বিএনপিতে চাপা উল্লাস

| আপডেট :  ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:২৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:২৩ অপরাহ্ণ

বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তারপরও যেন বিএনপির মরা গাঙে জোয়ার এসেছে। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকার ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতবিহ্বল এবং হতাশ হয়ে পড়বেন বলে অনেকে মনে করেছিলেন। অনেকে মনে করেছিলেন যে, বিএনপি আন্দোলন করার শক্তি পাবে না কিংবা বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে আচরণ বিএনপি করেছিল, এবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় তার চেয়েও করুণ হাল দেখা যাবে তাদের।

কিন্তু বাস্তবে এমনটি হচ্ছে না। যদিও সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এখনো দুর্বল। এখনো বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দেওয়ার সক্ষমতা দলটি অর্জন করেনি। তারপরও বিএনপির মধ্যে এক ধরনের আশাবাদ এবং উল্লাস দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকদিনে বিএনপি নেতাদের চাপা উল্লাস আর চাপা থাকেনি। বরং বিএনপি নেতাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত, উৎফুল্ল এবং উল্লসিত।

এর কারণ অবশ্য বিএনপি নিজে নয়, বরং সরকারের বিভিন্ন সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বিএনপির মধ্যে এ ধরনের আনন্দ দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যে নিজেদের ভালো না হোক, অন্যের ক্ষতিতে খুশি হওয়া। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পদক্ষেপ বিএনপির উল্লাসের প্রধান কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাতজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সর্বশেষ, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভিসা বাতিল করেছে। আর এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো সবই সরকারের প্রতিকূলে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে গেছে। তারা এখন এই সরকারকে আর সহযোগিতা করবে না। বাস্তবে যাই হোক না কেন, বিএনপি এই বোধ নিয়ে একটি আশার আলো জ্বালিয়েছে।

তাছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কয়েকজন সদস্য বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে একটি বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টিকেও তারা প্রাথমিক বিজয় বলে মনে করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই চাপকে বিএনপি মনে করছে বাংলাদেশ সরকারের উপর একটি চাপ। এটির ফল বিএনপির পক্ষে যাবে বলেও বিএনপি মনে করছে।

অবশ্য অন্য রাষ্ট্রের পদক্ষেপে বিএনপির খুশি হওয়ার এই প্রবণতা নতুন নয়। এর আগেও যখন নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার ক্ষমতায় এসেছিল, তখন বিএনপির মধ্যে উল্লাস দেখা গিয়েছিল। তারা মিষ্টি বিতরণ পর্যন্ত করেছিল। তারা মনে করেছিল যে, এর ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অবনতি হবে।

এখন এইসব পদক্ষেপের কারণে বিএনপি নেতারা মনে করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর এর ফলে এখন বাংলাদেশের সরকার একটা জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতই মানবাধিকার নিয়ে কথা বলুক না কেন, বাংলাদেশ এখন আর আগের বাংলাদেশ নাই।

বাংলাদেশ এখন মার্কিন সহায়তার উপর নির্ভরশীল নয়। বরং বাংলাদেশের উপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেকাংশেই নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিরাট বাজার, বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, উন্নয়ন ইত্যাদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপেক্ষা করতে পারবেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে যেরকম বাংলাদেশকে নির্দেশ দিত, বাংলাদেশের উপর খবরদারি করতো, সেটি করার বাস্তবতা এখন নেই।

বাংলাদেশ এখন খুব কমই বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আগের মত অর্থনৈতিকভাবে অন্তত সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নয়। এসব বাস্তবতায় বিএনপির উল্লাস কতদিন টিকে, সেটিই হলো দেখার বিষয়। সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার