‘এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়’

| আপডেট :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৭:২৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৭:২৪ অপরাহ্ণ

আবরারকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন আ’সামিরা ভে’ঙে দিয়েছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। মা’মলার ২৫ আ’সামির সর্বোচ্চ শা’স্তি মৃ’ত্যুদ’ণ্ড প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নি’হত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা বরকতুল্লাহ ও মা রোকেয়া বেগম এসব কথা বলেন। রোববার (২৮ নভেম্বর) মা’মলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।

আবরারের বাবা ও মা জাগো নিউজকে বলেন, আবরারকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন আ’সামিরা ভে’ঙে দিয়েছে।আবরাকে হা’রিয়ে আম’রা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। মা’মলার ২৫ আ’সামির সর্বোচ্চ শা’স্তি মৃ’ত্যুদ’ণ্ড প্রত্যাশা করছি।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর প্রশান্ত কুমা’র কর্মকার বলেন, আবরার হ’ত্যা মা’মলায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ২৫ জন আ’সামির বি’রুদ্ধে আম’রা অ’ভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে সব আ’সামির সর্বোচ্চ শা’স্তি মৃ’ত্যুদ’ণ্ড প্রত্যাশা করছি।

আ’সামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু বলেন, আবরার হ’ত্যা মা’মলায় আ’সামিদের রাজনৈতিক পরিচয় ত’দন্তে উদঘাটন হয়নি।ত’দন্তে মূল ছাত্রলীগ কর্মীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা ত’দন্তে ফরমায়েসি হুকুম পালন করেছেন। সব কিছু বিবেচনায় সঠিক বিচার হলে আ’সামিরা খালাস পাবেন।

এর আগে ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আ’সামিপক্ষের যু’ক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কাম’রুজ্জামান। এই আ’দালতে মা’মলা’টির বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

গত ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যু’ক্তিতর্ক উপস্থাপনে প’লাতক তিন আ’সামিসহ ২৫ জনের সর্বোচ্চ শা’স্তি মৃ’ত্যুদ’ণ্ড দাবি করেন।

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বিচারক আ’সামিদের বি’রুদ্ধে আনীত অ’ভিযোগ ও ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পড়ে শোনান। এ সময় বিচারক তাদের প্রশ্ন করেন, আপনারা দো’ষী না নি’র্দোষ? উত্তরে তারা নিজেদের নি’র্দোষ দাবি করে আ’দালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এরপর আ’দালত যু’ক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ৫ অক্টোবর এ মা’মলার বা’দী ও আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ আ’দালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মা’মলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি ত’দন্ত কর্মক’র্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান মা’মলার শেষ সাক্ষী হিসেবে আ’দালতে জবানব’ন্দি দেন। এরপর ৪ মা’র্চ ত’দন্ত কর্মক’র্তার জেরার মধ্য দিয়ে এ মা’মলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ সময় আ’দালত আত্মপক্ষ সম’র্থনের জন্য ১৪ মা’র্চ দিন ধার্য করেন।

ভা’রতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ওইদিন রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার ম’রদেহ উ’দ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ম’র্গে আবরারের ম’রদেহের ময়নাত’দন্ত হয়। নি’হত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।

ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বা’দী হয়ে চকবাজার থা’নায় ১৯ জনের বি’রুদ্ধে হ’ত্যা মা’মলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আ’দালতে ২৫ জনকে অ’ভিযু’ক্ত করে চার্জশিট দেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা ডি’বির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।

অ’ভিযু’ক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও ত’দন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রে’ফতার করা হয়। গ্রে’ফতারদের মধ্যে আ’দালতে স্বী’কারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দিয়েছেন আটজন।

গ্রে’ফতার ২২ জন হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক স’রকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইস’লাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইস’লাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্ম’দ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমু’স সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইস’লাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।

মা’মলার তিন আ’সামি এখনো প’লাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত আ’সামি।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কাম’রুজ্জামান আ’সামিদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ গঠন করেন। মা’মলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।