স্ত্রী ছেড়ে গেছেন, ২০ বছর পঙ্গু ছেলেকে লালন-পালন করছেন মা

| আপডেট :  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

‘মা’ – ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কি বিশাল তার পরিধি! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটা শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার৷ মার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়৷একটি দুর্ঘটনা ওলটপালট করে দিয়েছে জিনারুল বিশ্বাসের জীবন। অসুস্থ স্বামীকে রেখে স্ত্রী চলে গেলেও ২০ বছর ধরে ছেলের সেবাযত্ন করছেন বৃদ্ধা জহুরা বেওয়া। সন্তানকে বুকে আগলে রেখে জীবন পার করছেন তিনি।

জিনারুল বিশ্বাস (৩৫) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বড়বড়িয়া বেলতলার গ্রামের বাসিন্দা। ছোট বেলা থেকে বাসের হেলপারি করতেন। ২০০১ সালে বিয়েও করেন জিনারুল। পরের বছর একটি দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় জিনারুলকে। এতে শরীরের নিচের অংশে পচন ধরে। কর্মহীন স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। সে যে গেলেন আজ অবধি স্বামীর কোনো খোঁজই নেননি তিনি।

স্থানীয়রা জানান, অল্প বয়সে জিনারুল তার বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর বাসের হেলপারি করতে গিয়ে চারঘাটের আটঘরিয়ায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে দুই পা হারান তিনি। বাঁচার সম্ভাবনা না থাকলেও মায়ের সেবা-যত্নে কিছুটা সেরে উঠেন। স্ত্রী চলে যাবার পর ভাইরাও তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অসহায় জিনারুলের সব দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের কাঁধে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশে খোলা স্থানে তাকে রাখা হয়। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করায় ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জজ মিয়া ও তার সহোদর কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরিজীবী আব্দুল হাকিম বাঁশ-টিনের একটি চালা তুলে দেন। মানুষের দান করা কম্বল ও পুরনো কাপড়ে ঢাকা জিনারুলের আবাস।

রাতের অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন। অন্যের বাসায় কাজ করে কিংবা মানুষের কাছে চেয়ে নিজের ও পঙ্গু ছেলের খাবার জোগাড় করেন বৃদ্ধা জহুরা।