হিন্দু মু’সলমানের বি’রোধ ভাঙতে হলে হিন্দু মু’সলমানে বেশি বেশি বিয়ে হওয়া দরকার

| আপডেট :  ৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

আমি বিশ্বাস করি জিহাদে কোনও ভালোবাসা নেই, এবং ভালোবাসায় কোনও জিহাদ নেই। কিন্তু কিছু মু’সলিম-বি’রোধী লোক ‘ লাভজিহাদ ‘ বলে একটি শব্দ বানিয়েছে, এর মানে হচ্ছে ভালোবাসার অভিনয় করে মু’সলমানরা হিন্দুদের বিয়ে করছে, এবং হিন্দুদের ধর্মান্তরিত হতে বা’ধ্য করছে। তথকথিত এই লাভজিহাদ বন্ধ করার জন্য আইন জারি করা হচ্ছে ভারতবর্ষে।

আমি এতকাল ভাবতাম এই সেক্যুলার ভারতবর্ষে প্রা’প্তব’য়স্ক যে কোনও মানুষ, সে হিন্দু মু’সলমান খ্রিস্টান বৌদ্ধ নাস্তিক যা-ই হোক, যার স’ঙ্গে খুশি তার স’ঙ্গে প্রেম করবে, যাকে খুশি তাকে বিয়ে করবে — এতে কারও বলার কিছু নেই। এতকাল ভেবেছিলাম জাতপ্রথা যে দেশে আইন করে নি’ষিদ্ধ করা হয়েছে, সে দেশে ব্রাহ্মণ শূদ্রকে বিয়ে করবে, শূদ্র ব্রাহ্মণকে — এতে কারও বলার কিছু নেই।

এখন দেখছি, অনেকের অনেক কিছু বলার আছে, শুধু বলার নয়, রীতিমত বলপ্রয়োগ করার আছে — উঁচু নিচু জাতে বিয়ে হতে দেবে না, হিন্দু মু’সলমানে বিয়ে হতে দেবে না। বিয়ে ভে’ঙে দেওয়া হচ্ছে, প্র’তিবাদ করলে খু’ন পর্যন্ত করে ফেলা হচ্ছে।

শাহরুখ খান, আমীর খান, ইরফান খান, মনসুর আলী খান পতৌদি, সাইফ আলী খান –এঁরা বিখ্যাত লোক। বিখ্যাত লোক যদি মু’সলমান হয়ে হিন্দুকে বিয়ে করে, তাতে কেউ আপত্তি করে না। ইন্দিরা বিয়ে করেছেন ফিরোজকে,রাজীব বিয়ে করেছেন সোনিয়াকে, হিন্দু বিয়ে করেছেন পার্সিকে বা খ্রিস্টানকে, কেউ আপত্তি করেনি। গান্ধির পুত্র বিয়ে করেছিলেন এক মু’সলমান মে’য়েকে, আম্বেদকার বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন,

এসব কারণে কেউ ওঁদের হু’মকি দেয়নি, গ্রামছাড়া করেনি। মুশকিল হয় অখ্যাত লোক নিয়ে। তাদের মধ্যে হিন্দু মু’সলমান ঘটলে, তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ শূদ্র ঘটলে আর রক্ষে নেই।উ’গ্রবা’দীদের টার্গেট দরিদ্র এবং নিরীহ মানুষ। দরিদ্র আর নিরীহকে অ’ত্যাচার করলে যেহেতু তেমন কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না, তাই করে অ’ত্যাচার। এক হিন্দু মে’য়েকে বিয়ে করার জন্য এক মু’সলমান ছেলে ধর্ম পাল্টে হিন্দু হয়েছে। হরিয়ানায় এখন তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে পু’লিশ।

ওদিকে যে হিন্দু মে’য়ে ধর্ম পাল্টে মু’সলমান হতে চাইছে বিয়ের জন্য — তার এবং তার মু’সলমান হবু বরের ও’পর ঝড় নেমে এসেছে। ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করতে হলে আ’দালত থেকে অনুমতি নিতে হবে, এমনই নতুন আইন। প্রা’প্তব’য়স্ক মানুষ ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইলে পারবে না, ধর্মান্তরিত হতে চাইলে তাও পারবে না। গণতন্ত্র হাওয়ায় উড়ছে।

আমার মতে, সবচেয়ে ভালো, ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য কাউকে বা’ধ্য না করা। এমন অনেক আদর্শ জুটি আছে, যারা প’রস্পরকে ভালোবেসে চমৎকার যৌথ জীবন যাপন করেছে, কিন্তু যার যার ধর্ম সে সে পালন করে গেছে। এতে তাদের ভালোবাসায় কোনও চির ধরেনি।

হিন্দু মু’সলমানের বি’রোধ ভাঙতে হলে হিন্দু মু’সলমানে বেশি বেশি বিয়ে হওয়া দরকার। আম্বেদকার জাত প্রথা ভাঙ্গার জন্য বলেছিলেন বিভিন্ন জাতের মধ্যে যত বিয়ে হবে, তত ভাঙবে জাতপ্রথা।