চাঁদাবাজির শীর্ষে ঢাকা সিটি

| আপডেট :  ২ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর মুগদায় বাড়ি করতে গেলেই নগদ টাকা দিতে হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের। আলাদা আলাদা করে তারা এসে প্রথমে দাবি করে বালু, র’ড, সিমেন্ট সাপ্লাই দেয়। এক গ্রুপকে সাপ্লাইয়ের কাজ দিলে আরেক গ্রুপ এসে দাবি করে চাঁ’দা। দুঃখ করে মুগদায় বাড়ি করতে যাওয়া একজন ভু’ক্তভোগী বললেন, যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতার একজনকে দিয়ে তাদের অনুসারীদের বিরত করা হয়েছিল চাঁ’দাবাজি থেকে। এরপর এলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা। তিনি এসে বললেন, যুবলীগ নিস্তার দিলেও আমি দেব না। আমার গ্রুপকে দিতে হবে সব কাজ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, আট-দশ জন মিলে একখন্ড জমি কিনে বাড়ি করছি। আমাদের কাজটুকু আমরা নিজেরা করে যেতে চাই। এখানে কেউই বিত্তশালী নই। কিন্তু ওই নেতার সাফ কথা, কাউকে কাজ করতে দেবেন না। তাকে টাকা না দিলে কাজ বন্ধ। ওই আওয়ামী লীগ নেতার অন্যতম সহযোগী স্থানীয় ক্যাডার সাগর ও মুন্না। সূত্র জানান, মুগদায় প্রতি রাতে চলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার অ’স্ত্রের মহড়া। যেখানে নতুন ভবন কিংবা ব্যবসার কাজ শুরু হয় সেখানেই তার লোকজন। চাহিদামতো বখরা না দিলেই কাজ বন্ধ।

এ অ’ভিযোগ নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে করলে তারাও অ’সহায়ত্বের কথা জানান।জানা গেছে, ঢাকা সিটিতে বাড়ি করা এখন কঠিন কাজ। বিশেষ করে মুগদার নিরীহ লোকজন এখন পুরোই জি’ম্মি। এলাকাবাসী বললেন, এখানে সাধারণত মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের আবাস বেশি। আর এ অবস্থা ঘিরে নজিরবিহীন চাঁ’দাবাজির কেন্দ্র হয়ে উঠছে এলাকাটি। কয়েক বছর আগে একই পরিস্থিতি মো’কাবিলা করেছিলেন রাজধানীর শাহজাহানপুরের অধিবাসীরা।

শুধু মুগদা বা শাহজাহানপুর নয়, পুরো ঢাকা সিটির মিরপুর-মোহাম্ম’দপুর থেকে শুরু করে শনির আখড়া পর্যন্ত সবখানেই এখন বাড়ি করতে ইট-বালু-র’ড কিনতে হয় স’রকারি দলের স্থানীয় নেতাদের থেকে। কখনো সহযোগী সংগঠন, কখনো মূল দল অ’তিষ্ঠ করে তুলছে নগরবাসীকে। বাড়ি করার কঠিন সং’কটে সাধারণ মানুষ। অনেকে জটিলতা এড়াতে দফায় দফায় চাঁ’দা দিয়েই সব সামলে নেন। আবার অনেকে এক কঠিন অবস্থায় এলাকা ছেড়েই চলে যান। বাদ দেন ঘরবাড়ি নির্মাণ। নগর নেতাদের কাছে গেলেও তারা বলে দেন, ‘ওরা তো দল করে, ম্যানেজ করে চলুন।’

জানা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অ’ভিযোগ করলেও অনেক সময় লাভ হয় না। এমন শত শত জি’ডি বিভিন্ন থানায় স্তূপ আকারে পড়ে আছে। র‌্যা’বের কাছেও অ’ভিযোগের শেষ নেই। র‌্যা’ব ও পুলিশের কাছে সবচেয়ে বেশি অ’ভিযোগ চাঁ’দাবাজির। বিশেষ করে প্লট, ফ্ল্যাট দ’খল ও বাড়ি নির্মাণে চাঁ’দা দাবি। পল্টন এলাকার অধিবাসী অ’ভিযোগ করেন, তার দুটি ফ্ল্যাট দ’খল করে রেখেছেন স্থানীয় এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এ অ’ভিযোগও নগরের কাছে দিয়েছেন কিন্তু লাভ হয়নি। অনেকে অ’ভিযোগ করেন, নেতাদের আশকারায় চাঁ’দাবাজি ও দ’খল হয়। ঢাকার বাইরে এমন অ’ভিযোগ থাকলেও এ মুহূর্তে ঢাকা সিটিতেই সবচেয়ে বেশি চাঁ’দাবাজি ঘটছে। পল্টন থানা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধির চাঁ’দাবাজিতে অ’তিষ্ঠ এলাকাবাসী। তার আত্মীয়স্বজনের অ’পকর্মেও অ’তিষ্ঠ তারা।

ভবন নির্মাণে রাজনৈতিক দলের নেতাদের চাঁ’দাবাজি ও জো’র করে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের কাজ নেওয়া প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনীতি মুনাফা অর্জনের একটি উপায়ে পরিণত হয়েছে। এটা দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব। রাজনীতি বা স’রকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের একটি অংশ ক্ষমতার অ’পব্যবহারে করছে। তারা বড় বড় নেতার নামে এসব চাঁ’দাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে। মূলত তারা জনসেবার জন্য নয়, বিনিয়োগ হিসেবে রাজনীতি করে।

রাজনীতিকে পুঁজি করে নানা অনিয়ম-অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ে। যেহেতু অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে তাই দিন দিন এটা বাড়ছে। এ ছাড়া কে কার চেয়ে বেশি দাপট দেখাতে পারে, বেশি চাঁ’দাবাজি করতে পারে তা নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতাও রয়েছে। দুটি উপায়ে এখান থেকে উত্তরণ সম্ভব। প্রথমত, জ’ড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জ’ড়িত সব সংস্থাকে দল-মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের আয়নার সামনে দাঁড় করাতে হবে।

তারা কি জনসেবা করতে চায়- নিজেদের এ প্রশ্ন করতে হবে। দলগুলো তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে পারলে এ অন্যায় বন্ধ হবে।’ ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের নামে অ’ভিযোগ আসে। সুনির্দিষ্ট অ’ভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আবার কিছু অ’ভিযোগের নাম-ঠিকানাও সঠিক পাই না। ফলে ওই এলাকায় লোক পাঠিয়েও অ’ভিযুক্ত ব্যক্তির সন্ধান পাই না।

সুনির্দিষ্ট অ’ভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ইউনিট নেতার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ থাকলে ওয়ার্ড নেতাদের দিয়ে, ওয়ার্ড নেতাদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ এলে থানা নেতাদের দিয়ে এবং থানা নেতাদের বি’রুদ্ধে কোনো অ’ভিযোগ পেলে মহানগরী কার্যনির্বাহী সং’সদ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মহানগরীর কেউ জ’ড়িত হলে কার্যনির্বাহী সং’সদ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।’ এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যে কোনো পর্যায়ের কারও বি’রুদ্ধে চাঁ’দাবাজি, দু’র্নীতির অ’ভিযোগ উঠলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কাউকে চাঁ’দাবাজি করতে দেওয়া হবে না। জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠনে চাঁ’দাবাজ, মতলবাজদের ঠাঁই নেই।’ ঢাকা মহানগরী উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কারও বি’রুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অ’ভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কারও অ’পকর্ম করার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুসংগঠিত ও শৃঙ্খলিত সংগঠন যুবলীগ।’ সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন