ভ’য়ানক ভাবে বাড়ছে গো’পনা’ঙ্গ ক’র্তন, ভোগান্তি সারাজীবন

| আপডেট :  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ

আমার স্ত্রী আমাকে অবিশ্বাস করতো, একাধিক সার্জারি হয়েছে আমার। অনেক সাফার করেছি, করছি। আমার তিনটা বাচ্চা। এই পরিস্থিতিতে সমাজে বাচ্চাদের মানুষ করাই আমার লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জ এখন। আমি নাকি প’রকীয়ায় লিপ্ত। কার সঙ্গে প’রকীয়ায় লিপ্ত কোনো তথ্য না নিয়েই আন্দাজে অ’ভিযোগ করতো। আমি নাকি দ্বিতীয় বিয়ে করেছি। আমি দ্বিতীয় বিয়ে করলে আমার কি বউ থাকবে না? খোঁজ নেবে না দ্বিতীয় বউ? সে যা বলেছে তার পুরোটাই ভিত্তিহীন, মি’থ্যা ছিল।

মূলত এসব কিছুই না, আমার প্রতি তার হিংসাত্মক মনোভাব ছিল, আর হয়তো কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, এটাই মূল বি’ষয়।’ আক্ষেপ করে এ কথা বলছিলেন হালিম সরদার (ছদ্মনাম)। গত বছর তার গো’পনাঙ্গ কে’টে ফে’লেন স্ত্রী। তারপর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও ভোগান্তির শেষ নেই হালিমের। এই জের তাকে টানতে হবে সারাজীবন।

হালিম মন্তব্যে বলেন, ‘আমি আমার চাকরির প্রতি এতটাই দায়িত্বশীল ছিলাম, যে কারণে আমার পরিবারে সময় কমই দিতে পেরেছি। পরিবারকে ভালো রাখার জন্যই চাকরি করেছি। যেসব অ’ভিযোগ করেছিল এখনো ত’দন্ত হচ্ছে। এখন কাউকেই কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কেউ বলতেও পারে না যে আমি প’রকীয়ায় লিপ্ত। যে ধরনের অ’ভিযোগ করা হয়েছে, এর কোনোটাই আসলে সত্য নয়।’

হালিম ও তার স্ত্রীর মতো বৈবাহিক সম্পর্কগুলোতে এমন স’ন্দেহ ও তার প্রতিক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। স্বামী বা স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত প্রেম বা শা’রীরিক সম্পর্কের জেরে এসব ঘটনা বেশি ঘটলেও ঝ’গড়াঝাটির মতো ঠুনকো কারণও কম দায়ী নয়। এর পাশাপাশি পারিবারিক বি’রোধসহ নানা কারণও আছে।“প’রকীয়ায় জ’ড়িত স’ন্দেহে স্বামীর পু’রুষাঙ্গ কর্তন নারায়ণগগঞ্জের আড়াইহাজার উপজে’লায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে এক ব্যক্তির পু’রুষাঙ্গ কে’টে দেন তার স্ত্রী। পরে জানা যায়, স্বামী প’রকীয়ায় জ’ড়িত বলে স’ন্দেহ করে কৌশলে এই কাজ করেছেন স্ত্রী”

প’রকীয়া প্রেমিকার কা’মড়ে পু’রুষাঙ্গ হা’রিয়ে মৃ’ত্যু ২০১৮ সালের আগস্টে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজে’লার আল্লারদর্গা এলাকার গাড়া দাইড়পাড়া গ্রামে এক ব্যক্তির পু’রুষাঙ্গ কা’মড়ে ছিঁড়ে নেন তার প’রকীয়া প্রেমিকা। পরে জানা যায়, বিয়ে করতে ওই ব্যক্তি অস্বীকৃতি জানান বিধায় তাকে শা’রীরিক সম্পর্কের লোভ দেখিয়ে ডেকে এই কাণ্ড ঘটান সেই নারী।পারিবারিক ক’লহে পুলিশ স্বামীর পু’রুষাঙ্গ কাটলেন স্ত্রী গত ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) পু’রুষাঙ্গ কে’টে দেন তার স্ত্রী। পরে জানা যায়, ওই এসআইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ক’লহ চলছিল। মূলত সেই ক’লহের জেরে নৃ’শংস ঘটনাটি ঘটানো হয়।

বাড়িতে আসতে দেরি করায় স্বামীর পু’রুষাঙ্গ কর্তন গত ৪ ডিসেম্বর খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমণি মধ্যপাড়া এলাকার এক ব্যক্তির পু’রুষাঙ্গ কে’টে দেন তার স্ত্রী। জানা যায়, ওই ব্যক্তি একটি বাহিনীর সদস্য। ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতে দেরি করায় ক্ষু’ব্ধ হন স্ত্রী। এমনকি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে স্বামীকে প্রায়ই নি’র্যাতন করতেন স্ত্রী।

বছরে গড়ে ২০টি পু’রুষাঙ্গ কর্তনের ঘটনা ঘটছে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার হাতেগোনা দু-চারটি প্রকাশ পেলেও এমন গো’পনাঙ্গহানি বা কর্তনের ঘটনা ভ’য়ানকভাবে বেড়ে চলছে। অধিকাংশ ভু’ক্তভোগীই ল’জ্জা, আত্মসম্মানসহ সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভ’য়ে কাউকে বলেন না। পুরুষ নি’র্যাতন নিয়ে কাজ করা ‘বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন’র তথ্য মতে, দেশে পুরুষের গো’পনাঙ্গ কর্তনের মতো ঘটনা বছরে গড়ে ২০টি ঘটছে। এসব ওই ঘটনায়ই সীমাবদ্ধ থাকে না, ভু’ক্তভোগীকে সারাজীবন এর জের টানতে হয়। সামাজিকভাবে হেয় হয়ে থাকতে হয়।

‘বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন’র সভাপতি শেখ খায়রুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বামীর প’রকীয়া কিংবা স্ত্রীর প’রকীয়ায় বা’ধা দেওয়া নিয়ে ক’লহের জেরে পু’রুষাঙ্গ কে’টে ফেলার মতো ঘটনা ঘটছে বেশি। অনেক পুরুষ সম্মানহানি ও হাসির পাত্র হবেন ভেবে ঘটনাগুলো প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। আমাদের জানা মতে, প্রতি বছর এমন ২০টি ঘটনা ঘটে। এর কয়েকটি গণমাধ্যমে এলেও বাকিগুলো আসে না। যেগুলো প্রকাশ পায় সেগুলোও অনেক সময় ভি’কটিম জানেন না যে গণমাধ্যমে এসেছে।’

যা আছে অঙ্গহানি আইনে ল’জ্জা, আত্মসম্মান ও সামাজিক মর্যাদাহানির ভ’য়ে অঙ্গহানির মতো গু’রুতর বি’ষয়টি অনেকে প্রকাশ করতে না চাইলেও এ বি’ষয়ে স্পষ্ট আইন রয়েছে দেশে। দ’ণ্ডবিধি ১৮৬০-এ গু’রুতর আ’ঘাতের ব্যাপারে আটটি বি’ষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যার ৩২০ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘গু’রুতর আ’ঘাত: কেবল নিম্নোক্ত শ্রেণিসমূহের আ’ঘাতই ‘গু’রুতর’ বলে গণ্য হবে। প্রথমত, পুরুষত্বহীনকরণ। দ্বিতীয়ত, স্থায়ীভাবে দুই চোখের যে কোনোটির দৃষ্টিশক্তি রহিতকরণ। তৃতীয়ত, স্থায়ীভাবে দুই কানের যে কোনোটির শ্রবণশক্তি রহিতকরণ। চতুর্থত, যে কোনো অঙ্গ বা গ্রন্থির অনিষ্টসাধন। পঞ্চমত, যে কোনো অঙ্গ বা গ্রন্থির কর্মশক্তিসমূহের বিনাশ বা স্থায়ী ক্ষ’তিসাধন। ষষ্ঠত, মস্তক বা মুখমণ্ডলের স্থায়ী বি”কৃতিকরণ। সপ্তমত, হাড় বা দন্তভঙ্গ বা গ্রন্থিচ্যুতকরণ। অষ্টমত, যে আ’ঘাত জীবন বিপন্ন করে বা আ’ঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ২০ দিন মেয়াদের জন্য তীব্র দৈহিক য’ন্ত্রণা দান করে বা তাকে তার সাধারণ পেশা অনুসরণ করতে অসমর্থ করে।’

প্রতিকারে প্রয়োজন সচেতনতা ও আলাদা আইন
ভু’ক্তভোগী ও পুরুষ নি’র্যাতন নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতারা বলছেন, এসব ঘটনা প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে পুরুষ নি’র্যাতনের জন্য আলাদা আইন না থাকারও বড় ভূমিকা রয়েছে। নারী নি’র্যাতন নিয়ে আইন থাকলেও পুরুষ নি’র্যাতন নিয়ে নেই কোনো আইন। পুরুষ নি’র্যাতন নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা উঠলেও তা নিয়ে জো’রালো কোনো দাবি বা পদক্ষেপ এখনো দেখা যায় না। প’রকীয়া, আর্থিক সং’কট বিশেষ করে ঈদের সময় নানা কারণে ক’লহের জেরে শা’রীরিক বা মা’নসিকভাবে পুরুষ নি’র্যাতনের ঘটনাগুলো ঘটছে।

পুরুষদের সুরক্ষার বি’ষয়ে ভু’ক্তভোগী হালিম সরদার বলেন, ‘আমার মতো অনেক পুরুষ বিভিন্নভাবে নি’র্যাতিত হন, মা’মলা খান। অনেকেই ভু’ক্তভোগী। তাই এর প্রতিকার অবশ্যই হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে পুরুষ নি’র্যাতনরোধে আইন হওয়া খুবই দরকার। এটা যে শুধু আমার বক্তব্য তা নয়, এটা জনতার বক্তব্য। আইন থাকলে এসব ঘটনা একেবারেই কমে যেতো।’

‘বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন’র সভাপতি শেখ খায়রুল আলম বলেন, ‘নারী নি’র্যাতনবি’রোধী আইন আছে বলে নারীরা যেমন আইনের আশ্রয় পান, পুরুষেরও সেটা পাওয়ার অধিকার আছে। আইন হলে তা অনেকটা কমে যাবে। ঘটনা ঘটে গেলে পুরুষের তা প্রকাশ করা ও মা’মলা করা দরকার। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে পরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ পাবে না। ফলে গো’পনাঙ্গহানির ঘটনা একেবারেই কমে যাবে।’

বিশেষজ্ঞ মতামত,অধিকারকর্মীদের মতে, গো’পনাঙ্গহানির মতো অ’মানবিক ও পুরুষ নি’র্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করছে এমন গবেষণামূলক বা সচেতনতামূলক সংগঠন বা সংস্থা দেশে তেমন গড়ে ওঠেনি। হাতেগোনা যে দু-একটি সংগঠন রয়েছে, তাদেরও জো’রালো কোনো কর্মসূচি নেই। তথ্য পরিসংখ্যানগুলো জনসাধারণের সামনে তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এগুলোর প্রতিকারে সোচ্চার হওয়ার কর্মসূচি বাড়ানো উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আগের চেয়ে এমন ঘটনা বাড়তে থাকায় তা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বি’ষয়ে ভাবনা বাড়াচ্ছে। আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে প’র্নোগ্রাফি ও সামাজিক অ’পরাধ বৃ’দ্ধির কারণে নেতিবাচক বি’ষয়গুলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছে। এসবের প্রতিকারে এখনই প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া উচিত”

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ’পরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. জিয়া রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বায়নের এই যুগে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে প’র্নোগ্রাফি ও সামাজিক অ’পরাধ বেড়ে গেছে। শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়েছে সবকিছু। মানুষের জীবনপ্রবৃত্তি ও ধ্বং’সের প্রবৃত্তির মধ্যে ভারসাম্য আসে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে। আধুনিক বা উন্নত সমাজে সেই ব্যবস্থাটা রয়েছে। আইনের মাধ্যমে এসব সমাধান হয়। তারা প’রকীয়া বা অ’নৈতিক সম্পর্কটাকে অ’পরাধ মনে করে আইনের মাধ্যমেই তা সমাধানের চেষ্টা করে। নয়তো ডি’ভোর্স দেয়। কিন্তু আমাদের সমাজে তা হয় না। প্রকাশ পেলে নিজেরাই পদক্ষেপ নেয়। ফলে গো’পনাঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটায়। এর পেছনে বিচার না হওয়ার কারণও রয়েছে।’