গ্রে’প্তার আ’তঙ্কে সদ্য বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর

| আপডেট :  ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৫ অপরাহ্ণ

বুধবার দুপুর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। নম্বরটি দেখে তিনি একটু নড়েচড়ে বসেন। অতঃপর ওপাশ থেকে জানতে চাওয়া, ‘ভাই, কেমন আছেন? আমি তো ভালো নেই। চারিদিকে শুনছি আমি যখন-তখন গ্রে’প্তার হচ্ছি। আপনাদের কোনো নির্দেশ এসেছে কি না? তাহলে ধরেই ফেলা হবে?’ উ’দ্বি’গ্ন কণ্ঠের কথাগুলো গাজীপুরের সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তার কাছে ফোন দিয়ে এভাবেই তার গ্রে’প্তার আ’শঙ্কার কথা জানতে চান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযু’দ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অ’ভিযোগে গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ থেকে তাকে আজীবনের জন্য ব’হিষ্কার করা হয়। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একই সঙ্গে দলে তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। ওই দিন রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাহাঙ্গীর আলমের বি’রুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় স’রকার বিভাগকে চিঠি দেন।

ব’হিষ্কারের পর থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যাননি। তিনি তার বাড়িতেই অবস্থান করেন। তার মেয়র পদ থাকা নিয়ে আগে থেকেই সংশয়ে ছিলেন। তবে বুধবার তার মধ্যে প্রবল গ্রে’প্তার আ’তঙ্ক তৈরি হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে আজ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। স্থানীয় স’রকার ম’ন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জায়গা দ’খলসহ বিভিন্ন অ’ভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বি’রুদ্ধে অনেক অ’ভিযোগ পেয়েছে ম’ন্ত্রণালয়। তাই তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীরের ফোন সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, জাহাঙ্গীর তাকে ফোন করে জানতে চান তিনি গ্রে’প্তার হচ্ছেন কি-না। তবে তিনি জবাব দেননি। ঢাকা’টাইমসকে কর্মকর্তাটি বলেন, ‘আমি তার প্রশ্নের কোনো জবাব দিইনি।

এ সময় তিনি (জাহাঙ্গীর) নিজেই বলেন- ‘শুনছি আমাকে যখন-তখন গ্রে’প্তার করা হবে। আমি এখন কী করতে পারি?’ এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন কর্মকর্তাটি। অন্য প্রশ্নের জবাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কর্মকর্তা ঢাকা’টাইমসকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের বি’রুদ্ধে মা’মলা হয়েছে। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে।’

এদিকে মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরের বি’রুদ্ধে রাজবাড়ীর-১ নম্বর আমলি আ’দালতে মা’মলা করেন বাংলাদেশ মা’নবাধিকার সোসাইটি রাজবাড়ীর পৌর শাখার সভাপতি শশি আক্তার। আ’দালতের বিচারক সুমন হোসেন পিবিআই ফরিদপুরকে ত’দন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।বা’দীপক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাসান জানান, মা’মলায় মেয়র জাহাঙ্গীরের বি’রুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযু’দ্ধ প্রসঙ্গে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় অ’ভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, দল থেকে ব’হিষ্কার হওয়ার পর নিজ বাসায় থেকে সিটি করপোরেশনের জরুরি কাজ সেরেছেন জাহাঙ্গীর। গত সপ্তাহের প্রথম কর্ম’দিবস রবিবার থেকে নগর ভবনে যাননি তিনি। নগর ভবন ও বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তার বাসভবনে নিয়ে যান। তিনি সেসব ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকালে স’চিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় স’রকার মন্ত্রী। বলেন, গাজীপুরের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজকের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সেখানে একজনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জমি দ’খলসহ তার বি’রুদ্ধে অনেক অ’ভিযোগ ম’ন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। অ’ভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হবে। এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তিনজন প্যানেল মেয়র নিয়োগের কথা জানান স্থানীয় স’রকার মন্ত্রী। তারা হলেন আসাদুর রহমান কিরণ, আব্দুল আলিম মোল্লা ও আয়েশা আক্তার।

যে কথোপকথনের ভিডিও ভাইরাল হয়
ঘরোয়া আয়োজনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে গো’পনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জে’লার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বি’তর্কি’ত মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর। ভাইরাল হওয়া চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযু’দ্ধ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আ’পত্তিকর মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর। তাতে হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্যের কথাও উঠে আসে। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষো’ভে ফে’টে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ব’হিষ্কারের দাবি জানান।

ওই ঘটনায় গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বি’রোধীদের সং’ঘর্ষের ঘটনাও ঘটে কয়েক দফা। ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাবও দেন। ভিডিওর জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের সম্পর্ক কার্যত ছিন্ন হয়ে যায়। গাজীপুরে স’রকারি নানা কার্যক্রমে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকারান্তরে এড়িয়ে চলার ঘটনাও ঘটতে থাকে। তার উপযুক্ত শা’স্তির দাবিতে অনড় থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

কে এই জাহাঙ্গীর
জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জ’ড়িত ছিলেন। পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পান। এরপর গাজীপুরের সদর উপজে’লার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হন। এরপর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর আলমের বি’রুদ্ধে নগরবাসীর নানা অ’ভিযোগ রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের নামে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি এবং স্থাপনা ভাঙা হয়, কিন্তু এসব স্থাপনার ক্ষ’তিপূরণ এবং জমির মূল্য পরিশোধ করেননি বলে অ’ভিযোগ তার বি’রুদ্ধে। এতে ক্ষ’তিগ্রস্ত হন নগরের হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে তার ও’পর নগরবাসীর ক্ষো’ভ রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রঃ ঢাকা টাইমস