নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত ফারাবীর এ কেমন ‘জা’লিয়াতি’!

| আপডেট :  ১ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

ভুয়া বিসিএস ক্যাডার সেজে বিভিন্ন সময় জালিয়াতির খবর গণমাধ্যমে আসে। এবার প্রকৃত এক ম্যা’জিস্ট্রেটের বি’রুদ্ধে অভিনব জালিয়াতির অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যা’জিস্ট্রেটের (প্রশিক্ষণরত) বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ, কয়েকজন অ’সহায় শিক্ষার্থীকে সহায়তার নামে তিনি ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের কয়েকশ কর্মকর্তার কাছ থেকে গত দুই বছর যাবত অর্থ সংগ্রহ করেছেন। নিজের বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সংগ্রহকৃত এই অর্থ সহায়তার কাজে ব্যবহার না করে কুক্ষিগত করেছেন। যুগান্তর

অ’ভিযুক্তের নাম নিশাত ফারাবী। তিনি ৩৮তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জে’লা প্রশাসনে সংযুক্ত আছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিএসসি কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্তির পর থেকেই নিশাত ফারাবী বিভিন্ন অজুহাতে প্রথমে ‘অ’সহায় ছাত্রকে সহায়তা’র নামে তহবিল সংগ্রহ করেন।

এছাড়া স’রকারি তথ্য ও সেবা নম্বরে (৩৩৩ কোড) দরিদ্র মানুষজন সহায়তা চাচ্ছে উল্লেখ করে তাদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করেন। ৩৮তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের কাছে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক মেসেঞ্জার আইডি (নিশাত ফারাবী অন্তরা) থেকে সম্বলহীন,গরীবদের জন্য ফান্ড কালেকশন করছেন এমন মেসেজ পাঠিয়ে তিনি এই অর্থ সংগ্রহ করেন, যার প্রমাণ যুগান্তরের হাতে রয়েছে। যদিও বর্তমান এই আইডিটি তিনি ডিঅ্যাকটিভেটেড করে রেখেছেন।

নিশাত ফারাবী মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ছাত্রী ছিলেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেকের কাছ থেকেও তিনি একই কায়দায় অর্থ সংগ্রহ করেছেন বলেও অ’ভিযোগ রয়েছে। তিনটি বিকাশ নম্বর 01746320…,01772117…,01629920 ও একটি সোনালি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর 0330101015… ব্যবহার করে নিশাত ফারাবী এই অর্থ নিয়েছেন। যে নম্বরগুলো ব্যবহার করে এই অর্থ নিয়েছেন সেগুলো নিশাত ফারাবীর নামে নিবন্ধনকৃত এবং এখনো তিনি এসব নম্বর ব্যবহার করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, ৩৮তম বিসিএস কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘটনা জানাজানি হলে নিশাত ফারাবী প্রথমে দাবি করেন তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে, তিনি নিজেই প্র’তারণার স্বীকার হয়েছেন। অথচ, তার ওই ফেসবুক আইডিতে (নিশাত ফারাবি অন্তরা) তিনি চলমান বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ছবি আপলোড করেছেন। যে বিকাশ নম্বরে তিনি টাকা নিয়েছেন সেটা জাতীয় তথ্য বাতায়নে নিবন্ধনকৃত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএস ৩৮তম ব্যাচের কয়েকজন সদস্য জানান, সম্প্রতি নিশাত ফারাবীর এই ঘটনা জানাজানি হয়। ব্যাচের অর্থদাতারা নিশাত ফারাবী এই টাকা কোথায় ব্যয় করেছেন সেটা জানতে চান। কিন্তু তিনি বিভিন্ন অসংলগ্ন জবাব দেন। একপর্যায়ে সহানুভূতি আদায় করার জন্য নিশাত ফারাবী দুইজনকে বাবা-মা সাজিয়ে কথা বলান। কিন্তু পরে জানা যায়, যাদের তিনি বাবা-মা সাজিয়ে কথা বলিয়েছেন তারা তার প্রকৃত বাবা নন। তবে সার্বিক ঘটনার জন্য নিশাত ফারাবী ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে অ’ভিযুক্ত নিশাত ফারাবীর বি’রুদ্ধে ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের পক্ষে রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার) এস এম আব্রাহাম লিংকন সিরাজগঞ্জ জে’লা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে অ’ভিযোগ দিয়েছেন। অ’ভিযোগে ভেটেরিনারি সার্জন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারসহ অন্তত ৩০ জন ভু’ক্তভোগী স্বাক্ষর করেছেন।

এ বি’ষয়ে বিসিএস কর্মকর্তা এস এম আব্রাহাম লিংকন যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি অ’ভিযোগ দিয়েছি।তিনি আরও বলেন, অ’ভিযুক্ত নিশাত ফারাবীর প্র’তারণা সত্য হলে এমন কাজ সিভিল সার্ভিসের মর্যাদাই শুধু ন’ষ্ট করবে না, উপরন্তু স’রকারি কর্মকর্তা ও স’রকারের উপর মানুষের বিশ্বাস ও ভালবাসা হ্রাস পাবে। এজন্য তিনি ঘটনার ত’দন্ত সাপেক্ষে অ’ভিযুক্তের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান।

ঘটনার বি’ষয়ে জানতে চাইলে অ’ভিযুক্ত নিশাত ফারাবী যুগান্তরকে বলেন, বি’ষয়টি ডিসি স্যার (ডিসি সিরাজগঞ্জ) হ্যান্ডেল করছেন। আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এটা বলেই তিনি ফোন কে’টে দেন। পরে তাকে আবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কে’টে দেন। এসব অ’ভিযোগের বি’ষয়ে শুক্রবার রাতে জানতে চাওয়া হয় সিরাজগঞ্জ জে’লা প্রশাসক (ডিসি) ড. ফারুক আহাম্ম’দের কাছে। তিনি নিশাত ফারাবীর বি’রুদ্ধে একটি লিখিত অ’ভিযোগ পেয়েছেন বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।

ডিসি ফারুক আহাম্ম’দ বলেন, তিনি (নিশাত ফারাবী) এখন অন্যত্র ট্রেনিংয়ে আছেন। আগামী মাসে (জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জে যোগদানের কথা রয়েছে। যেহেতু তার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ এসেছে। আমরা সেটি ত’দন্ত করব। ত’দন্তে সত্যতা পেলে অবশ্যই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেব। নিশাত ফারাবীর বি’রুদ্ধে উঠা অ’ভিযোগের বি’ষয়ে জনপ্রশাসন ম’ন্ত্রণালয়ের সিনিয়র স’চিব কেএম আলী আজমের কাছে জানতে জাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, বি’ষয়টি এখনো আমি জানি না। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। সূত্রঃ যুগান্তর