দুই হাজার নাটকে অভিনয় করা শিরিন আলমের গল্প

| আপডেট :  ১ নভেম্বর ২০২১, ০৬:৪৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ নভেম্বর ২০২১, ০৬:৪৭ অপরাহ্ণ

‘আসলে উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম কী বলব- আমি তো শুটিংয়ে যাই, কাজ করে চলে আসি। আমার কাজটুকুই করি। আমার জায়গা থেকে এ সময়ের উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম তো বলতে পারছি না…’ প্রশ্নের জবাবে কিছুটা শ্লেষ মেশানো ছিল তা বোঝার ভুল হতে পারে না। কারণ আরেক প্রশ্নের জবাবে সেটা নিশ্চিত হওয়া গেল।

পূর্বের কাজে শ্রদ্ধা, সম্মান ছিল। আর এখন সবাই যেন মেশিন, কাজ করল, চলে গেল- ভালোবাসার ঘাটতি, সম্মানের ঘাটতি। আমরা সিনিয়র আর্টিস্ট, আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রয়েছি- মূল আর্টিস্ট এলো, সে নিজের মতো শট দিয়ে চলে গেল। দেরি হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা আমাদের। বয়স হয়ে গেছে, এখন আমাদের সম্মান ও সম্মানী দুটোরই ঘাটতি রয়েছে- টানা বলে গেলেন অভিনেত্রী শিরিন আলম।

হাড়কিপ্টা নাটকের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত শিরিন আলম। ২১ বছরের নাটকের ক্যারিয়ারে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সেই অর্থে স্বীকৃতি পাননি। অবশ্য এ নিয়ে আক্ষেপও নেই। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে বললেন, ‘টেলিভিশন মিডিয়ায় আমার ক্যারিয়ার ২১ বছরের। যদিও আমার প্রথম নাটক ১৯৮৫ সালে, কিন্তু আমি পর্দায় নিয়মিত হই ২০০০ সাল থেকে। তার আগের দশ বছর টানা মঞ্চে কাজ করেছি। এখন আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে শুধু আমরা নিজের কাজটাই করে যাব।’

কেন এই মাধ্যমে এলেন, কিভাবে এলেন শিরিন। সে গল্পটা বলতে গিয়ে যেন স্মৃতিকাতর হলেন। শিরিনের টেলিভিশন পর্দায় আসাটা একটা মজার ঘটনা বটে। বললেন, আসলে বিটিভিতে আমাদের যাতায়াত অনেক ছোটবেলা থেকেই। পুরান ঢাকার মিলব্যারাক থেকে মামা, বাবা। বিভিন্ন জনের সঙ্গেই বিটিভিতে আসতেন। ‘হীরামন’ নামের একটা প্রগ্রাম হতো, সেটিতে আমরা কাজ করতাম। একসময় বিয়ে হয়ে গেল, কিন্তু বিটিভির সঙ্গে যোগাযোগটা থেকেই গেল। আমি মাঝেমধ্যে এমনিতেই যাই।

একটু থেকে গল্পের মূল অংশে চলে এলেন শিরিন। বললেন, ‘একদিন মামার সঙ্গে বিটিভিতে গিয়েছি। তখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বিয়ে হয় ১৯৮২ সালে। আর এটা মনে হয় ১৯৮৫ সালের ঘটনা। যা হোক, বসে রয়েছি। শাড়ি পরে গিয়েছিলাম। একটা ছেলে এসে বলল- অভিনয় করবেন? একটা ছোট চরিত্রে কাজ করতে হবে। ছেলেটা জানাল, সে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সহকারী পরিচালক। তারিক আনামের স্ত্রী হিসেবে এক পার্টিতে যাওয়ার একটি দৃশ্য রয়েছে, সংলাপ নেই। এর জন্য একজন মেয়ে লাগবে লম্বা। মামা শুনে আমাকে ঠেলে পাঠালেন। আমি ভয়ে, কাঁপতে কাঁপতে গেলাম। প্রথম নাটকে অভিনয় করলাম। নাটকের নাম তৃতীয় পুরুষ।’

তার পরেও নাটকে নিয়মিত হননি। তবে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ দেখে স্বামী এস এম শাহ আলম পদধ্বনি থিয়েটারে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। টানা সেখানে ‘৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কাজ করলেন। তারপর এলেন আবার টেলিভিশনে, তারপর চলচ্চিত্রে। শিরিন বলেন, ‘২০০০ সালে আবার প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করলাম। সেই আব্দুল্লাহ আল মামুনের সহকারী মোমিনুল রশিদ মিল্লাত আমাকে জিজ্ঞেস করল নাটকে অভিনয় করব কি না। পরে তার পরিচালনায় নাটকে অভিনয় করলাম। সেই শুরু। এরপর টানা ২১ বছর নাটকে অভিনয় করেছি। সঠিক হিসাব দিতে পারব না, তবে দুই হাজার পেরিয়ে গেছে। চলচ্চিত্র খুব বেশি করা হয়নি। এখন পর্যন্ত ১৫টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি।’

ফের প্রথম প্রশ্নের বাকি অংশ। মানে শিরিন আলম অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম- এ প্রশ্নের জবাব দিতে শিরিন আলম দ্বিধাবোধ করেন না। অবশ্য উল্লেখযোগ্য বলতে তিনি বোঝেন, যেসব নাটকে কাজ করে তৃপ্তি পেয়েছেন। বললেন, সালাউদ্দিন লাভলুর অনেকগুলো নাটক করেছেন। এর মধ্যে হাড়কিপ্টা, গরুচোর, ঘরকুটুম, শিলবাড়ি উল্লেখযোগ্য, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পারাপার, কবুতর, তালপাতার সেপাই, নিখোঁজ সংবাদ; জাহিদ হাসানের লাল নীল বেগুনি- এসব নাটক মনে দাগ কেটে গেছে কিংবা মনে অজ্ঞাত কারণে থেকে গেছে।’

এখন চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক, একক- সব নাটকেই কাজ করে যাচ্ছেন শিরিন। এই সময়ের অভিনয়শিল্পী, পরিচালক কিংবা তরুণ প্রজন্মের যারাই এই মাধ্যমে আসছেন, তাদের প্রতি শিরিন আলম বা আঞ্জুমান আরা শিল্পীর একটাই অনুরোধ- কাজটাকে ও কাজের মানুষটাগুলোর প্রতি সম্মান রাখতে হবে।

শিরিন ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জননী। বড় ছেলে শাহরিয়ার আলম একজন ক্যামেরা পারসন। মেজো ছেলে শাহনেওয়াজ আলম সৌদি আরবে পাঁচ বছর শেফের কাজ করেছেন। দেশে ফিরে একই কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। ছোট ছেলে সাকিন আলম প্রান্ত এইচএসসি দেবে। সূত্রঃ কালের কন্ঠ