শিমুর বানানো চা খেয়েই হ’ত্যাকাণ্ডে শামিল হন ফরহাদ

| আপডেট :  ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:১১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:১১ অপরাহ্ণ

স্বামী সাখাওয়াত আলীম নোবেলের হাতে নি’র্মমভাবে খু’ন হয়েছেন অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। এই হ’’ত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ। দুই বন্ধু মিলেই শিমুকে গ’লাটি’পে হ’’ত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দুজনের দেওয়া জ’বানব’ন্দির ভিত্তিতে শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান ঢাকা জে’লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ’পরাধ) হুমায়ুন কবির।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আব্দুস ছালাম।
হুমায়ুন কবির বলেন, দাম্পত্য ক’লহের কারণে স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ মিলে নিজ বাসায় গ’লাটি’পে হ’’ত্যা করেন শিমুকে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ১৬ জানুয়ারি সকালে নোবেলের গ্রিন রোডের বাসায় হ’’ত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। ঘটনার কিছু সময় আগে সেখানে উপস্থিত হন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ। প্রায় ৪০ বছরের সম্পর্ক তাদের। ফরহাদ ছিল বেকার। মাঝেমধ্যে সে নোবেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলত। সেদিন সকালে দুই হাজার টাকা ধার নিতে নোবেলের বাসায় যায় ফরহাদ। এ সময় তাকে চা খেতে দেন শিমু।

ফরহাদ ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছিল। এরই মধ্যে পাশের বেডরুমে নোবেল ও শিমুর মধ্যে ঝ’গড়া শুরু হয়। দুজনই উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। হইচই শুনে ফরহাদ ড্রয়িং রুম থেকে শিমুর বেডরুমে যায়। এ সময় মেজাজ হা’রিয়ে শিমুকে ধাক্কা দিয়ে ফে’লে দেয় নোবেল। ফরহাদ সেখানে হাজির হলে নোবেল তাকে সহায়তা করতে বলে। ফরহাদ ছিল নোবেলের বা’ধ্যগত। এ জন্য সে নোবেলের কথামতো শিমুকে চে’পে ধরে। এরপর দুজন মিলে গ’লাটি’পে শিমুকে হ’’ত্যা করে।

এরপর নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লা’শ নিয়ে বেরিয়ে যান নোবেল। তার সঙ্গী হন ফরহাদও। প্রথমে তারা মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লা’শ গু’মের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা লা’শ গু’ম করতে মোহাম্ম’দপুর, বসিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লা’শটি ফে’লে চলে যান। রাতেই কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বি’ষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিমুর স্বামী নোবেল।

পরদিন সকালে বস্তাব’ন্দি অবস্থায় অ’জ্ঞাতনামা এক নারীর ম’রদেহ উ’দ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই নারীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সহায়তায় তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়।গেল বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আ’দালতে অভিনেত্রী শিমুকে হ’’ত্যার দায় স্বীকার করে স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দি দিয়েছেন নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ। আ’দালতের নির্দেশে বর্তমানে আ’সামিরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কা’রাগারে রয়েছেন।

স্বামী ও দুই স’ন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিন রোড এলাকায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন এই অভিনেত্রী। ওটা নোবেলদের নিজেদের বাড়ি। নিজেদের থাকার ফ্ল্যাটটা তারা বড় করেই বানিয়েছিল। শিমুকে হ’’ত্যার সময় তাদের দুই স’ন্তান (১৭ বছরের মেয়ে ও ৫ বছরের ছেলে) সেই বাসাতেই ছিল। তবে ঘরগুলো দূরে থাকায় ছেলে-মেয়েরা কিছু টের পাননি।

একদিকে মায়ের মৃ’ত্যু, অন্যদিকে কা’রাগারে বাবা। এই নি’র্মম পরিস্থিতিতে শিমুর বাচ্চাগুলো খুব অ’সহায় হয়ে পড়েছে। বাচ্চাগুলোর ভবি’ষ্যৎ নিয়ে সবাই চিন্তা ভাবনা করছে। শিমুর পরে খালাকেই (ফাতেমা নিশা) বাচ্চা দুটো বেশি পছন্দ করে। এজন্য তাদের ছোট খালার বাসায় রাখা হয়েছে। শিমু-নোবেলের দুই স’ন্তানের ভবি’ষ্যৎ কী হবে, এগুলো নিয়ে এই মুহূর্তে না ভেবে পরবর্তীতে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান দুই পরিবারের সদস্যরা।

১৯৯৮ সালে সিনেমায় অভিষেক হয় অভিনেত্রী শিমুর। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তিনি প্রায় ২৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও অর্ধশতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। দুই দশকেরও বেশি সময় অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন শিমু।

অভিনেত্রী হিসেবে দেশের খ্যাতনামা পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন রাইমা ইসলাম শিমু। এর মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম, পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান দীপু, এনায়েত করিম ও শবনম পারভীন।

তাছাড়া শিমু অভিনয় করেছেন দেশের প্রথম সারির অভিনেতা শাকিব খান, রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিমসহ অনেকের বিপরীতে। প্রযোজক হিসেবেও দেখা গেছে তাকে।একটি টিভি চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন। শিমু চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী সমিতির সদস্য পদ হা’রানো ১৮৪ জনের মধ্যে একজন। তিনি ভোটাধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছিলেন। সুত্রঃ আরটিভি নিউজ