উঠান বৈঠকে নৌকার প্রার্থীর ‘ওসি পে’টানোর গল্পের’ ভিডিও ভাইরাল

| আপডেট :  ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমাতপুর ইউনিয়নে নির্বাচনীয় প্রচারণায় ‘ওসি পে’টানোর গল্পের’ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন বুধবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রাজগুরু গ্রামে উঠান বৈঠকে এই গল্প করেন। মিলন উপজে’লা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।

উঠান বৈঠকে দেওয়া ‘ওসি পে’টানোর গল্পের’ ৪১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বক্তব্য শুরুর ১০ মিনিট পরই নৌকাপ্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন ‘ওসি পে’টানো গল্প’ শুরু করেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি মুজিব কোর্ট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪/৫টি কেনু (মা’রধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কিভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)। সকল কনস্টেবল আমার পক্ষে ছিল। তারা বলছে, স্যার আগেই বলছিলাম মিলন মেয়া কি জিনস, যে থানায় আইয়া গুতাইবে (মা’রধর)। এহন গুতা খাইছেন? আমি এই মুজিব কোর্ট খুইলা ওসিরে ওই রুমের মধ্যে গুতাইছি।’

উঠান বৈঠকের বক্তব্যে মিলন আরো বলেন, ‘আমি (আক্তারুজ্জামান মিলন) আপনাদের একটি সম্পদ। এর আগের নির্বাচনে আমার ভোট রাশেদ খান মেনন চু’রি করে নিয়ে গেছে। বাবুগঞ্জের ওসি মাহাবুব সে গৌরনদীর জামাই ছিল। এই সুফিয়ান ভাই (পাশের এক সমর্থক) সেদিন বলতেছিল আমার ভোট ঘুরানোর জন্য ওসি নির্দেশ দিয়েছে। সে গত নির্বাচনে সরোয়ার মাহমুদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে আমার ভোট কে’টেছে। সেন্টারে সেন্টারে গু’লি করেছে। এই কথা জানতে পেরে আমি মুজিব কোর্ট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪/৫টি কেনু (মা’রধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কিভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)।’

প্রতিদ্ব’ন্দ্বী প্রার্থীদের অ’ভিযোগ, ভোটারদের মধ্যে আ’তঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নৌকা প্রার্থী ওসিকে মা’রধরের কথা প্রচার করছেন। একই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন লোককে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। এগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের আচরণ বিধি ল’ঙ্ঘন বলে দাবি তাদের।

ওসিকে মা’রধরের ভিডিও বক্তব্য অ’ভিযোগ আকারে স’রকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এসব বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় ভোটারদের মধ্যে আ’তঙ্ক ছড়িয়েছে বলে অ’ভিযোগ করেছেন প্রতিদ্ব’ন্দ্বী প্রার্থী শাহীন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা তার বক্তব্য শুনেছি। তিনি ভোটারদের মাঝে আ’তঙ্ক সৃষ্টি করছেন যেন ভোটাররা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে না যায়। তিনি শুধু ওসিকে মা’রধরের বক্তব্য দিয়েছেন এমন নয় জে’লার অন্যান্য উপজে’লার চেয়ারম্যানবৃন্দ, বহিরাগতদের এনে জড়ো করেছেন। সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ ন’ষ্ট করতেই তার এইসব চেষ্টা।’

অ’ভিযুক্ত মৃধা মু. আক্তারুজ্জামান মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বক্তব্যে আমি পুলিশে চাকরি দেওয়ার বি’ষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম, হতে পারে সেভাবে বুঝাতে পারিনি। গত নির্বাচনের (২০১৬ সাল) সময় বাবুগঞ্জের তৎকালীন ওসি মাহাবুব আমার তিনটি কেন্দ্রে গু’লি করেছে। সেই তিনটি কেন্দ্রে আমি বিজয়ী হতাম। ওসি টাকা খেয়ে আমাকে হা’রিয়ে দিয়ে গেছে। সাবেক ডিআইজি হুমায়ুন ফোন করে আমাকে গালি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ডিসি রায়হান সাহেব আমাকে ফোন করে হু’মকি দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘বক্তব্যে মানুষ অনেক কথাই বলে। বক্তব্য আর বাস্তবতা এক না। থানার ওসিকে মা’রধরের ঘটনা সত্য নয়। বুধবারের সভায় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোট পাওয়ার জন্য এটুকু বলতে হয়েছে।’

বাবুগঞ্জ থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন থানায় ঢুকে ওসিকে মা’রধর করেছেন এমন বক্তব্য আমি এখনো শুনিনি। বি’ষয়টি জেনে আমি জানাবো।

বাবুগঞ্জ উপজে’লা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওসিকে মা’রধর করার বক্তব্য অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি ল’ঙ্ঘন। তাছাড়া কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা প্রচার করা, পেশী শক্তি ব্যবহারের হু’মকি দেওয়াও ল’ঙ্ঘন। প্রচার প্রচারণায় এমন আচরণ করলে ওই প্রার্থীর বি’রুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্রঃ কালের কন্ঠ