ক্যানটিনে ‘ফাও’ খাওয়া থেকে শিক্ষক নিয়োগ, সব তাঁর হাতে

| আপডেট :  ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০৯ অপরাহ্ণ

হলের ক্যানটিনে ‘ফাও’ খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের জো’র করে ক্লাস থেকে মিছিল নেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার, এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের অ’ভিযোগ রয়েছে তাঁর বি’রুদ্ধে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসানের বি’রুদ্ধে এমন অসংখ্য অ’ভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ছাত্রলীগের এই নেতা আলোচনায় এসেছেন বিজয় দিবসে ছাত্রী হলের বিশেষ খাবারের আয়োজনের টাকা নিজের হাতে নিতে না পেরে হল প্রাধ্যক্ষকে গা’লিগা’লাজ করে ও হু’মকি দিয়ে। ওই ঘটনার প্র’তিবাদে পরে প্রাধ্যক্ষসহ চার শিক্ষক পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হু’মকির মুখে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেন। প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে আনসার সদস্য বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাকিবুল হাসানের এমন ‘দাপট’ আরও চার বছর আগে থেকেই শুরু হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন রাকিবুল। এর পর থেকেই হলের ডাইনিংয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে তদবির, জো’র করে ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে মিছিলে নেওয়া, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন পণ্ড করে দিয়ে নিজের পছন্দের ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করার অ’ভিযোগ রয়েছে রাকিবুল হাসান ও তাঁর অনুসারীদের বি’রুদ্ধে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অ’ভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের ডাইনিং পরিচালনায় নিজের পছন্দের লোককে দিয়েছেন। রাকিবুলের অনুসারী কিছু ছাত্র বিনা টাকায় খান বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অ’ভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগেও নিজের আধিপত্য বজায় রাখেন রাকিবুল হাসান। গত অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার নিয়োগ হয়। তখন নিজের পছন্দের এক শিক্ষককে নিয়োগ দিতে রাকিবুল তৎকালীন উপা’চার্য এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানকে চা’প দেন বলে অ’ভিযোগ ওঠে। পরে ওই শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের বি’ষয়ে রাকিবুল হাসান তৎকালীন উপা’চার্যকে কোনো চা’প দিয়েছিলেন কি না, জানা নেই।
গত অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রকৌশলী নিয়োগসংক্রান্ত বি’ষয়ে রাকিবুল হাসানের সঙ্গে দ্ব’ন্দ্ব হয় উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলামের। এর কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের স’মস্যার কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকৌশলী মাহবুবুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে তাঁকে হে’নস্তা করেন। এ বি’ষয়ে ‍মাহবুবুল ইসলাম লিখিত অ’ভিযোগ করলে একটি ত’দন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়।

অ’ভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি প্রাধ্যক্ষ সিরাজাম মুনিরা যে অ’ভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন, সেটি একেবারে মি’থ্যা। উপপ্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুল ইসলামকে হে’নস্তা করার বি’ষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের স’মস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে। এর বেশি আমার কিছু জানা নেই।’ শিক্ষক নিয়োগের জন্য চা’প প্রয়োগের বি’ষয়ে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করা একজন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। আমি তাঁর জন্য সামান্য সুপারিশ করেছি। কোনো চা’প দিইনি।’

প্রসঙ্গত, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোলনচাঁপা হল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে রাকিবুল হাসান ১৪ ডিসেম্বর সব টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরাকে হু’মকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গা’লিগা’লাজ করেন। সুত্রঃ প্রথম আলো