শত শত তরুণ-তরুণীকে নিয়ে রাতের পার্টি, মানব পাচারের ভ’য়ঙ্কর ফাঁ’দ

| আপডেট :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০১:২৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০১:২৮ পূর্বাহ্ণ

রিফাদুল ইসলাম হৃদয়। ভ’য়ঙ্কর টিকটকার নির্মাতা। শত শত তরুণ-ত’রুণীকে নিয়ে করতেন পার্টির আয়োজন। পার্টি ছিল হৃদয়ের নারী পা’চারের মূল প্ল্যাটফরম। নারীদের ফাঁ’দে ফেলার অ’স্ত্র ছিল হ্যাংআউট ও পুল পার্টি। থাকতো সব ধরনের আয়োজন। পার্টিতে অংশ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়তো উঠতি বয়সী টিকটকাররা। সেই সুযোগে তৈরি করতো বন্ধুত্ব।

এরপর কৌশলে ত’রুণীদের পা’চার করতো। হৃদয়ের এই পার্টিতে অংশ নেয়া অনেক তরুণ-ত’রুণীর কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। অনলাইনে ত’রুণীদের টিকটক মডেল বানানো ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে আকৃষ্ট করা হতো। দেখানো হতো উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন। যৌ’নবৃত্তিতে নিয়োজিত করা হতো এসব ভু’ক্তভোগী ত’রুণীদের। পা’চারের পর তাদের বিভিন্ন নে’শা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে জো’রপূর্বক অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যা’কমেইল করতো। যাতে তারা এই ধরনের কাজে বা’ধ্য হয়।

মানব পা’চারকারীদের ফাঁ’দে পড়ে এই ত’রুণীর মতো শত শত নারী-পুরুষ দুর্ভোগ আর য’ন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এমনকি হারাচ্ছেন জীবনও। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গত দশ মাসে ১৪৫টি মা’মলা হয়েছে। এমন প্র’তারণার শি’কার হয়ে অনেক ভু’ক্তভোগী পরিবার প্রতিকার ও সহযোগিতা চেয়েছেন।

২০২১ সালে ভারতে বাংলাদেশি এই ত’রুণীর যৌ’ন নি’র্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। টিকটকার হৃদয় ত’রুণীকে দল বেঁ’ধে ধ”ণ করে। প্রায় এক বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে ওই ত’রুণীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। পরিবারের কেউ জানতেন না তার সন্ধান। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

ভারতের পুলিশ জানায়, ওই ত’রুণীকে বি’বস্ত্র করে শা’রীরিক নি’র্যাতনের পর দল বেঁ’ধে ধ”ণ করা হয়। বীভৎস কায়দায় নি’র্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে একটি প’তিতালয়ে যৌ’নকর্মী হিসেবে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। যৌ’নকর্মী হিসেবে অবা’ধ্য হওয়া ও লেনদেন নিয়ে বি’রোধের জের ধরেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ওই ত’রুণীকে বি’বস্ত্র করে নি’র্যাতন করা হয়।

এরপর ভিডিওর সূত্র ধরে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ওইদিন রাতে হাতিরঝিল থানায় মা’মলা হয়। নি’র্যাতনের শি’কার ত’রুণীর বাবা বা’দী হয়ে প’র্নোগ্রাফি ও মানব পা’চার আইনে মা’মলাটি করেন। মা’মলায় একজনের নাম উল্লেখসহ অ’জ্ঞাত আরও চারজনকে আ’সামি করা হয়েছিলো।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে হৃদয়ের মা-বাবা নিশ্চিত হয়েছেন- ভ’য়ঙ্কর এ ঘটনার সঙ্গে তাদের ছেলে সম্পৃক্ত। এদিকে মা’মলায় বা’দী বলেন, তার মেয়েকে দুবাইয়ে পাঠানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে যান টিকটকার হৃদয়। এরপর আন্তর্জাতিক পা’চারকারীদের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন। টিকটকার বাবু ও নি’র্যাতনের শি’কার ত’রুণীর বাসা মগবাজারে একই এলাকায়। টিকটকে মডেল বানানোর কথা বলে বিভিন্ন সময় ভারতে নিয়েছে চ’ক্রটি।

শুধু টিকটক হৃদয় নয়, এই রকম অনেক মানব পা’চার চ’ক্রের ফাঁ’দে পড়ে হারাতে হচ্ছে সর্বস্ব। বিভিন্ন দেশে নেয়া ও চাকরির প্রলোভনসহ বিভিন্ন কৌশলে তাদের পা’চার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এমন প্র’তারণার শি’কার অনেক নারী-পুরুষ সমাজে নানাভাবে অ’পমান-অ’পদস্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে পা’চার হওয়া নারীদের নানাভাবে নি’র্যাতনের শি’কার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এসব ভু’ক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই অ’ভিযোগ করছেন। অ’ভিযোগের সূত্রধরে তারা এ ধরনের প্র’তারকদের আইনের আওতায় আনছেন।

১০ই নভেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে মানব পা’চার চ’ক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রে’প্তার করেছে র‌্যা’ব। গ্রে’প্তারকৃতরা হলো- ফয়সাল, সোহেল হোসেন, রুবি, সেলিনা ও কল্পনা। র‌্যা’ব জানিয়েছে, এই চ’ক্রটি বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অ’বৈধভাবে নারী-পুরুষদের পার্শ্ববর্তী দেশে পা’চার করে আসছিল। ২০২১ সালের ২০শে মে এক ত’রুণীকে পা’চার করা হয়। সেই ত’রুণীর খোঁজ পাওয়া যায়নি আজও।

ত’রুণীর মায়ের অ’ভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যা’ব-৩ অনুসন্ধান চা’লিয়ে এই চ’ক্রকে শনাক্ত করে। চ’ক্রটির মূল হোতা ফয়সালের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজে’লার নয়ন মাতবরের কান্দি গ্রামে। র‌্যা’বের জি’জ্ঞাসাবাদে গ্রে’প্তারকৃতরা জানিয়েছেন, ১০ বছর ধরে পা’চার কাজে জ’ড়িত তারা। একজন ত’রুণীকে পা’চার করতে তাদের খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশে থাকা দালালের পেছনে যায় ১৫-২০ হাজার টাকা। ত’রুণীদের পা’চারের পর অ’নৈতিক কাজে বা’ধ্য করা হয়। ফয়সাল ভারতে অ’বৈধ অনুপ্রবেশের কারণে দেশটিতে দু’বার ছয় মাস করে জে’ল খেটেছে। সোহেলও ওই দেশে জে’ল খেটেছে ছয় মাস।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গত দশ মাসে ১৪৫টি মা’মলা দা’য়ের হয়েছে মানব পা’চারকারীদের বি’রুদ্ধে। জানুয়ারিতে ১৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি, মার্চে ১৪টি, এপ্রিলে ২টি, মে মাসে ১৫টি, জুন মাসে ২০টি, জুলাইতে ১৩টি, আগস্ট মাসে ১৭টি, সেপ্টেম্বরে ১৫টি ও অক্টোবর মাসে ২২টি। এবং মানব পা’চার চ’ক্রের ৪০৪ জনকে গ্রে’প্তার করেছে পুলিশ। এ মা’মলায় মোট আ’সামির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৫৯ জন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মানব পা’চারকারীদের বি’রুদ্ধে আমরা সবসময় সতর্ক অবস্থানে আছি। এই চ’ক্রের সদস্যরা বিভিন্ন লোভনীয় চাকরি ও বিদেশে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পা’চার করছে। ভিসা জাল করে যে দেশে যাওয়ার সুযোগ আছে, সে দেশের কথা বলে ভিন্ন রুটে নিয়ে তাদের পা’চার করে দিচ্ছে। বর্তমানে টিকটকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়েও পা’চার করা হচ্ছে। অনেকের বি’রুদ্ধে মা’মলা ও গ্রে’প্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সূত্রঃ মানবজমিন