আগামী দুই বছর অন্যরকম রাজনীতি করবো

| আপডেট :  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পরিচিতি সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বহুল পরিচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আগামী নির্বাচন ২০২৩ সালে হলে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ হায়াত দিলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তবে এটা সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়। বড় বড় পরাশক্তির খেলার মধ্যে আমরা পড়েছি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছি। এই জায়গাকে অনেকে নানাভাবে ব্যবহার করতে চায়। এদেশে অস্ত্র এসেছিল জাহাজ বোঝাই করে, এটা সত্য। করোনা না আসলে আমাদের জিডিপি দশের ওপর চলে যেতো।

এছাড়াও তিনি বলেন, আগামী ২ বছর অন্যরকম রাজনীতি করবো। কে কোন দল করেন তা মুখ্য বিষয় না। জনগণকে দেয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করছেন কি-না সেটা দেখবো। ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখলে আমার সঙ্গে আসবেন না।

তিনি আরও বলেন, মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মানুষকে না চেনা ঠিক না। অনেকে নির্বাচনের আগে গরিবের পা ধরে বুকে নিয়ে ভোট চায়, নির্বাচনের পরে তাদের চেনে না। আপনি সবার আশা পূরণ করতে পারবেন না। তবে মানুষ যখন সমস্যা নিয়ে আসে তখন পিঠে হাত দিয়ে সাহস দেয়া সম্ভব। পাশে থাকার আশ্বাসটুকুই মানুষ চায়। এটাই আমার মূল চাওয়া।

মেম্বার চেয়ারম্যান এর উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, যখন ভালো কাজ শুরু করবেন তখন সাপোর্ট পাবেন। অনেকে আবার দেখবেন আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে সোশাল মিডিয়াতে বা নারায়ণগঞ্জের দুই একটা পত্রিকায় উল্টাপাল্টা মন্তব্য লেখা হবে। এটা আগেই মাথায় রেখে দিন। যখন ভালো কাজ করবেন তখনই আপনাদের বিরুদ্ধে খারাপ লেখা হবে। আপনি ভালো কাজ করবেন আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন আপনাদের ভাই শামীম ওসমান আপনাদের সঙ্গে থাকবেন। কোনো ধাক্কা, ফুলের পাঁপড়িও আপনাদের ওপর পড়তে দিবো না। আগে আমার গায়ে পড়বে তারপর আপনাদের গায়ে পড়বে।

এখানে উপস্থিত সবাই আওয়ামী লীগ করেন না। এখানে অনেকে অন্য দলের আছেন। আমার কাছে এটা বিষয় না। আপনারা সবাই জনগণের প্রতিনিধি। এই সম্মান আল্লাহ আপনাদের দিয়েছেন। আপনারা নির্বাচনের আগে অনেক কথা বলেছেন। একজন মেম্বারের কিছু করার ক্ষমতা নেই যদি চেয়ারম্যান সাপোর্ট না দেয়। আবার চেয়ারম্যানরা এমপি ছাড়া কিছু করতে পারবেন না। প্রশাসন অন্য কথা। আপনারা যদি ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এখানে এসে থাকেন তাহলে আসসালামু আলাইকুম। আমি আপনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবো। আপনারা আমার বিরুদ্ধে থাকলেও আপত্তিনেই। আমার রাজনীতি আমার জন্য ইবাদত। মানুষের জন্য কাজ করার চেয়ে বড় ইবাদত কিছু নেই।

তিনি বলেন, আমি চিন্তা করে দেখেছি নারায়ণগঞ্জে যত বড় বড় কাজ হয়েছে, এগুলোর নব্বই ভাগ আমাদের দ্বারা হয়েছে। লিংক রোড, স্টেডিয়াম, পঞ্চবটী থেকে মুন্সীগঞ্জ ফ্লাইওভার হবে, ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ চলছে, সব এলাকাতেই রাস্তা হয়েছে। আমি যে পরিমাণ রাস্তার কাজ এনেছি, অন্য চারটা এলাকার এমপি মিলিয়ে সেটা আনতে পারেনি।

এছাড়াও তিনি বলেন, আমি যখন কোনো মন্ত্রণালয়ে ঢুকি, তখন সবাই বুঝে কিছু একটা ঘটবে। তখন যা চাই তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়। আমার নিজস্ব একটা স্টাইল আছে কাজের। আপনারাও প্রয়োজনে আমার টেবিল ভাঙেন, আমার আপত্তি নেই। আমার কাছ থেকে আদায় করে নেন। আমি কাজ এনে দেব, কাজের চিন্তা করবেন না।তিনি আরও বলেন, হাতে সময় নেই, আপনাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। যেহেতু নির্বাচন সামনে, সব এমপিরা এখন কাজের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। পার্লামেন্টে সবচেয়ে লম্বা আমি। আমার কাজ না দিয়ে কেউ কাজ নিতে পারবে না।

মানুষের ওপর অত্যাচার হলে সেই উন্নয়ন করে লাভ নেই। মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতা আমাদের রুখতে হবে। থানার ওসিকে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যেন তার বিদায়ের সময় সবার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আমি চাই পঞ্চায়েত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। আল্লাহর হুকুম হলে এবং আপনারা একত্রে থাকলে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধ থাকবে নিশ্চিত থাকেন। আপনাদের শুধু মাস দুই তিনেক ক্যাম্পেইন করতে হবে। আমাদের এসপি ও জেলা প্রশাসক ভালো মানুষ, আমরা টিম করে মিটিং করবো। তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটছে যা এখনো নিতে পারিনি।

আমার আব্বা, আম্মা, ভাইয়ের কবরে একটা ঘটনা ঘটছে। আমি মানতে পারিনি সেই কষ্ট। আমি এতটুকুই বলছিলাম- গোপনে হলেও আল্লাহর কাছে মাপ চাওয়া উচিত। শুধু একজনকে সাক্ষী রেখে। আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে কেউ ছোট হয় না। এই জিনিসটাই মানতে পারি নাই তাই মানসিকভাবে খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে। জিদ উঠে যায়, রাগ উঠে যায় কন্ট্রোল করি।এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।