টাকার অভাবে সন্তানদের ডাক্তার দেখাতে পারেননি, ফার্মেসি থেকে কেনেন নাপা সিরাপ

| আপডেট :  ১৪ মার্চ ২০২২, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৪ মার্চ ২০২২, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

ইসমাইল হোসেন ও লিমা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান জন্মের তিনদিনের মা’থায় মা’রা যায়। সেই সন্তানকে হা’রানোর বেদনা ভুলিয়ে রেখেছিল পরবর্তী দুই সন্তান ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫)। কিন্তু তাদেরও শেষ রক্ষা হলো না। একসঙ্গে দুই সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় এই দম্পতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজে’লার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সিলেটের একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

আর লিমা বেগম কাজ করেন আশুগঞ্জের একটি চাল কলে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। টাকার অভাবে জ্বরে আ’ক্রান্ত দুই শি’শু সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পানেনি তারা। বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ এনে খাইয়েছিলেন মা লিমা বেগম। কিন্তু সেই সিরাপ খাওয়ানোর পরই অ’সুস্থ হয়ে পড়ে শি’শু ইয়াছিন ও মোরসালিন। সিরাপ খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাদের দুইজনকে চালের রুটি, খিচুড়ি এবং শুকনা বড়ই খাওয়ানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

দুই শি’শুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জ্বর থাকার কারণে গত ১০ মা’র্চ বিকেলে ছোট ছে’লে মোরসালিন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে মা লিমা বেগমকে। তখন মা জানায়, চাল কল থেকে কাজের টাকা পাওয়ার পর তাকে ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে। এখন ফার্মেসি থেকে সিরাপ এনে খাওয়াবে। পরে দুই শি’শুর দাদি লিলুফা বেগম বাড়ির পাশে সড়ক বাজারের মা ফার্মেসি থেকে এক বোতল নাপা সিরাপ কিনে আনেন। এরপর সেই সিরাপ আধা চামচ করে ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তারা বমি করতে থাকে।

কা’ন্নাজ’ড়িত কণ্ঠে দুই শি’শুর মা লিমা বেগম বলেন, রুটি-খিচুড়ি খাওয়ার পর আমা’র ছে’লে বলতেছে আম্মা আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিবা না? আমি তখন বলেছি ভালো ডাক্তারের কাছে নিতে পারব না, আমা’র কাছে এখন টাকা নেই। আপাতত দুই ভাইকে একটা নাপা সিরাপ এনে খাওয়াই। সিরাপ খাওয়ানোর ১৫-২০ মিনিট পর দুইজনই বমি করে। পরে উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর অক্সিজেন দিয়ে জে’লা সদর হাসপাতা’লে নিয়ে যেতে বলে।

আর সদর হাসপাতা’লে নেওয়ার পর ডাক্তার জানায়- আপনার ছে’লেরা সম্পূর্ণ সুস্থ। বাড়িতে নিয়ে ট’ক আর পানি খাওয়ান বেশি করে। পরে বাড়িতে আনার পথে একজন এবং বাড়িতে নেওয়ার পর আরেকজনের মৃ’ত্যু হয়। এ দিকে, নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শি’শুর মৃ’ত্যুর অ’ভিযোগ উঠার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন দুর্গাপুর গ্রামের সড়ক বাজারের মা ফার্মেসির স্বত্ত্বাধিকারী মো. মঈনউদ্দিন। রোববার (১৩ মা’র্চ) দুপুরে দুর্গাপুরের পার্শ্ববর্তী তাজপুর গ্রামে মঈনউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কাউকেই পাওয়া যায়নি।

ফার্মেসি পরিচালনার জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে ড্রা’গ লাইসেন্স নেওয়ার পাশাপাশি নূন্যতম সি-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট কোর্স করা একজন ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন হয়। তবে মা ফার্মেসিতে এগুলো ছিল কী’না সেই স’ম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জে’লা ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক (অ’তিরিক্ত দায়িত্ব) হোসাইন মো. ইম’রান ঢাকা পোস্ট’কে বলেন, আশুগঞ্জ উপজে’লায় মা ফার্মেসি নামে ১৭টি লাইসেন্স আছে। এখন এর মধ্যে দুর্গাপুরের মা ফার্মেসির লাইসেন্স আছে কী’না সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ মালিককে আম’রা পাইনি।

সেজন্য তার কাগজপত্র আছে কী’না সেটি যাচাই করতে পারছি না। এছাড়া কোনো ফার্মাসিস্ট ছিল কী’না সেটিও জানা যাচ্ছে না। তার সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত তার ফার্মেসির বৈধতা স’ম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। বর্তমানে দুর্গাপুর গ্রামের সড়ক বাজারে ৯টি ফার্মেসি আছে। এর মধ্যে কেবল তিনটি দোকান সরাসরি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওষুধের ওর্ডার দেন। বাকিরা কি’শোরগঞ্জের ভৈরব এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকারি ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনেন বলে জানা গেছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আশুগঞ্জ উপজে’লার সিনিয়র মেডিকেল প্রমোশন এক্সিকিউটিভ মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্ট বলেন, সব ফার্মেসির সঙ্গে আমাদের ব্যবসা নেই। মা ফার্মেসিও আমাদের কাছ থেকে ওষুধ নেয় না। আমাদের কাছ থেকে মাত্র ৩টি ফার্মেসি ওষুধের জন্য অর্ডার দেয়। বাকিরা ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকারি দোকানগুলো থেকে ওষুধ কিনতে পারে হয়তো।