আইজিপি ও র‍্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী

| আপডেট :  ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

‘গু’রুতর মা’নবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অ’ভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যা’কশন ব্যাটালিয়ন, যেটি র‍্যা’ব নামে পরিচিত সেটি এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ও’পর যে নি’ষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার ফলে নি’ষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। এরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলেও বিবেচিত হবেন।

আর র‍্যা’বও প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে যেসব সহযোগিতা পাচ্ছিলো সেগুলো বাতিল হতে পারে। একইসঙ্গে নি’ষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত বেনজির আহমেদ ও র‍্যা’বের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ র‍্যা’বের আরও চারজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিদেশে সম্পদ থাকলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

শুক্রবার মা’র্কিন অর্থ দফতরের ‘ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস’ (ওএফএসি) বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ও’পর নি’ষেধাজ্ঞা আরোপ করছে – যারা মা’নবাধিকার ল’ঙ্ঘন এবং নি’পীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে নি’ষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের স্ব’রা’ষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তারা এখনো মা’র্কিন এই রিপোর্ট দেখেননি এবং দেখার পর তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে বাংলাদেশের পুলিশ ও র‍্যা’বের প্রধান ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে র‍্যা’বের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ছয় কর্মকর্তার ও’পর এমন নি’ষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী
ঢাকায় র‍্যা’ব সদর দপ্তরে এগারটি উইংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে র‍্যা’ব এবং দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির পনেরটি ব্যাটালিয়ান আছে স’শস্ত্র বাহিনৗ ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। এর আগে গু’ম খু’নের মতো ঘটনা ফাঁ’স হওয়ার পর তখনকার সে’না কর্মকর্তাকেও আ’টকের উদাহরণ আছে।

রাজনীতির বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন দীর্ঘদিন যাবৎ র‍্যা’বের বি’রুদ্ধে ধরণের এমন অ’ভিযোগের কথা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে মা’নবাধিকার সংগঠনগুলো বলছিলেন।
“তার চেয়ে বড় কথা হলো গত বছর অক্টোবর মাসে ট্রা’ম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে সিনেটের আটজন সদস্য চিঠি দিয়ে র‍্যা’বের বি’রুদ্ধে কিছু সুস্পষ্ট অ’ভিযোগ করেছিলেন। তারই ভিত্তিতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি”।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব বি’ষয়ে একত্রে কাজ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে অর্থ বা ট্রেজারি বিভাগের বক্তব্য থেকে।

এ নি’ষেধাজ্ঞার ফল কেমন হবে
বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে র‍্যা’ব নামে এলিট ফোর্সটি যাত্রা শুরু করেছিলো ২০০৪ সালে বিএনপি স’রকারের সময়ে। শুরু থেকেই মা’নবাধিকার সংগঠনগুলো এর কাজের ধরণ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে আসছে।
কিন্তু এতদিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন গু’ম খু’ন নিয়ে নানা ধরণের বিবৃতি দিলেও সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রথম কোন ব্যবস্থা নিল। সে কারণেই এর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।

বিশ্লেষক আলী রীয়াজ বলছেন এর একটা হলো প্রশাসনিক। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যা’ব যেসব সহায়তা পাচ্ছিল বা বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলো বা বিদেশ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছিলো নি’ষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো বাতিল হতে পারে।
তার মতে সেটাই স্বাভাবিক, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা এ নি’ষেধাজ্ঞার পর তাদের আর সহযোগিতা করবে না।
সাধারণত এ ধরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু বার্তা দেয়া হয়। সেটা হলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যা’বের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকজন ব্যক্তির বি’রুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ নি’ষেধাজ্ঞা।

“তাদের যদি সম্পদ থাকে যুক্তরাষ্ট্রে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বেনজির আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না। সুনির্দিষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে,” বলছিলেন মি. রীয়াজ।
তবে তিনি মনে করেন যে সবচেয়ে বড় বি’ষয় হলো কূটনৈতিক চা’প। নি’ষেধাজ্ঞার ফলে এখন বাংলাদেশ স’রকারের ও’পর বড় ধরনের কূটনৈতিক চা’প তৈরি হল।

এখন কেন এমন পদক্ষেপ
বাংলাদেশের মা’নবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে গু’ম-খু’ন সহ নানা অ’ভিযোগ তুলে ধরছিলো র‍্যা’বের বি’রুদ্ধে। কক্সবাজারে কাউন্সিলর একরাম হ’’ত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ফাঁ’স হওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল আন্তর্জাতিক মহলে।
তারও আগে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অ’পহরণের পর হ’’ত্যার ঘটনায় র‍্যা’বের ১৬ জনের মৃ’ত্যুদ’ণ্ডের আদেশ দেয় আ’দালত যা এখনো উচ্চ আ’দালতে বিচারাধীন আছে।

যদিও বাংলাদেশে জ’ঙ্গি সংগঠন জেএমবির উত্থান যখন হয়েছিল,তখন শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামসহ মূল জ’ঙ্গিদের গ্রে’ফতারের বি’ষয়কে র‍্যা’বের সাফল্য হিসেবে দেখা হত।
কিন্তু র‍্যা’ব প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরে বিভিন্ন সময় বিচারবহির্ভূত হ’’ত্যাকাণ্ড বা গু’মের অনেক ঘটনা বাহিনীটিকে বিতর্কে ফে’লেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বলছে অন্তত ছয়শ মানুষকে গু’মের অ’ভিযোগ আছে বাংলাদেশে পুলিশের এ এলিট ফোর্সের বি’রুদ্ধে।

শুক্রবার ট্রেজারি বিভাগে রিপোর্টে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে মা’দকবি’রোধী অ’ভিযানের সময় র‍্যা’বের বি’রুদ্ধে গু’রুতর মা’নবাধিকার ল’ঙ্ঘনের ব্যাপক অ’ভিযোগ – আইনের শাসন, মা’নবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে – মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হু’মকির মুখে ফেলছে।”

আলী রীয়াজ বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাইডেন প্রশাসন বারবার মা’নবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলছেন এবং এ মুহূর্তে ওয়াশিংটনে গণতন্ত্র নিয়ে ভার্চুয়াল সম্মেলন হচ্ছে। যেখানে একটা বি’ষয় মা’নবাধিকার।
আবার যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের ও’পর চা’প তৈরি হয়েছিলো সেনেট থেকে। সেখানে আটজন সদস্য চা’প দিয়েছিলেন।

ফলে কংগ্রেসের পর থেকে চা’প ছিল ও আছে। আর দ্বিতীয় নতুন প্রশাসন শুরু থেকেই বলার চেষ্টা করেছিলেন যে মা’নবাধিকার, গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের বি’ষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। তার সঙ্গে সঙ্গতি নিয়েই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দেশ নিয়েই নেয়া হচ্ছে। এখনকার কারণ সম্পর্কে মি. রীয়াজ মনে করেন যে নতুন প্রশাসন আসলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাচ্ছেন যে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সূত্রঃ বিবিসি