সিনেমার খবর নেই নায়িকাদের বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ততা

| আপডেট :  ৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

সিনেমা হলে নাকি ছবির কাটতি নেই। তার মধ্যে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সারা দেশের সিনেমা হল। হাতেগোনা কয়েকজন প্রযোজকের ওপর ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সিনেমার বাজার। খেতাবধারি নায়ক- নায়িকাদের পাল্লায় পরে এরই মধ্যে সিনেমার বাজার থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক প্রযোজক। কিন্তু আমাদের দেশে কথিত নায়িকাদের দেখলে বুঝাই যাবে না যে, সিনেমার বাজারে এত খরা চলছে। দুদিন পর পর একেকজন নায়িকার বিদেশ ভ্রমণের ছবি নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে দর্শকদের মনে।

বিদেশে বিলাসবহুল হোটেলে থাকা, দামি গাড়ি আর মনোরম নানা দৃশ্যের অনেক নায়িকার ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। খবর নিতে গেলে একেকজন নায়িকার মুখে শোনা যায় একেক কথা। কেউ বলেন, পরিবারের সঙ্গে গিয়েছেন। কেউ বলেন, একা ঘুরতে গিয়েছেন। আবার কেউ বলেন সিনেমার কাজে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কথার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগেমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলোর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গুণী পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে নায়িকা নামধারি কিছু মেয়ে আমাদের সিনেমায় কাজ করছেন। তাঁদের কাছে সিনেমার অফার নিয়ে গেলে তাঁরা সময় দিতে চান না। কিন্তু কোনো কাজ ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। মজার বিষয় হচ্ছে, এ নায়িকারাই নানা জায়গায় বলে বেড়ান আমরা তাঁদের নাকি সিনেমায় ডাকি না। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্রটা ভিন্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন নতুনদের মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে অনেক। শুটিংয়ে সময়মতো আসেন না, সেটে এসে বেশির ভাগ সময় ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এই মেয়েগুলো যদি কাজের প্রতি মনোযোগী হতেন আমাদের সিনেমায় এই ক্রান্তিকাল দেখতে হতো না।’

অন্যদিকে নায়িকারা এখন হুট করে ব্যবসায়ী বনে যান! এটি অবাক হওয়ার বিষয় নয়? এত বড় ব্যবসা খোলা চাট্টিখানি কথা? ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে উঠতি নায়িকারা এখন সিনেমা নির্মাণে অর্থলগ্নি করছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নিজের অভিনীত প্রথম ছবি মুক্তির আগেই প্রযোজক বনে যাচ্ছেন! আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার থেকে না এলেও সিনেমায় অর্থলগ্নির নেপথ্যে অনেকের বেলায় রয়েছে ভিন্ন ইতিহাস।

বিশ্বের কমবেশি সব দেশেই নায়িকারা প্রযোজক হয়েছেন বা হচ্ছেন। ইতালির মনিকা বেলুচি বা হলিউডের অ্যাঞ্জেলিনা জোলিরা ছবির প্রযোজক হন ছবির শেয়ার মানি হোল্ডার হিসেবে। আমাদের দেশে ‘প্রযোজক আর লগ্নিকারী স্বত্বা’। এই দুটি জিনিস যে আলাদা তাও বোঝার মতো ক্ষমতা নেই কারও! একজন প্রযোজক কখনো নিজের গাঁটের পয়সা ইনভেস্ট করেন না। কিন্তু প্রযোজক সব অর্থ জোগান দেন, তাঁর ব্র্যান্ড ভ্যালুর খাতিরে। তাঁর প্রভাবেই বা তাঁর প্রতি আস্থা রেখেই লগ্নিকারীরা অর্থ বিনিয়োগ করেন।

অথচ অবাক করার মতো বিষয় হলো, আমাদের দেশে যাঁরা প্রযোজক এবং লগ্নিকারী তাঁরা সবাই নবাগত। তাও আবার তাঁরা উঠতি নায়িকা। যাঁদের ক্যারিয়ারে এখনো কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি! তাঁদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে কোন মোহে আস্থা রাখছেন সেটাই প্রশ্ন সাপেক্ষ। কী তাঁদের অর্থের উৎস? এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। কিন্তু এই বিষয়গুলো এখন নিরেট জলের মতো অনেকের কাছেই স্পষ্ট।

নায়িকারা ঠিক কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন? আমরা কেউ কী তা জানি? আর নিজের অভিনয় করা একটি ছবিতে কত টাকা সম্মানী পেলেন, একজন নায়িকা কদিন পরপর এত বিলাসবহুল দেশে ঘুড়তে যেতে পারেন? এরপর কতটি ছবি বা নাটক করলে ১ কোটি টাকা (আনুমানিক) বাজেটের একটি ছবিতে বা এরকম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যায়? প্রশ্ন ওঠে, আয়ের উৎস কী? এত অর্থ তিনি পেলেন কোথায়? প্রশ্ন যখন জবাবহীন হয়ে পড়ে, দুর্নীতি বা অনৈতিক চর্চা যখন তাঁদের গোড়ায় থাকে, তখন ইন্ডাস্ট্রির হাল যে বেহাল হচ্ছে দিন দিন তা বলাই যায়। সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন