ওরা যদি আমার ছেলেকে গু’লি করে মা’রত তাহলে ওর এতো কষ্ট হতো না : আবরারের মা

| আপডেট :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৫৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৫৬ অপরাহ্ণ

আগামীকাল রোববার নি’হত বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র আবরার ফাহাদ হ’’ত্যা মা’মলার রায় ঘোষণা হবে। আগামীকাল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর আ’দালতে এ রায় ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে মা’মলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

দেশে-বিদেশে আলোচিত এই হ’’ত্যার আ’সামিদের সর্বোচ্চ শা’স্তি আশা করেছে তার পরিবার। হ’’ত্যাকারীদের কঠিন শা’স্তি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এভাবে হ’’ত্যা বন্ধ হবে এমনটাই বললেন আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। তিনি বলেন, ওরা যদি আমার ছেলেকে গু’লি করে মা’রতে পারতো, তাহলে ওর এতো ক’ষ্ট হতো না। ওরা খুব ক’ষ্ট দিয়ে মে’রেছে।

শনিবার কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে আবরারের বাসায় গেলে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন রোকেয়া খাতুন। রায় ঘোষণার সময় আ’দালতে উপস্থিত থাকবেন- আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। দুপুরে বাসযোগে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তারা। তবে খু’নিদের দেখতে চান না বলে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন যাননি।

তিনি বলেন, ওদের সর্বোচ্চ শা’স্তি না হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হ’’ত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলে গিয়েছে, কাল আরেক মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। মা’মলায় আরও আ’সামি হওয়া দরকার ছিল বলে উল্লেখ করে আবরারের মা বলেন, আশপাশের রুম থেকে ফাহাদের নি’র্যাতনের খবর জেনেও বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। বি’ষয়টি জানালে ফাহাদের এই নি’র্মম মৃ’ত্যু হয়তো হতো না।

আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন ‘আমরা সর্বোচ্চ শা’স্তির রায় আশা করছি। ভাইয়ের রায় ঘোষণা শুনতে আব্বার সঙ্গে আমিও ঢাকায় যাবো। আমাদের সঙ্গে আমাদের পরিবারের আরও অনেকে যাবে।’ ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পি’টিয়ে হ’’ত্যা করেন।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আ’সামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হ’’ত্যা মা’মলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অ’ভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গো’য়েন্দা শাখার (ডি’বি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। মা’মলার ত’দন্ত চলাকালে অ’ভিযুক্ত ২৫ আ’সামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রে’প্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক স’রকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্ম’দ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু।

পরে হ’’ত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের ব’হিষ্কার করে ছাত্রলীগ। গ্রে’প্তার ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আ’সামি।

মা’মলার আট আ’সামি আ’দালতে স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক স’রকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত। মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামের প’লাতক এক আ’সামি পরে আ’দালতে আত্মসমর্পণ করে জা’মিন আবেদন করেন। আ’দালত জা’মিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কা’রাগারে পাঠান। তাই এখন প’লাতক রয়েছেন আর তিনজন আ’সামি।

তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না। চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মা’মলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন ম’ন্ত্রণালয়।

এরপর ১৮ মার্চ ওই আ’দালতে মা’মলাটি বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। ক’রোনায় প্রথম দফা ছুটি শেষে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আ’সামির বি’রুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আ’দালত। এরপর মা’মলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

গত ১৪ মার্চ এ মা’মলায় কা’রাগারে থাকা ২২ আ’সামি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপর তিন আ’সামি প’লাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেনি। এরপর কয়েকজন আ’সামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ ২৮ নভেম্বর এ মা’মলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হয়।