি পাবো। সূত্রঃজাগো নিউজ