রায় শোনার আগে কেউ দোয়া পড়ছিলেন, কেউ গল্প করছিলেন

| আপডেট :  ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হ’’ত্যা মা’মলার রায় পড়া শুরু করেছেন বিচারক। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২২ আ’সামির উপস্থিতিতে ২৫ আ’সামির বি’রুদ্ধে রায় পড়া শুরু করেছেন। রায় ঘিরে সকালেই আ’দালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন আ’সামিদের স্বজনেরা। এদিন আ’সামিদেরও সকালে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কা’রাগার থেকে আনা হয় আ’দালতে।

পরে তাদের তোলা হয় এজলাসে। আ’দালত কক্ষের ঠিক অপর পাশের ছোট খাচার মতো (আ’দালত কক্ষের ডকেট) দেখতে কাঠগড়ায় হাজির রয়েছেন আবরার হ’’ত্যা মা’মলার ২২ জন আ’সামি। রায় নিয়ে আ’সামিদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা গেছে। বিচারক রায় পড়া শুরু করলে আ’সামিদের কেউ দোয়া পড়ছেন, আবার কেউ একজন আরেক জনের সঙ্গে গল্পগুজব করতে দেখা যায়।বুধবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আ’দালত ভবনের দ্রুত বিচার আ’দালতে-১ এর কক্ষে আবরার হ’’ত্যা মা’মলার রায় ঘোষণা করার আগ মুহূর্তের দৃশ্য এটি। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ২২ আ’সামিকে আ’দালতে আনা হয়।

আ’দালতের ভেতরে অস্থায়ী কা’রাগারে রাখা হয় আ’সামিদের। এসময় দেখা যায়, কেউ পেছনে দেওয়ালে হেলান দিয়ে আছেন। টুপি ও রুমালের ভাঁজের মধ্যে ছোট কাগজে দোয়া লিখে এনেছেন তারা। কেউ ছোট কাগজে দোয়া পড়ছেন, আবার কেউ একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছেন। অনেককে খুব বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা যায়। অনেকেই আবার আ’দালতের বাইরের দৃশ্যটা উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন।

গত ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণার জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। আগের ধার্য দিনে রায় ঘোষণা না করার বি’ষয়ে বিচারক বলেন, রাষ্ট্র ও আ’সামিপক্ষের আইনজীবীরা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, তা বিশ্লেষণ করে রায় প্রস্তুত করা এখনো সম্ভব হয়নি। রায় প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। তাই এ মা’মলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হলো।

গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আ’সামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ওই দিনগত রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার ম’রদেহ উ’দ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ম’র্গে আবরারের ম’রদেহের ম’য়নাত’দন্ত হয়। নি’হত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বা’দী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বি’রুদ্ধে হ’’ত্যা মা’মলা দা’য়ের করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আ’দালতে ২৫ জনকে অ’ভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মা’মলার ত’দন্তকারী কর্মকর্তা ডি’বি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।

অ’ভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও ত’দন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ও এজাহার-বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রে’ফতার করা হয়। গ্রে’ফতারদের মধ্যে আ’দালতে স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দি দিয়েছেন আটজন।

গ্রে’ফতার ২২ জন হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক স’রকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্ম’দ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।

মা’মলার তিন আ’সামি এখনো প’লাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহার-বহির্ভূত আ’সামি।২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আ’সামিদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ গঠন করেন। মা’মলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।