সেই দুই কিশোরীর ‘নজিরবিহীন প্রেমে’ হতভম্ব পরিবার

| আপডেট :  ২২ মার্চ ২০২২, ০৪:৪০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ মার্চ ২০২২, ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ

ফেসবুকের মাধ্যমে দুই কিশোরীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই বছর ধরে চলে এই প্রেম। স্বশরীরে সাক্ষাৎও হয়েছে আসমা (ছদ্মনাম) ও নীরা (ছদ্মনাম) নামের এই দুই কিশোরীর। প্রেমের টানে দূরপথ পেরিয়ে আবারও একত্র হয়েছে এই দুই কিশোরী। দুই কিশোরীর প্রেমের এই বিরল কান্ডে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অবাক করা এই কান্ড দেখতে ভিড় করছে এলাকার উৎসুক জনতা।

সোমবার (২১ মার্চ) এমনই বিরল ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ময়থা গাছপাড়া গ্রামে।প্রেমের টানে ছুটে আসা একজনের বাড়ি (১৭) নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্বলক্ষিনারায়নপুর গ্রামে। আর নীরার বাড়ি (১৫) টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ময়থা গাছপাড়া গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, আসমার সঙ্গে নীরার প্রায় দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। সেই থেকেই ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের টানে তারা প্রায় দুই মাস আগে ঢাকার সাভারে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত্রীযাপন করে। এরপর সেখান থেকে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তারা সিরাজগঞ্জের চৌহালী গিয়ে রাত কাটায়। সেখানে স্থানীয়দের এই দুই কিশোরীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

একপর্যায়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দুই পরিবারের কাছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ রোববার (২০ মার্চ) আসমা ও নীরার ফোনে কথা হয়। এরপর সন্ধ্যায় আসমা টাঙ্গাইল শহরে আসলে নীরা তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এই দুই কিশোরী সংসার পাতার সিদ্ধান্তও নেয়। ওই রাতেই তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাদের দেখতে দলে দলে লোকজন গিয়ে ওই বাড়িতে ভিড় জমান। এমন পরিস্থিতিতে নীরার পরিবারও হতভম্ব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলছেন, ‘বাংলাদেশে সমলিঙ্গের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের এমন বিরল ঘটনা কখনও শুনিনি। এই দুই কিশোরীর অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার মতো না। এটা পাগলামি ছাড়া কিছু না। খুব দ্রুত দুইটি মেয়েকেই পৃথক করা প্রয়োজন। কিশোরীদের অপরিণত চিন্তা এবং অবান্তর সিন্ধান্তের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে তাদের স্বাভাবিক নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বিশেষভাবে প্রয়োজন।

নীরার বাবা আজাহার আলী বলেন, ‘আমি আঁখিকে দেড় মাস বয়সে পালতে এনেছি। ও আমার আদরের একমাত্র সন্তান। তার এমন কান্ডে আমি খবুই কষ্ট পেয়েছি। নোয়াখালীর ওই মেয়েটিকে তার বাড়িতে চলে যেতে বলছি- সে যাচ্ছে না। সে কিছুতেই নীরাকে ছাড়া যাবে না। পরে তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে তারা এখানে আসবে না বলে আমাকে জানায়। প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিপদে আছি।’

ময়থা গাছপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য সেকান্দার আলী স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নোয়াখালীর ওই মেয়েটি রোববার সন্ধ্যায় এসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দুই কিশোরীর দাবি- তারা কেউ কাউকে ছাড়া থাকবে না। তারা গার্মেন্টসে চাকরি করে একত্রে সারাজীবন কাটাবে বলে জানায়। এ ক্ষেত্রে আসমা নীরাকে স্বামী হিসেবে জীবন সঙ্গী করবে বলেও জানায়।

ওই দুই কিশোরী একাত্তর অনলাইনকে জানায় , ‘ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের তৈরি হয়। আমরা এখন কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্রয়োজনে আমরা বাড়ি ছেড়ে গার্মেন্টসে চাকরি করে দুইজনে সংসার করে খাবো।’

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেব বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালীতে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। মেয়েটির প্রকৃত অভিভাবকের খুঁজে পেলে তাদের হাতে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দেবো। আর তার পরিবার খুঁজে না পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

বাসাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। নোয়াখালীর ওই মেয়েটির পরিবারকে তারা বিষয়টি জানিয়েছে। মেয়েটির পরিবার আসলে তাকে ফিরিয়ে দিতে বলেছি।’