বাবা-মাকে হারিয়ে অসহায় সাকিমা ও সাবিদ যাকেই দেখছে, ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকছে

| আপডেট :  ২৩ মার্চ ২০২২, ০২:২৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ মার্চ ২০২২, ০২:২৯ অপরাহ্ণ

মা থেকেও নেই। মাসখানেক আগে তিনি সংসার ছেড়ে চলে গেছেন। মা চলে যাওয়ার পর সাকিমা আক্তার মারিয়া (৯) আর সাবিদ হাসানের (৬) বাবাই তাদের আগলে রাখছিলেন। সেই বাবাও এবার তাদের ছেড়ে চলে গেলেন। বাবার প্রস্থান সাময়িক কোনো বিরতি নয়। একেবারেই না–ফেরার দেশে গিয়েছেন তিনি। মা অন্যত্র চলে যাওয়ায় ও বাবা মা’রা যাওয়ায় সাকিমা-সাবিদের গন্তব্য তাই এবাড়ি–ওবাড়ি। যাকেই দেখছে, ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকছে। কিছু বলছে না।

প্রতিবেশীরা বলছেন, কত দিন এভাবে চলবে শি’শু দুটির। তাঁরাই–বা কত দিন ওদের দেখেশুনে রাখবেন। দরিদ্র বাবা তাদের জন্য কোনো সম্পদও রেখে যেতে পারেননি। শুধু রেখে গেছেন কিছু স্মৃ’তি, কিছু মায়া আর এনজিওর ২০ হাজার টাকার ঋ’ণের বোঝা।সাকিমা-সাবিদের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজে’লার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বড় ঘিঘাটি গ্রামে। তাদের বাবা আবদুল মজিদ একজন কৃষক ছিলেন। সম্প্রতি বাড়ির পাশে কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের লাউতলা এলাকায় একটি পরিবহনের টিকিট বিক্রির জন্য কাউন্টার খোলেন তিনি।

আবদুল মজিদের বড় ভাই আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ছোট ভাই মজিদের দিন কাটত খুবই ক’ষ্টে। দুই স’ন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে চলছিল সংসার। মাত্র ১০ শতক চাষের জমি ছিল তাঁর। কাউন্টার থেকে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করতে পারতেন। কখনো কখনো সেটিও হতো না। তবু সংসার চলে যাচ্ছিল। টিনের চালার একটি ঘরে বাস করতেন তাঁরা। মেয়ে সাকিমা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে আর ছেলে সাবিদ সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছিল।

আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে মজিদের স্ত্রী সবাইকে রেখে বাড়ি থেকে চলে যান। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তিনি অন্য এক যুবককে বিয়ে করেছেন। স্ত্রী যাওয়ার পর দুই স’ন্তানকে নিয়ে মজিদ একরকম পথে পথেই ঘুরতেন। দুশ্চিন্তায় দিন পার হতো তাঁর। ১৮ মার্চ সকালে ঘরে একা শুয়ে ছিলেন মজিদ। দুই স’ন্তান বাইরে খেলা করছিল।

এ সময় বুকের ব্য’থা উঠে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকেন মজিদ। প্রতিবেশী একজন এসে তাঁকে এভাবে দেখে চি’ৎকার দিলে অন্যরাও এগিয়ে আসেন। তাঁরা মজিদকে নিয়ে যান কালীগঞ্জ উপজে’লা স্বা’স্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ মার্চ সকালে তিনি মা’রা যান।

আবদুল মজিদের ভাই আজিজুল আরও বলেন, মজিদ সারাক্ষণ চিন্তিত থাকায় তাঁর স্ট্রোক হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা ধারণা করেছেন। তাঁর মৃ’ত্যুর পর সবচেয়ে বেশি অ’সহায় অবস্থায় আছে বাচ্চা দুটি। তাদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তারাও কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলছে না, শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে।

শি’শু দুটির চাচি লিপি খাতুন বলেন, বাবার মৃ’ত্যুর পর দুই দিন ধরে সাকিমা-সাবিদের দেখাশোনা তিনি করছেন। শি’শু দুটির নিজের বলে আর কিছু থাকল না। বাবার রেখে যাওয়া টিনের চা’লায় তারা একা থাকতে পারছে না।

ভাই আজিজুল ইসলাম জানান, শি’শু দুটির বাবা তাদের জন্য কোনো অর্থই রেখে যেতে পারেননি। উল্টো পরিবহনের কাউন্টার নির্মাণ করতে একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋ’ণ নিয়েছিলেন তিনি। সেই ঋ’ণ এই শি’শুদের পক্ষে শোধ করাও সম্ভব নয়।

কালীগঞ্জ উপজে’লার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবজে’ল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁরা চেষ্টা করবেন শি’শু দুটিকে সহযোগিতা করার। তবে শি’শু দুটি খুবই অ’সহায়। তাদের দেখার কেউ থাকল না। তারা কীভাবে বেড়ে উঠবে, সেটাই চিন্তার বি’ষয়। প্রথম আলো