সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য পরামর্শ দেন যারা

| আপডেট :  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

করোনার মহামারীর সময় অসংখ্য ডাক্তার জীবন বাজি রেখে ফ্রন্টলাইনে থেকে দিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা। তবে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সক্রিয় ছিলেন অনেকে। তাঁদের কারণে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়েছেন, ঘরে বসেই পেয়েছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা পরামর্শ। এর জন্য কোনো অর্থকড়ি খরচ করতে হয়নি। সময়ের তারকা হয়ে ওঠা সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় কয়েকজন ডাক্তার সম্পর্কে জানাচ্ছেন ফরিদ উদ্দিন রনি

ডা. সাকলায়েন রাসেলঃ ডা. সাকলায়েন রাসেল রংপুরের মিঠাপুকুর থানার রুপসী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্যকাল কেটেছে রুপসী উচ্চবিদ্যালয়ে। এ কে উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে পরবর্তীতে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এমবিবিএস ভর্তি পরিক্ষায় জাতীয় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৬৭তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস এ ভর্তির সুযোগ পান। কর্মজীবনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্ডিয়াক ও ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে যোগদান করেন। সেখানে প্রায় ১১ বছর কাজ করার পর ২০১৭ সালে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটে তাঁর নেতৃত্বে ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ চালু হয়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। মানবসেবায় কাজ করেছেন বন্ধু গ্রুপ, এরিজ এইড, এরিজ স্কুল ও এরিজ ফাউন্ডেশনে। হেলথ ক্লাব নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও তিনি এনটিভি, মাইটিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর পাঁচটি স্বাস্থ্যবিষয়ক বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া নিজের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা পরামর্শ তুলে ধরছেন। জটিল সব রোগ থেকে বাঁচার খুঁটিনাটি জানতে পেরে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ডা. তাসনিম জারাঃ সাবলীল বাচনভঙ্গি আর তথ্যবহুল ঘরোয়া পদ্ধিতে বিজ্ঞানভিত্তিক মেডিকেল স্বাস্থ্যসেবার পরামর্শদানের জন্য ডা. তাসনিম জারা ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। করোনার মহামারীর সময় মানুষকে সহজে ঘরে বসে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য অনলাইনভিত্তিক মেডিকেল প্ল্যাটফর্ম ‘সহায়’ গড়ে তুলেছেন তিনি। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে নিয়মিত মানুষকে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছে তার এই ভিডিওগুলো দেখে।

ডা. তাসনিম জারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এভিডেন্স-বেজড মেডিসিনে স্নাতকোত্তর করছেন। বর্তমানে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজার এবং ইন্টেগ্রেটেড ফাউন্ডেশন অব মেডিকেল এডুকেশন কোর্সে কাজ করছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেনও তিনি। পাশাপাশি একজন পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল প্যাপওয়ার্থ হাসপাতালে কাজ করেন। করোনার মহামারীর সময় সম্মুখে থেকে কাজ করায় পেয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের ‘ভ্যাকসিন লুমিনারি’ স্বীকৃতি। জারার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এখন তুমুল জনপ্রিয়।

ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরঃ লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপনের পরামর্শদাতা হিসেবে ডা. জাহাঙ্গীর কবির সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক পরিচিত। তিনি ১৯৭৪ সালে বাগেরহাট জেলার কচুয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ রমিজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজ থেকে স্টার মার্ক-সহ উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। এরপর প্রায় দশবছরের মতো গ্রামেই তার জীবন কাটে। পরবর্তীতে ২০০০-২০১০ সাল পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস করছেন রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার হিসেবে ফেনী ন্যাশনাল হসপিটালে। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাফিতে (আলট্রাসাউন্ড) একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি ইংল্যান্ড থেকে ডায়েবেটিস-সহ আরো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা কোর্স অর্জন করেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাম্পসহ ডাক্তারদের প্রশিক্ষণে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন।

ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বর্তমানে ডিপ্লোমা অ্যাজমা মডিউল কোর্সের ট্রেইনার ও মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হেলথ রেভ্যুলেশন নামে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যার চেয়ারম্যান তিনি। এছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইমারি কেয়ার রেসপিরেটরি গ্রুপ, বাংলাদেশ (আইপিসিআরজি) এর যুগ্মসম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ জাহাঙ্গীর কবিরের ভিডিও দেখেন।

ডা. সুষমা রেজা রাখীঃ ডা. সুষমা রেজা রাখী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ইন্টার্নশিপ শেষে ঢাকার চক বাজারে ‘হায়দার মেডিকো’তে কয়েকমাস রোগী দেখেন। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ থেকে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি সম্পন্ন করে ঢাকার হোপ অটিজম সেন্টারে হেড অব আর্লি ইন্টারভেনশন উইং হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যবিষয়ক মেডিকেল প্রতিষ্ঠান লাইফস্প্রিং-এর সেক্সুয়াল অ্যান্ড মেডিসিন ইউনিটের প্রধান তিনি। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের আচার-আচরণ, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের করণীয়, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়া, বৈবাহিক সময়ে স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক জটিলতাসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পরামর্শ দেন।

শুদ্ধ ও সাবলীল উপস্থাপনা, বিজ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যবহুল আলোচনার কারণে তাঁর স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শের ভিডিওগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লাইফস্প্রিং-এর অধীনে তিনি বেশ কয়েকটি কোর্সে ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এর মধ্যে ইমোশনাল হিলিং অ্যান্ড মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন উইথ লাইফস্প্রিং নামে মানসিক প্রশান্তি ও সুস্থ জীবন যাপনের উপর অনলাইস কোর্স অন্যতম।

ডা. ফেরদৌস খন্দকারঃ ডা. ফেরদৌস খন্দকার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। তারপর পরিবারসহ পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার নিউইয়র্ক মেডিকেল কলেজ থেকে প্রশিক্ষণসহ চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। চেম্বারে রোগী দেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মানুষকে রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করতে, এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাথমিক ধারণাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি নিয়মিত ভিডিও তৈরি করে যাচ্ছেন।

নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস যখন মহামারি আকার ধারণ করে তখন সেসময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ডা. ফেরদৌস। নিজের চেম্বার খোলা রেখে করোনা আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ স্ট্রিটে ওয়েস্টার্ন কেয়ার মেডিকেল কেয়ার পিসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন কয়েকজন ডাক্তার নিয়ে। নিজের অর্থ ব্যয়ে নিজ গ্রাম কুমিল্লার দেবীদ্বারেও গড়েছেন হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম।

ডা. মুনমুন জাহানঃ ডা. মুনমুন জাহান ঢাকা হলিক্রস গার্লস হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং হলিক্রস কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিভাগে যোগ দেন। তারপর ২০১৭ সালে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যবিষয়ক মেডিকেল প্রতিষ্ঠান লাইফস্প্রিং-এ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

শারীরিক জটিলতা, মানসিক বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠা, সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বাবা-মায়েদের করণীয়, দাম্পত্য জীবনে কলহ-বিবাদ দূর করতে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, বয়ঃসন্ধিকালে আচার-আচরণ সম্পর্কিত তাঁর ভিডিওগুলো দেখছেন অনেকেই। লাইফস্প্রিং-এর অধীনে ক্লিনিক্যাল মেন্টাল হেলথসহ বেশ কয়েকটি কোর্সে তিনি ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সূত্রঃ ইত্তেফাক