গণহারে ফাঁ’সি ও যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে, আসামি অমর্ত্যর বাবা

| আপডেট :  ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১২ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২২) নি’র্মমভাবে পি’টিয়ে হ’’ত্যা করার মা’মলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আবরার ফাহাদ হ’’ত্যা মা’মলায় ২০ আ’সামিকে মৃ’ত্যুদ’ণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কা’রাদ’ণ্ড দিয়েছেন আ’দালত। এর পাশাপাশি যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ’সামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কা’রাদ’ণ্ড দিয়েছেন আ’দালত।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আ’সামিদের উপস্থিতিতে আবরার হ’’ত্যা মা’মলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর মৃ’ত্যুদ’ণ্ডপ্রাপ্ত মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে খুঁজে পুলিশে দিয়েছি। নিজে তাকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে এই রায় আশা করিনি। গণহারে ফাঁ’সি ও যাবজ্জীবন দেওয়া হলো। এতে আমরা হতবাক। এমন রায়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’

অমর্ত্য ইসলামের বাবা আরও বলেন, ‘ঘটনার আকস্মিকতায় এই হ’’ত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কেউ পেশাদার অ’পরাধী না। সবাই মেধাবী শিক্ষার্থী। আমরা উচ্চ আ’দালতে যাব।’ বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আইনবি’ষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহার মা দেবী রানী বলেন, ‘গণমাধ্যমের চা’পে অমিতকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে এবং তাকে জড়ানো হয়েছে।

অ’ভিযোগে বলা হয়েছে, সে নাকি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কথা বলেছে। এজন্য যাবজ্জীবন! আমরা আশা করেছিলাম, অমিত খালাস পাবে।’ অপরদিকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক আ’সামি মুয়াজ আবু হুরায়রার মা বলেন, ‘মুয়াজ আবরারকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। টাকা খরচ করে ও’ষুধ, স্যালাইন কিনেছে। তাকেই যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হলো।’

মৃ’ত্যুদ’ণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আ’সামি হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের ব’হিষ্কৃ’ত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক স’রকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, উপ-সমাজসেবা বি’ষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ছাত্রলীগকর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, হোসেন মোহাম্ম’দ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্ম’দ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।

এ ছাড়া বুয়েট ছাত্রলীগের ব’হিষ্কৃ’ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বি’ষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আইন বি’ষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, ছাত্রলীগকর্মী আকাশ হোসেন এবং মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রাকে যাবজ্জীবন কা’রাদ’ণ্ড দিয়েছেন আ’দালত। এর আগে কা’রাগারে থাকা মা’মলার ২২ আ’সামিকে আ’দালতে হাজির করা হয়।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে পি’টিয়ে হ’’ত্যা করে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আ’সামি করে চকবাজার থানায় একটি হ’’ত্যা মা’মলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা গো’য়েন্দা পুলিশের (ডি’বি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বি’রুদ্ধে আ’দালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এরপর ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মা’মলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন মো. বরকত উল্লাহ। পরে ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সং’সদবি’ষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হ’’ত্যা মা’মলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন।

অভিযোগপত্রে যে ২৫ জনকে আ’সামি করা হয়, তারা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের ব’হিষ্কৃ’ত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক স’রকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বি’ষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বি’ষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বি’ষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, ছাত্রলীগকর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্ম’দ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্ম’দ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।

আ’সামিদের মধ্যে মুহাম্ম’দ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ প’লাতক। বাকি ২২ জন গ্রে’প্তার হয়ে কা’রাগারে আছেন। এ মা’মলায় আ’সামিদের আট জন আ’দালতে স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দি দিয়েছেন।

আবরার হ’’ত্যাকাণ্ডের দুই বছর এক মাস ২২ দিন পর গত ২৮ নভেম্বর ছিল মা’মলার রায় ঘোষণার দিন। কিন্তু বিচারক জানান, রাষ্ট্রপক্ষ ও আ’সামিপক্ষের আইনজীবীরা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, তা বিশ্লেষণ করে রায় প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। রায় প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। পরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আ’দালত আবরার হ’’ত্যা মা’মলার রায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন।