আশ্চর্য হলেও অসময়ে গাছে ঝুলছে পাকা আম, বিঘায় ৪ লাখ টাকার বিক্রি

| আপডেট :  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৪৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৪৯ অপরাহ্ণ

বর্তমান সময়ে আম ও ডালে ডালে মুকুলের সমারোহ। কিন্তু যদি দেখেন অসময়ে গাছে গাছে ঝুলছে পাকা পাকা আম। সেইসাথে বিঘায় ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি হয় তাহলে আশ্চর্য হওয়ারই কথা। এ দৃশ্য গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের একটি বাগানের।

এ শীত মৌসুমে যে আমের দেখা মিলেছে তা বারমাসি আম। প্রথমে পরীক্ষামূলক চাষ করেই সফলতা পেয়েছেন উদ্যোক্তা সেরাজুল ইসলাম নামে এক চাষি। এই চাষি ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে এ বাগান করেছেন। বর্তমানে পাকা আমসহ আমের চারা বিক্রি করছেন। তিনি প্রতি কেজি আম ৩৫০-৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে সেরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছর আমের চাহিদা থাকলেও মৌসুম ছাড়া আম পাওয়া যায় না। এ চিন্তা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে নানা জাতের চারা সংগ্রহ করতে থাকি, কিন্তু সে জাতগুলো ভালো ছিল না। পরে ঢাকা থেকে চারা সংগ্রহ করি। তারপর বাগান করে সফল হই। সে সময় এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করা হয়েছিলো। এখন ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমবাগান করেছি।

জানা গেছে, বারি আম ১১ বারোমাসি জাতের আম অর্থাৎ সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে। বছরে তিনবার ফল প্রদান করে থাকে। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে গাছে মুকুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আহরণের উপযোগী হয়। ফল লম্বাটে ( লম্বায় ১১.৩ সেমি ) এবং প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম।

কাঁচা আমের ত্বক হালকা সবুজ। আর পাকলে ত্বক হয় হলুদাভ সুবজ। আম গাছটির উচ্চতা ৬-৭ ফুট। গাছটির কোনো অংশে মুকুল, কিছু অংশে আমের গুটি, কিছু অংশে কাঁচা আম, আবার কোথাও পাকা আম। একটি গাছেই ফুটে উঠেছে আমের ‘জীবনচক্র’। এটি খেতে সুস্বাদু, তবে একটু আঁশ আছে। ফলের শাঁস গাঢ় হলুদ বর্ণের।

এই জাতের ৪-৫ বছর বয়সী গাছ থেকে প্রতিবার ৬০-৭০টি আম আহরণ করা যায়। এছাড়াও এই জাতের একটি গাছে বছরে প্রায় ৫০ কেজি পর্যন্ত আম হয়ে থাকে। বারি আম ১১ এর এক বছর বয়সী গাছে আমের মুকুল আসে। আম গাছের একটি থোকার মধ্যে ৫-৬ টি আম থাকে। আমের উচ্চফলনশীল এই জাতটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ উপযোগী। আমের এই জাতটি সম্পূর্ণ দেশীয় আম হাইব্রিড নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট। চাষের উপযুক্ত জমিঃ মাঝারী উঁচু জমি এবং দোআঁশ মাটি বারি আম ১১ চাষের জন্য উপযোগী।

বংশবিস্তার করা যায় বীজের বা কলমের মাধ্যমে। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করলে মাতৃগাছের মতো ফল পাওয়া যায় না। তাই কলমের মাধ্যমেই এই জাতের আমের চারা উৎপাদন ও বংশবিস্তার করা উত্তম। এক্ষেত্রে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় / ভাদ্র – আশ্বিন (মে-জুন/ আগস্ট-সেপ্টেম্বর) করাই উত্তম।

আম পাকার সময় হিসেবে মে মাস আমের মৌসুম হওয়ায় এ মাসে আমের ফলন বেশি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগস্ট মাসে, তৃতীয় পর্যায়ে নভেম্বর এবং চতুর্থ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি মাসে আম পাকবে। বারি আম ১১ এর ফলন ২২,০০০ কেজি/হেক্টর বা ২২ টন/ হেক্টর। এছাড়াও প্রতি শতকে ৮০-৯০ কেজি আমের ফলন হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সীমা কর্মকার বলেন, কয়েক মাস আগে সেরাজুল ইসলামের বাগান পরিদর্শন যাই। তাকে বাগান পরিচর্যার বিষয়ে অনেক রকম পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে তাকে প্রয়োজনীয় যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা সম্ভব তা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বারি আম -১১ বা বারমাসি আমের এই জাতটি এখন বাংলাদেশের সব উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রেই চাষ হচ্ছে। আমের এই জাতটি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সকল আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।