গান গেয়ে টাকা তুলে মাকে বাঁচিয়ে তোলা সেই শারমিনই আজ মৃত্যুশয্যায়

| আপডেট :  ২২ নভেম্বর ২০২১, ০৬:৪০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ নভেম্বর ২০২১, ০৬:৪০ অপরাহ্ণ

প্রায় অচেতন। পাশে বসে বেশ কিছুক্ষণ। সাড়া নেই। মা’থায় হাত বুলিয়ে যখন ফিরছিলাম, তখই আধো আধো কণ্ঠে আকুতি ‘আঙ্কেল আমি বাঁচবো তো! আমাকে বাাঁচান।’ এতটুকুই কথা। ততক্ষণে ওর চোখ ছলছল। দু’ফোটা জল গড়িয়েও পড়লো। তা দেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে বাকরুদ্ধ সবাই।

সবে আলোর দেশে পা রেখেছে। সুরের আলোয় মন রাঙাচ্ছে ভক্তমনে। সুরে সুরে এত আলো কে বিছিয়েছে আগে! তার সুরে মগ্ন হয়ে প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন, ‘ফের জন্ম নিলে তোর গর্বেই জন্ম নেবো। আজ থেকে তুই আমা’র মা।’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিন বাকরুদ্ধ হয়েছিলেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ এবং রেজওয়ানা চৌধুরী ব’ন্যাও।

প্রায় ষাট হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ২০১৬ সালে আড়ং ডেইরি-চ্যানেল আই বাংলার গানে প্রথম হন শারমিন। অথচ, আজ আঁধারে যেন ডু-বু ডু-বু বাউল দুনিয়ার এই নয়া পাখি। শারমিন আক্তার। শৈশবের শুরুতেই ভাঙা একটি থালা হাতে নিয়ে গেয়েছিলেন, ‘যে আমা’রে ব্যথা দিয়েছে, তারে দোষী না আমি, কপালে আছে।’

সেই যে ব্যথা! তা আরও গাঢ় হলো জীবনের এই ফুটন্ত বেলাতেই। ছোট্ট শারমিন স্কুল, হাটবাজার, রাস্তাঘাটে গান গেয়ে গেয়ে টাকা তুলে অ’সুস্থ মাকে বাঁচিয়েছিল। আজ শারমিনের মা মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইছেন মে’য়েকে বাঁ’চাতে। সুখসাগরে ভেসেও শারমিনের দুঃখসাগরের দুঃখগাঁথা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে এই সময়ে।

জীবন-ম’রণের সন্ধিক্ষণে তরুণ এই বাউলশিল্পী। গুরুতর অ’সুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে (ঢামেক) ভর্তি রয়েছেন শারমিন। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। শারমিনের র’ক্তের সেল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। র’ক্তের উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে ক্রমশই। ‘গ্রেভস ডিজিজ’ (থাইরয়েড সংশ্লিষ্ট জটিল রোগ) হয়েছে তার।

ঢাকা মেডিকেলের আগে শরীরে জ্বর নিয়ে ভর্তি হন হলিফ্যামিলি হাসপাতা’লে। সেখানে ডেঙ্গু টেস্ট করালে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। জ্বর না কমায় ঢামেকে ভর্তি করানোর পরাম’র্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দিন যাচ্ছে শারমিনের অবস্থা আরও খা’রাপ হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘শারমিনের র’ক্তের সেল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওর শরীরে নতুন করে র’ক্ত উৎপাদন হচ্ছে না বলেই অবস্থা দিনে দিনে খা’রাপের দিকে যাচ্ছে।’

রোববার ঢামেকের ক্যান্সার ইউনিটে স্থা’নান্তর করা হয়েছে শারমিনকে। সেখানে নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। শারমিনের মা রহিমা জানান, ‘সারাজীবন মানুষের বাড়িতে কাজ করেছি। দশ বছর আগে আমি গুরুতর অ’সুস্থ হয়ে হলিফ্যামিলিতে ভর্তি হই। আট-দশ বছরের মে’য়ে রাস্তা-ঘাটে গান গেয়ে টাকা তুলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আজ আমা’র চোখের সামনে মে’য়েকে শেষ হতে দেখছি। কিছুই করতে পারছি না। চ্যানেল আইয়ে গানের প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার পর আমাদের ভাগ্যে পরিবর্তন আসে। সুখের নাগাল পাই। আর এই অল্প সময়েই দিশেহারা হবো কে জানতো! মে’য়ের ক’ষ্ট আমি সইতে পারছি না। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।’

শারমিনের বাবা হু’মায়ুনি কবির বলেন, ‘চিকিৎসকরা দেশের বাইরে নেওয়ার পরাম’র্শও দিচ্ছেন। অবস্থার পরিবর্তন না হলে আজকালের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিদেশ যাওয়ার। কোনো উপায় দেখছি না। সবার কাছে দোয়া চাইছি। একই সঙ্গে অর্থ সাহায্যও প্রার্থনা করছি।’

ময়মনসিংয়ের নান্দাইলে শারমিনের দাদা বাড়ি। দাদা-বাবা বাউলশিল্পী। বাবা হমায়ুন গান লেখেন, সুরও করেন। বাবার হাত ধরেই শারমিনের গানের জগতে আসা। ২০১৬ সালে আড়ং ডেইরি-চ্যানেল আই ‘বাংলার গান’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর থেকে বাউল জগতে বিশেষ পরিচিতি পেতে থাকেন এই শিল্পী। ২০ বছরে পা রাখা শারমিন রাজধানীর বাড্ডার একটি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন।

তার চিকিৎসার্থে সাহায্য পাঠানো যাবে—
বিকাশ নম্বর: 01733877958
ব্যাংক হিসাব নম্বর: 2101034166001
Rahima, City Bank, Gulshan Branch