মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক-কর্মচারীরাই মাদকাসক্ত!

| আপডেট :  ৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ভবনের বাইরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সাইনবোর্ড, ভেতরে নিরিবিলি পরিবেশ। অনেকেই মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির জন্য আসতেন সেখানে। কিন্তু ভেতরের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি গাজীপুর সদরের ভাওয়াল এলাকায় অবস্থিত।

এই কেন্দ্রের ভেতরে রোগীদের ওপর চালানো হতো ভয়ঙ্কর নির্যাতন। কেবল তাই নয়, কেন্দ্রটিতে গোপনে মাদক ব্যবসা, রোগীদের শারীরিক নির্যাতন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ভর্তি রেখে অর্থ আদায় এবং অনৈতিক কার্যক্রম চলত। পুনর্বাসন কেন্দ্র হলেও প্রতিষ্ঠানটির মালিক থেকে কর্মচারী সবাই মাদকাসক্ত!

ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক নাজনিন ফিরোজা বাঁধনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার ও একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাসহ ২৮ জনকে উদ্ধারের পর এ তথ্য জানিয়েছে এলিট ফোর্স র‍্যাব।

তারা বলছে, অন্য মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে কৌশলে নিরিবিলি চিকিৎসা পুনর্বাসনের কথা বলে ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রোগী ভাগিয়ে আনা, রোগীদের আটকে রেখে নির্যাতন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাই ছিল মালিক নাজনিন ফিরোজা বাঁধনের মূল ব্যবসা। যারাই প্রতিবাদ করত তাদেরই নির্যাতন করা হতো। এই নির্যাতনকাণ্ডের নেতৃত্ব দিতেন বাঁধনের স্বামী শিপন ও তার সহযোগী গুণ্ডা বাহিনী।

আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা র‍্যাব-২ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির’ পক্ষ থেকে র‍্যাব-২-এর কাছে অভিযোগ করা হয় যে, একজন চিত্রনায়ক দীর্ঘদিন তাদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন। ওই চিত্রনায়ককে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।

প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব সদর দপ্তর ও র‍্যাব-২-এর গোয়েন্দা দল অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।

অভিযোগের সত্যতা ও নিরাময় কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের সম্পর্কে জানতে পেরে গতকাল ৪ জানুয়ারি বিকেলে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-২-এর একটি দল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আটকে রাখা চিত্রনায়কসহ ২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযানকালে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের আড়ালে রোগীদের নির্যাতন ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মালিক ফিরোজা নাজনিন ওরফে বাঁধন (৩৫), স্বামী মনোয়ার হোসেন ওরফে সিপন (৩১), রায়হান খান (২০), দিপংকর শাহ ওরফে দিপু (৪৪) ও জাকির হোসেন আনন্দকে (২৭) আটক করা হয়। তল্লাশীকালে ৪২০ পিস ইয়াবা (মাদকদ্রব্য), নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, গামছা, খেলনা পিস্তল ও কথিত সাংবাদিকের পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।