বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোমিনের মৃ’ত্যুদণ্ড

| আপডেট :  ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২:১১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২:১১ অপরাহ্ণ

একাত্তরে মুক্তিযু’দ্ধকালীন সংঘটিত হ’’ত্যা-গণহ’’ত্যাসহ মানবতাবি’রোধী অ’পরাধের মা’মলায় বগুড়া-৩ আসনের বিএনপির সাবেক সং’সদ সদস্য (এমপি) প’লাতক আবদুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকার মৃ’ত্যুদ’ণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অ’পরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২৪ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অ’পরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।

এর আগে, গত সোমবার (২২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অ’পরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ঠিক করে আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। তারও আগে গত ৩১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এ মা’মলায় যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন বলে মা’মলাটি সিএভি (অপেক্ষমাণ) রেখে আদেশ দেন। ওই দিন আ’দালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সুলতান মাহমুদ সিমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আ’সামি প’লাতক থাকায় তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োজিত আইনজীবী আবুল হাসান।

আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা ওরফে খোকা রাজাকারের বি’রুদ্ধে মুক্তিযু’দ্ধকালে হ’’ত্যা, লু’টপাট ও অ’গ্নিসংযোগের অ’ভিযোগে ২০১১ সালে আ’দালতে মা’মলা করেন আদম’দীঘির কায়েতপাড়া গ্রামের মুক্তিযো’দ্ধা সুবিদ আলী। আ’দালত মা’মলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করতে আদম’দীঘি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পরে ওই মা’মলা আন্তর্জাতিক অ’পরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।

মোমিনের বি’রুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে থেকে ২০১৮ সালের ৩ মে পর্যন্ত মা’মলার ত’দন্ত করা হয়। তার বি’রুদ্ধে ৭১ সালের বিভিন্ন স্থানে ১৯ জনকে হ’’ত্যাসহ লুণ্ঠন ও অ’গ্নিসংযোগসহ তিনটি অ’ভিযোগ আনা হয়েছে। পরে এসব অ’ভিযোগের ভিত্তিতে ফরমাল চার্জ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অ’পরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন জাগো নিউজকে বলেছিলেন, আ’সামির বি’রুদ্ধে তিনটি অ’ভিযোগ ছিল। প্রথমটিতে ১০ জনকে হ’’ত্যার অ’ভিযোগ আনা হয়। দ্বিতীয়টিতে পাঁচজনকে হ’’ত্যা, যার মধ্যে দুজনকে ঘটনাস্থলেই হ’’ত্যা, বাকি তিনজনকে ধরে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নি’র্যাতন করে হ’’ত্যা। আর তৃতীয় অ’ভিযোগে চারজন মুক্তিযো’দ্ধাকে হ’’ত্যার অ’ভিযোগ রয়েছে তার বি’রুদ্ধে।

মোমিনের বি’রুদ্ধে যত অ’ভিযোগ
প্রথম অ’ভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল দুপুরের দিকে আ’সামি আবদুল মোমিন তালুকদারসহ পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে ২০ জন পাকিস্তানি সে’না নিয়ে বগুড়ার আদম’দিঘী থানার কলসা বাজার, রথবাড়ি ও তিয়রপাড়ার মুক্তিযো’দ্ধা এবং হিন্দু সম্প্রদা’য়ের লোকজনকে হ’’ত্যা করতে অপারেশন চা’লায়। ওইদিন আ’সামি নিজে তার হাতে থাকা আ’গ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কলসা গ্রামের ইসলাম উদ্দিন প্রামাণিকসহ হিন্দু-মু’সলিম মিলিয়ে ১০ জনকে গু’লি করে হ’’ত্যা করেন।

দ্বিতীয় অ’ভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবরে অ’ভিযান চা’লিয়ে একই থানার কাশিমালা গ্রামে হা’মলা চা’লিয়ে ১৬ থেকে ১৭টি বাড়ি লুণ্ঠন করে এবং সেদিন পাঁচজনকে গু’লি করে হ’’ত্যা করেন।

তৃতীয় অ’ভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর রাতে আবদুল মোমিন তালুকদার রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী নিয়ে আদম’দিঘী থানার তালশন গ্রামের অ’ভিযান চা’লিয়ে চারজনকে হ’’ত্যা করেন।

২০১৮ সালের ৩ মে আন্তর্জাতিক অ’পরাধ ট্রাইব্যুনালের ত’দন্ত সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযু’দ্ধের সময় আ’সামি আবদুল মোমিন মু’সলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পাকিস্তান দ’খলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য স’শস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। আদম’দীঘি থানার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে সহযোগিতা করেন অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তান বাহিনীকে। তার বি’রুদ্ধে মোট ৭১৪ পৃষ্ঠার ত’দন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পরে আদম’দীঘি উপজে’লা বিএনপির সভাপতি হন। এরপর বগুড়া জে’লা বিএনপির সহ-সভাপতি ও রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন। চারদলীয় জোট স’রকারের আমলে বন ও পরিবেশ ম’ন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন আবদুল মোমিন। তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালে দুইবার সং’সদ সদস্য নির্বাচিত হন।