বাংলাদেশের যে অঞ্চলে গরু, মহিষ ও বাছুরের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক

| আপডেট :  ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলে কোনো বাসিন্দা যদি গরু, মহিষ বা বাছুর পালন করতে চান তাহলে তাকে সেইসব পশুর নিবন্ধন করতে হয়।এমনকি এসব পশু বাচ্চা জন্ম দিলে কিংবা পশু বিক্রি করলেও তথ্য হালনাগাদ করতে হয়। এই নিয়ম বাধ্যতামূলক।বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং গোদাগাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিজিবি ক্যাম্প এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গিয়ে পশুর মালিকদের নিবন্ধন ও হালনাগাদের এই কাজটি করতে হয়।

দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ: নিবন্ধনের এই কাজটি সম্পন্ন করতে পশুর মালিকদের একাধিক জায়গায় যেতে হয়। অনেক নথিপত্রের কাজও রয়েছে। এসব কারণে গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত মানুষের জন্য বিশেষ করে যারা দূরবর্তী অঞ্চলে থাকেন তাদের ব্যাপক দুভোর্গ পোহাতে হয়। দুই মাস আগেও নিবন্ধন করতে পশু মালিকদের মাইলের পর মাইল হেঁটে গরু-মহিষ চড়িয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে এরপর বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হতো।

এ নিয়ে গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমার ৬টা গরু। হাট থেকে কয়টা কিনেছি। আমার ভাই কয়টা দিয়ে গেল। আবার একমাস আগে একটা গাভী বাচ্চা দিয়েছে। এজন্য চারবার আসা যাওয়া করছি। একবার এই অফিসে ওই অফিসে। আমাদের তো কাজ আছে। আমার দেশে আমার গরু রাখতে এতো ঝামেলা কেন বুঝিনি।’

কেন এই নিবন্ধন: মূলত সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষের অবৈধ চোরাচালান ঠেকাতে বিশেষ করে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আনা প্রতিরোধে এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাহেবনগর বিওবি ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী আব্বাস। রাজশাহী জেলার সাথে ভারতের ৭৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে কাঁটাতার দেয়া আছে ১১ কিলোমিটার জুড়ে। বাকি অরক্ষিত সীমানা দিয়ে যেন গরু চোরাচালান না হতে পারে, সেজন্য এই বাড়তি সতর্কতা বলে তিনি জানান।

বিওবি ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী আব্বাস বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে এখন গরু, মহিষ আসা নিষেধ। আগে বৈধ করিডোর দিয়েই গরু আসতো। কিন্তু এরমধ্যেও চোরাকারবারি হয়েছে। আবার ভারত সরকারও এ নিয়ে কড়াকড়ি করেছে। ‘আমরাও কড়া অবস্থানে গিয়েছি যেন সীমান্ত এলাকায় কোনো গরু মহিষ চোরাচালান না হয়। সীমান্ত এলাকায় গরু বাছুরের হিসাব থাকায় এখন কেউ তা করতে পারে না।’

তিনি জানান, তার এই চর এলাকার সব মানুষই গরু, মহিষ লালন পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে তার এলাকায় এসব পশু নিবন্ধন হয়ে আসছে। গত তিন বছর ধরে এই নিয়ম বেশ জোরদার করা হয়েছে। পুরো ইউনিয়নে কী পরিমাণ গবাদিপশু আছে, কোন বাড়িতে কয়টা পশু আছে, সেটির পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব বিজিবি ক্যাম্পে থাকে।

ক্যাম্প কর্মকর্তারা নিয়মিত গরু মহিষের হিসাব নিয়ে থাকেন। তবে এ নিয়মের আওতায় ছাগল, ভেড়া বা খাসীর নিবন্ধন করতে হয় না। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে চার হাজার বসতঘর রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে দুটি করে আবার কিছু কিছু বাড়িতে ৬০ থেকে ৭০টি গরুর পালও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই ইউনিয়নে অন্তত ৫০ হাজারের মতো নিবন্ধিত গরু আছে বলে তিনি জানান।

নিবন্ধনের পদ্ধতি কী
এই ইউনিয়নের কেউ বাইরের কোনো হাট থেকে গরু কিনলে সেটা যতো দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। এজন্য পশুর মালিককে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে নতুন কেনা পশুটির বিবরণ, যেমন: রঙ, বয়স, গড়ন, বলদ নাকি গাভী ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। একই সাথে যে হাট থেকে গরু কিনেছেন সেই রিসিট দেখাতে হয়। এরপর বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার রেজিস্ট্রার খাতায় একটি সিরিয়াল নাম্বারে মালিকের নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বারের পাশে তার কেনা গরুর বিবরণ লিখে রাখেন।

এমন একটি রেজিস্ট্রার খাতা পশুর মালিকের কাছেও থাকে। সেখানেও তথ্য তুলে রাখা হয়। মূলত এটাই নিবন্ধনের পদ্ধতি। আবার এসব পশু কোনো বাচ্চা জন্ম দিলে সেটারও জন্ম নিবন্ধন দ্রুততম সময়ের মধ্য করতে হয়। এজন্য মালিককে প্রথমে যেতে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে। সেখান থেকে মেম্বার এবং চেয়ারম্যান একটি প্রত্যয়নপত্রে সই করে দেন। সেই কাগজটি নিয়ে যেতে হয় বিজিবি ক্যাম্পে। সেখানকার নায়েব সুবেদার প্রত্যয়নপত্রটি দেখে দুটি রেজিস্ট্রার খাতায় তথ্য তুলে দেন।

এছাড়া গরু বিক্রি করতে গেলে অন্তত এক দিন আগে ছাড়পত্রের প্রয়োজন। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে গেলে মেম্বার, চেয়ারম্যান পশুর মালিককে একটি ছাড়পত্র দেন। পরে সেখানে বিজিবি সুবেদার সই করলে পশুটি বৈধ উপায়ে বিক্রি করা যায়। আবার কোনো কারণে পশুটি বিক্রি না হলে সেটা ফিরিয়ে আনার পর সেই তথ্যও হালনাগাদ করে নিতে হবে।

এই নিবন্ধন বা হালনাগাদের জন্য বাড়তি কোনো টাকা পয়সা বা পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয় না। কোনো পশুর তথ্য যদি নিবন্ধন বা হালনাগাদ না হয় তাহলে সেটি অবৈধ বলে গণ্য হয় এবং বিজিবি চাইলে অনিবন্ধিত পশুগুলো চালান করে দিতে পারে। তাই কোনো পশু নিবন্ধিত কি না সেটা প্রমান করতে পশুর মালিককে রেজিস্ট্রার খাতা কিংবা ছাড়পত্রের কপি সব সময় সাথে রাখতে হয়। সূত্র : বিবিসি