শামীম ওসমানের ঘোষণা কি স্রেফ আইওয়াশ?

| আপডেট :  ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪২ অপরাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জে বহু আলোচিত-সমালোচিত এমপি শামীম ওসমানকে নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। দুইদিন আগে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বললেন, নির্বাচনে কে প্রার্থী হয়েছে, এটি বি’ষয় নয়। নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, নৌকা বাঙালির প্রতীক, নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক। এ কারণে নৌকার প্রতি তিনি সমর্থন জানাবেন এবং নৌকার প্রতি প্রচারণা করার জন্য তিনি কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি এটিও বলেছেন যে, নির্বাচনী আচরণবিধির সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি সরাসরি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না কিন্তু সেখানে উপস্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন যে, তোমরা মাঠে যাও, প্রচারণা করো। শামীম ওসমানের বক্তব্যের ৪৮ ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের পক্ষের কাউকে দেখা যায়নি। যাদেরকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন এবং ওসমান পরিবারের পক্ষ থেকেও যারা ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারাও আইভীর পক্ষে প্রচারণা করছেন এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

বরং বিভিন্ন সূত্র থেকে বলছে যে, এখন প্রকাশ্যে না গিয়ে গো’পনে তারা আইভীর বি’রুদ্ধে কাজ করছেন। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, তাদের নিজস্ব একটা ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এই ভোটব্যাংকে ভোটের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। আর এই ভোটব্যাঙ্কের ভোটগুলো ওসমান পরিবার যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবেই দেয়া হয়।

বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওসমান পরিবারের সমর্থকরা প্রার্থী রয়েছেন এবং তারা আইভীর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন না। বরং স্বতন্ত্রভাবে তারা প্রচারণা করছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় তারা আইভীর বি’রোধিতা করছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। শুধু পার্থক্য হলো, দুদিন আগে এটা প্রকাশ্য ছিল কিন্তু দুদিন পর এখন এটা আর প্রকাশ্য হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের নেতারা অবশ্য মনে করছেন যে, প্রকাশ্যে শামীম ওসমান যখন আইভীর বি’রোধিতা করেছিলেন, আইভীর বি’রুদ্ধে বক্তব্য রাখছিলেন সেটা দলের জন্য এবং প্রার্থীর জন্য বিব্রতকর হচ্ছিল। এখন যেহেতু তিনি গো’পনে বি’রোধিতা করছেন এবং গো’পনে সমালোচনা করেছেন কাজেই এটি তার দলের জন্য এটি অতটা ক্ষ’তিকারক নয়। আর অন্যদিকে আইভীর সর্মথকরা বলছেন, আইভী কখনোই শামীম ওসমানের দিকে তাকিয়ে নির্বাচন করে না।

উল্লেখ্য যে, প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যখন দলীয় প্রতীক ছিলো না সেখানে আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছিল। অন্যদিকে আইভী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছিলেন এবং ওই নির্বাচনেও তিনি শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছিলেন। কাজেই আইভীর আলাদা একটা জনভিত্তি রয়েছে এবং পরিবারেরও নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে।

তাছাড়া এবারের যিনি বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার তিনিও তিনি জনপ্রিয়তায় আইভীর ধারে-কাছে নেই বলেও মনে করেন। বরং এই নির্বাচন শামীম ওসমানের জন্যই একটি কঠিন পরীক্ষা ছিলো। প্রকাশ্যে বি’রোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত তার ব্যাপারে ক’ঠোর সিদ্ধান্ত নিতো আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এমন কথা আমি লীগের নেতারাই বলছেন। তাই নিজে বাঁচতে এ ধরনের নাটক শামীম ওসমান করেছেন কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। শামীম ওসমানের এ বক্তব্য দিয়ে তিনি নিজের গা বাঁচিয়েছেন এবং একটি আইওয়াশ করেছেন।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে শামীম ওসমানের সমর্থন করা না করা দিয়ে আইভীর ভোটের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কিন্তু এই নির্বাচনের যদি শামীম ওসমান প্রকাশ্যে আইভীর বি’রোধিতা করতেন তাহলে অন্যান্যবারের মতো এবার হয়তো তিনি ছাড় পেতেন না। এ কারণেই তিনি একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি করেছেন বলে অনেকে মনে করেন। তার এই নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা স্রেফ কথার কথা, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার