বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

| আপডেট :  ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:৫০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:৫০ অপরাহ্ণ

আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকে এমপি এবং মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার দ্ব’ন্দ্বে এখন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি। তারা এখন একে অপরের বি’রুদ্ধে দালালি, দু’র্নীতি, জ’ঙ্গিবাদের অ’ভিযোগ তুলছেন।

জাতীয় সং’সদে প্রে’সিডেন্টের ভাষণের ও’পর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে কাজী ফিরোজ রশিদের দেয়া বক্তব্যের তীব্র প্র’তিবাদ জানিয়েছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ। গতকাল জাসদের এক বিবৃতিতে এই প্র’তিবাদ করা হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সং’সদে প্রে’সিডেন্টের ভাষণের ও’পর ধন্যবাদ প্রস্তাবের ও’পর আলোচনায় কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, “আমাদের হেফাজতে ইসলাম তাদের জ’ঙ্গি বানাইছে ইনু সাহেব (হাসানুল হক ইনু)। আরে জ’ঙ্গি কারে বলে? আন্দোলন তো মানুষেই করে, আন্দোলন সাধারণত ভায়োলেন্সে চলে যায়। তারা জ’ঙ্গি না, জ’ঙ্গি হচ্ছে স’শস্ত্র বিপ্লব, যারা করে স’রকারকে হটানোর জন্য। যেটা ইনু সাহেবরা করেছিলেন, জাসদ তো ’৭৩ সাল থেকেই ’৭৫ সাল পর্যন্ত এই দেশের হাজার হাজার যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কর্মীদের হ’’ত্যা করেছে।

অনেক পুলিশ ফাঁ’ড়ি তারা দ’খল করেছে। পুলিশ ফাঁ’ড়ি লু’ট করেছে। থানা লু’ট করেছে, ট্রেজারি লু’ট করেছে। ঈদের জামাতে আমাদের আওয়ামী লীগের এমপিদের হ’’ত্যা করেছে দিনের বেলা, ঈদের জামাতে বসে। তারা যদি আরেকটা সংগঠনকে জ’ঙ্গি বলে এটা মানায়! বঙ্গবন্ধুকে এইভাবে নি’র্মমভাবে হ’’ত্যা করার দুঃসাহস কেউ পারত। সমস্ত ক্ষেত্র তারা প্রস্তুত করেছিল। আজকে তারা বলে যে, আমরা কিছু জানি না।

জাসদ যদি ক্ষেত্র প্রস্তুত না করত, সেদিন আমি যুবলীগের ঢাকা সিটির প্রধান ছিলাম। সেদিন যদি এ জাসদ ক্ষেত্র প্রস্তুত না করত, তাদের একটা পত্রিকা ছিল ‘গণকণ্ঠ’ সেই পত্রিকা পড়ে দেখেন, সেদিন কি-না বানাইছে আমাদের। চোর-ডাকাত ছাড়া সবকিছু বানাইছে গণকণ্ঠে লিখতে গিয়া। যারা স্বাধীনতার শ’ত্রু ওই মানুষগুলো পড়ত, সমস্ত্র মানুষদের ক্ষি’প্ত করে ফে’লেছে জাসদ। আজকে তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। আজকে তারা বঙ্গবন্ধুর কথা বলে।”
গতকাল জাসদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কাজী ফিরোজ রশিদের এই বক্তব্যকে মি’থ্যাচার ও জাসদবি’রোধী বিদ্বেষ পরিপূর্ণ হিসেবে অবিহিত করা হয়।

হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ প্রায়শই জাসদের বি’রুদ্ধে মি’থ্যাচার করেন এবং মি’থ্যাচার ছড়ান। অবশ্য তার বক্তব্যে জাসদের বি’রুদ্ধে তার এই বিদ্বেষের কারণ তিনি নিজেই প্রকাশ করেছেন। তিনি নিজে তার থলের বিড়াল বের করেছেন। জাসদের জামাত, হেফাজত, সা’ম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, জ’ঙ্গিবাদবি’রোধী জাসদের বলিষ্ঠ অবস্থানই কাজী ফিরোজ রশীদের গাত্রদাহ, জাসদের প্রতি বিদ্বেষের মূল কারণ। তিনি বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ তার নিজের ভাষায় ‘আমাদের হেফাজতে ইসলাম’ বলে প্রমাণ করেছেন তিনি বারবার দল বদল করে, ও’পরে ও’পরে যেই দলই করেন না কেন, তিনি আসলে হেফাজত, জামাত, সা’ম্প্রদায়িক, মৌলবা’দী, জ’ঙ্গিবা’দীদের পক্ষেরই লোক। তিনি তার এই আসল চেহারা প্রকাশ করে ফে’লেছেন।

জাসদের দফতর সম্পাদক বলেন, যে কাজী ফিরোজ রশীদ বঙ্গবন্ধুর হ’’ত্যার পর খু’নি মুশতাক, সা’মরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে আখের গোছানোয় ঝাঁ’পিয়ে পরেছিলেন সেই কাজী ফিরোজ রশীদের বঙ্গবন্ধুর জন্য কা’ন্না-মায়াকা’ন্না ও কপটতা ছাড়া আর কিছুই না। কাজী ফিরোজ রশীদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা থাকত তাহলে কাজী ফিরোজ রশীদ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বি’রোধীতা করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য হু’মকিদাতা হেফাজতের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করতেন না।

জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাসদ প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু স’রকারের বি’রুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থানে ছিল। সেই সময়ে পুলিশ ফাঁ’ড়ি, থানা লু’ট, ব্যাংক ডাকাতি, পাটের গুদামে আগুণ দেয়া, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হ’’ত্যার সাথে জাসদের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী যুক্ত থাকতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তৎকালীন স’রকার-প্রশাসন-পুলিশ জাসদের নেতাকর্মীদের বি’রুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মা’মলা দিয়ে আ’দালতে বিচারের সম্মুখীন করে শা’স্তি নিশ্চিত করত। কিন্তু সেই সময়কালে উল্লেখিত অ’ভিযোগে বাংলাদেশের কোনো থানায়ই জাসদের কোনো নেতাকর্মীর বি’রুদ্ধে কোনো মা’মলাও হয়নি।

জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, কাজী ফিরোজ রশীদের মতো লোকদের জাসদ চোর-ডাকাত বানায়নি। খোদ বঙ্গবন্ধুই কাজী ফিরোজ রশীদের মতো লোকদের ও’পর ক্ষি’প্ত হয়ে তাদের ‘চাটার দল’, ‘চোরের খনি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

কাজী ফিরোজ রশীদকে জাসদের বি’রুদ্ধে মি’থ্যাচার করার আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখার পরামর্শ দিয়ে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ‘চোরের খনি’, ‘চাটার দল’ এর সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু হ’’ত্যার পর খু’নি মুশতাক ও সা’মরিক শাসক জিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে কোন কাজীরা পুরাতন ঢাকা, ধানমন্ডি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় হিন্দুদের সম্পত্তি দ’খল করেছে, কোন মন্টু কাজী ও তার ভাইরা এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে ১৯৮৫-৮৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কোটালিপাড়া, টুঙ্গীপাড়ায় যেতে বা’ধা দেয়ার অ’পচেষ্টা চা’লিয়েছে তা দেশবাসী ভু’লেনি। সূত্রঃ ইনকিলাব