আবারো ‘নির্বাসনে’ তসলিমা

| আপডেট :  ১ নভেম্বর ২০২১, ০২:০০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ নভেম্বর ২০২১, ০২:০০ অপরাহ্ণ

এবার ফেসবুক থেকে নির্বাসিত Taslima Nasreen। সাতদিনের জন্য জনপ্রিয় এই লেখিকার প্রোফাইলকে নিষিদ্ধ বলে দাগিয়ে দিয়েছে বহুল ব্যবহৃত মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক। লেখিকা নিজেই টুইটারে এই খবর জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি টুইটেও এও জানিয়েছেন তাঁর কোন পোস্টে আপত্তি তুলে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সকালে টুইট করে সাতদিনের জন্য ফেসবুক থেকে নির্বাসিত হওয়ার খবরটি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘সত্যি’ কথা বলায় সাতদিনের জন্য আমাকে নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে হিংসা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্টের কারণেই সংস্থা তাঁকে ব্যান করেছে Mark Zuckerberg-এর সংস্থা।

লেখিকা পোস্টে বাংলাদেশে অশান্তির জন্য দায়ী করেছিলেন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের। হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর এবং সেই সংক্রান্ত সমস্ত ঘটনার জন্যই আঙুল তুলেছিলেন ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের দিকে। তাতেই আপত্তি জানিয়েছে ফেসবুক।

তাদের সদ্য সংশোধিত গাইডলাইন বিরোধী হওয়াতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। মার্ক জুকেরবার্গের সংস্থা লেখিকার যে পোস্টটির কারণে সাতদিনের জন্য তাঁর প্রোফাইলটি নিষিদ্ধ করেছে, সেই কমেন্টটি তসলিমা টুইটারেও এদিন পোস্ট করেছেন।

বলিষ্ঠ মতামত প্রকাশ করার জন্যই বরাবর পরিচিত লেখিকা। ১৯৯৪ সালে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত তিনি। তবু তাঁর কণ্ঠরোধ করা যায়নি। টুইটারের মতো ফেসবুকেও সরব থাকেন তসলিমা। লেখিকা শানিত, সাবলীল মতামতেই এবার আপত্তি জানিয়েছে জনপ্রিয় মার্কিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৫ সালেও জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা Facebook লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে ব্যান করেছিল। ফেসবুকের নয়া পলিসি অনুয়ায়ী, ‘hate speech’ যে কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে সরাসরি আক্রমণ হিসেবে ধরা হয়। ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক বিষয়ে মন্তব্য খুবই স্পর্শকাতর তাই সেই সব পোস্টও ফেসবুকের নিয়ম বিরুদ্ধ।

লেখিকার টুইট বা ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক নতুুন কিছু নয়। এর আগেও তাঁর একাধিক পোস্ট নিয়ে শোরগোল পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কখনও নেটিজেনদের কটাক্ষে বিদ্ধ হয়েছেন তো কখনও আবার তাঁর বলিষ্ঠ স্টেটমেন্ট-এ কুর্ণিশ জানিয়েছে নেট দুনিয়া। সম্প্রতি টুইট বার্তায় তসলিমা লিখেছিলেন, ‘বিয়ে না করে সন্তানের জন্ম দেওয়াটা কোনও বিপ্লব নয়। তবে ভিড়ে পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে সন্তানের জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বিপ্লব। যৌনতায় সায় দেওয়াটাই সবসময় যৌন স্বাধীনতা নয়। যৌনতায় না বলাটাও যৌন স্বাধীনতা’। বলাবাহুল্য, লেখিকার সাম্প্রতিকতম টুইট ঝড় তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

লায়লা নায়ার নামের এক নেটিজেন লেখেন, আপনার ভাবনাচিন্তা সত্যিই খুব ভালো লাগে। আপনার বিশ্বাস এবং জেদ আমাকে উৎসাহ দেয়। উদ্যম যোগায়। এরকমই থাকবেন। কখনও কোনও বাধা মানবেন না। সবসময় দৃঢ় এবং বলিষ্ঠ থাকুন। আপনার অনুগামীরাও আপনার মতোই স্বাধীনভাবে ভাবতে জানেন। আর যাঁরা ট্রোল করছেন, তাঁদের কথায় কান দেবেন না। অকারণে শক্তিক্ষয় করে কোনও লাভ নেই। লায়লার ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ধন্যবাদ লিখতে ভোলেননি লেখিকা।

ওই প্রসঙ্গেই অপর এক নেটিজেন লেখেন, আপনার প্রতিটি শব্দের সঙ্গে একমত। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। অনেকে আবার তসলিমার চিন্তাধারা নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যও করেছেন। তবে সেদিকে কোনও দিনই কান দেননা লেখিকা। নারী স্বাধীনতা এবং তাঁদের সমানাধিকার নিয়ে বরাবরই সরব তসলিমা। তাঁর মতে, ‘নারীরা যতদিন যৌন স্বাধীনতা না পাবে, ততদিন তাঁরা পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করবে না’। ২০১৯ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তসলিমা বলেছিলেন, ‘কোনও ধর্মই নারীদের পুরুষদের সমানাধিকার দেয় না’। এই নারী-পুরুষের সম্পর্ক এবং সামাজিক অবস্থান নিয়ে একাধিক থিয়োরি রয়েছে লেখিকার। সূত্রঃ এই সময়