মওদুদের পরামর্শে আত্মসমর্পণ করেননি হারিছ, নাম পাল্টে ১৪ বছর ছিলেন আত্মগোপনে

| আপডেট :  ৮ মার্চ ২০২২, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ মার্চ ২০২২, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

রহস্য কেটে গেছে। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সব ধরনের প্রমাণ প্রকাশ করেছে মানবজমিন। মানবজমিনের এই অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের পর দুনিয়াজুড়ে আলোচনায় হারিছ চৌধুরী। তিনি কীভাবে টানা ১৪ বছর আত্মগোপন করেছিলেন। কেউ কী জানতো না তার অবস্থান। জানলে প্রকাশ হয়নি কেন? কেন তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কেন আত্মসমর্পণ করেননি এমন নানা প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। গত ১৫ই জানুয়ারি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য প্রকাশ করে মানবজমিন।

তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে এক্সক্লুসিভ ওই রিপোর্ট প্রকাশ করেন মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ওই রিপোর্টে মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসা, ঢাকার বাইরে দাফন এসব তথ্য প্রকাশ করে মানবজমিন। ওই রিপোর্টের পর দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন হারিছ চৌধুরী।

সর্বশেষ রোববার মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী প্রকাশ করেন চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী রিপোর্ট ‘হারিছ নয়, মারা গেছেন মাহমুদুর রহমান’। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। অনেকে মানবজমিনের অনুসন্ধানের প্রশংসা করেছেন। একইসঙ্গে হারিছ চৌধুরীর আত্মগোপনে থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ছুড়েছেন। নেট দুনিয়ায় ভাইরাল এই রিপোর্টের পর মানবজমিনের অনুসন্ধানে আরও কিছু তথ্য এসেছে হারিছ চৌধুরী সম্পর্কে। নাম বদল করার কারণে তিনি ছিলেন সন্দেহের ঊর্ধ্বে। মাহমুদুর রহমান নামেই পরিচয় দিতেন। পান্থপথের যেখানটায় থাকতেন সেখানে তার পরিচয় ছিল অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর হিসেবে।

মানবজমিন জানতে পেরেছে, হারিছ চৌধুরী ওরফে মাহমুদুর রহমান ২০১৪ সনের জুলাই মাসে ওমরাহ ভিসা নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেন। কিন্তু কেন? এই তথ্য যাচাই করা যায়নি। তবে তার পাসপোর্টে ভিসা লাগানো ছিল। মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরী দু’বার আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিলেও তা পরে বদল করেছিলেন। প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাকে আত্মসমর্পণ না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার পরামর্শ ছিল, এটা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মানবজমিন অনুসন্ধানে আরও একটি তথ্য এসেছে। আত্মগোপনকালে তার সঙ্গে পরিবারের একমাত্র সদস্য তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং তার দেখভাল করতেন। তার ভাই সেলিম চৌধুরী খবর পেতেন আশিক চৌধুরীর মাধ্যমে।

মানবজমিনের অনুসন্ধানের পর হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে তৎপরতা: ওদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর প্রমাণ প্রকাশের পর হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু অফিসিয়ালি নিশ্চিত হতে এরইমধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। রিপোর্টের সূত্র ধরে তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। কবরস্থানে গিয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করার কথা ভাবছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ মোতাবেক সেটি করা হবে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরাও বলেছেন ডিএনএ টেস্ট করলে এটি খোলাসা হয়ে যাবে।

হারিছ চৌধুরীর তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে সিআইডি’র পুরাতন ও নতুন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) হায়দার আলী খান মানবজমিনকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যখন তদন্ত করেন তখন তিনি সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণাদি সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তদন্ত করতে গিয়ে যদি কোনো কিছুতে প্রতীয়মান হয় সাক্ষ্য প্রমাণ নিতে হবে। তবে তিনি সাক্ষ্য প্রমাণ নিবেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

এদিকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশে এখন হারিছ চৌধুরীর নাম আছে। মৃত ব্যক্তির নাম কেন রেড নোটিশে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে এখনো তদন্ত করছে সিআইডি। দুই সপ্তাহ আগেও সিআইডি এক প্রতিবেদনে বলেছে তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তিনি জীবিত না মৃত। যখনই সিআইডি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত করবে তিনি আর বেঁচে নাই।

তখন ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ সরানোর প্রক্রিয়া আমরা শুরু করবো। তার আগ পর্যন্ত রেড নোটিশে হারিছ চৌধুরীর নাম থাকবে। তিনি বলেন, মানবজমিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমাদের নজরে এসেছে। সেখানে তার মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাকে রিপোর্ট শেয়ার করা হয়েছে।